ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ভোগ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রতি আবার খবরে এসেছে অস্বাভাবিক যানজটের কারণে। ফেনীতে উড়ালসড়ক নির্মাণের জন্য মহাসড়কে রেলক্রসিং অংশের আধা কিলোমিটার পথ একমুখী করায় পরিস্থিতি শোচনীয় আকার ধারণ করে। সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬৪ কিলোমিটার, ফেনীর সমস্যা সেই পথে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের রেকর্ড করেছে। সপ্তাহখানেকেরও বেশি সময় ধরে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রইল। যানজট স্থানান্তর হয়েছে মাত্র। যেখানে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে ২২-২৪ ঘণ্টাও লেগেছে।

চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আধা কিলোমিটারের মতো সড়ক একমুখী করলে পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা আগেই কেন বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, তা সত্যিই বিস্ময়কর। দরকার ছিল এমন কিছু করার আগে বিকল্প পথ তৈরি করা এবং যানবাহনগুলো যাতে সেই পথ ধরে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত কর। এ ধরনের কিছু করা ছাড়া কীভাবে মহাসড়কে নির্মাণকাজ চলতে পারে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের শোচনীয় দশা কিন্তু নতুন কিছু নয়। নানা করণে নিয়মিতই দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত এই মহাসড়ক। দুই লেন থেকে চার লেন হয়েছে কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সময় দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এই মহাসড়ক সামগ্রিকভাবে একটি বিশৃঙ্খল ও যানজটে আক্রান্ত মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। এত অর্থ ও সময় ব্যয় করে তৈরি করা চার লেনের কোনো
সুফল মিলছে না। যথাযথ ও সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেই পরিস্থিতি আজ এখানে এসে ঠেকেছে।

মহাসড়কটি চার লেন হলেও তিনটি বড় সেতু এখনো দুই লেন রয়ে গেছে। কাচপুর সেতু এবং মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুর টোল প্লাজায় এখন যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। চার লেন প্রকল্পের সঙ্গে শুরুতেই সেতুগুলোকে যুক্ত করা হলে এই পরিস্থিতি এমন হতো না। এখন প্রতিটিতে দ্বিতীয় সেতু তৈরি হচ্ছে, সেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্যবস্থাপনার ত্রুটিও এক বড় সমস্যা। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বাজার, উল্টো পথে যানবাহন চলাচল—এসব কিছুই সামাল দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ। হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে, তারা যদি সুশৃঙ্খল যান চলাচল ও চালকদের আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে না পারে, তাহলে পয়সা খরচ করে এই বাহিনী পোষার অর্থ কী? একটি মহাসড়কের যে চরিত্র থাকা উচিত, তার কোনো কিছুই নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

কার্যকর সড়ক যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন সামগ্রিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় চূড়ান্ত মাত্রার ঘাটতির প্রতিফলন হচ্ছে আজকের কার্যত অচল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। সুশাসন ও জবাবদিহির সমস্যা পরিস্থিতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই দুটির অভাবের কারণেই ফেনীর উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ পাঁচ বছর আগে শুরু হলেও এখনো শেষ করা যায়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের কারণে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির মাত্রা সহজেই অনুমেয়। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওপরও। যানজটের কারণে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আজ থেকে রোজা শুরু হচ্ছে, সামনে ঈদ। এ সময়ে নিত্যপণ্যের আমদানি বাড়ে, ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি তৎপরতা এবং ট্রাফিক–ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ ও উন্নত করার বিকল্প নেই। যানবাহনের চালকদের শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এতে অন্তত একটা সহনীয় পরিস্থিতি নিশ্চিত করা যাবে।