খেলাধুলায় বিনিয়োগ জরুরি কেন?

সংক্ষেপে বলা যায়, যেকোনো ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও দেশের জন্য ভালো। ছবি: এএফপি
সংক্ষেপে বলা যায়, যেকোনো ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও দেশের জন্য ভালো। ছবি: এএফপি

সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষ এখন বিশ্বকাপ ফুটবলে মজে আছে। ফুটবলই এখন তাদের ধ্যান ও জ্ঞান। খেলাধুলার প্রভাব যে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রভাবকেও ছাড়িয়ে যায়, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তা সাধারণ মানুষের নানা ধরনের উপকার করছে।
খেলাধুলার এ ধরনের আয়োজন লোকজনকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে উৎসাহিত করে, যা কিনা স্ট্রোক, ক্যানসার, হতাশা ইত্যাদি ব্যাধিতে ভোগার পরিমাণ কমিয়ে আনে। আর এর ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ও কমে আসে। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হতে পারে—যেখানে প্রতি চারজনে একজন স্থূলতায় আক্রান্ত। গত এক দশকে এসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্থূল হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে খারাপ মাত্রায় পৌঁছেছে।
খেলাধুলা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে শক্তিশালী করতে পারে, এটা বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষকে একত্র করে এবং ভাগাভাগির উদ্দেশ্য ও পরিচয় সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে। এ ছাড়া তরুণদের জন্য একটি উৎপাদনশীল খাত সরবরাহ করতে পারে, তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ও ব্যস্ততার মধ্যে রাখে এবং আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষতিকর সামাজিক প্রভাবগুলো থেকে রক্ষা করে। খেলাধুলা তরুণদের ধৈর্য, দলবদ্ধ হয়ে কাজ করা এবং নেতৃত্বের মতো গুণাবলিকে উন্নত করতে পারে—যেসব গুণ নিয়োগকারীরা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে খোঁজেন।
সংক্ষেপে বলা যায়, যেকোনো ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও দেশের জন্য ভালো। আর এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)—আমি যার প্রেসিডেন্ট, ১৮টি দেশের ঝুঁকিতে থাকা তরুণদের উন্নয়নের জন্য ক্রীড়া কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। এ ধরনের কর্মসূচির সঙ্গে মাঝেমধ্যে যৌথভাবে বৃত্তিমূলক ও শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকে।
এসব কর্মসূচির ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। অংশগ্রহণকারীদের ৭০ শতাংশই কর্মসূচি সম্পন্ন করেন। তাঁদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই চাকরি পেয়েছেন বা স্কুলে ফিরে গেছেন বা অনেকেই এক বছরের মধ্যে ব্যবসা শুরু করেছেন। বলিভিয়ার এল আলটো শহরে পরিচালিত একটি প্রকল্পে ফুটবল খেলাকে ব্যবহার করে ৬০০-এর বেশি মেয়েকে নেতৃত্ব এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখানো গেছে। তাঁদের অগ্রগতি সম্পর্কে যদিও আমাদের সীমিত তথ্য রয়েছে, তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত অন্যান্য গবেষণা থেকে জানতে পারি, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জন ও চাকরি পাওয়াসহ দীর্ঘমেয়াদি উপকার করে। এত সব উপকারিতার পরও লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলো খেলাধুলার খাতে তাদের জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বিনিয়োগ করে, যা ইউরোপীয় দেশগুলোর তিন ভাগের এক ভাগ। এর অর্থ কি এই যে এসব দেশের খেলাধুলা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা উচিত? এটা তাদের বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করছে।
এটা ঠিক যে সব ধরনের ক্রীড়া অনুষ্ঠান একই ধরনের প্রভাব ফেলে না। পরিকল্পিতভাবে করা অনুষ্ঠানগুলো যা কি না ছাত্র এবং তাদের কোচ বা অন্যান্য পরামর্শদাতার মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে—সেগুলো আরও বেশি কার্যকর। ইদানীং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলোতে এই ধরনের পরিকল্পিত ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। উন্নয়নের জন্য খেলাধুলার কর্মসূচি নিয়ে আইডিবির গবেষণা ও অভিজ্ঞতা এই উপসংহারকে সমর্থন করে যে কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশলের ওপর বিনিয়োগের বিষয়টি নির্ভর করছে। কিন্তু এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ঠিক কোন কৌশলগুলো সবচেয়ে ভালো কাজ করে। সুতরাং ক্রীড়া খাতে সরকারি বিনিয়োগের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের আরও তথ্য প্রয়োজন।
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয়, এ ব্যাপারে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া উন্নত তথ্য সংগ্রহ এবং সতর্কতামূলক মূল্যায়নেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে আইডিবির মতো উন্নয়ন সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থা ও সরকারগুলো কোন কৌশলটি সবচেয়ে কার্যকর—তা নির্ধারণে একযোগে কাজ করতে পারে। একটি গোল করার জন্য আমরা যেমন ব্যাপক অনুশীলন করি, তেমনি উন্নয়নের জন্য খেলাধুলাকে কাজে লাগানোর জন্য অনেক বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন। শুধু কৌশল নির্ধারণ করলেই হবে না, এর সফল প্রয়োগও ঘটাতে হবে। খেলার মাঠে এখন যা ঘটছে তার প্রতিটি নির্ভর করে এর আগে কী ঘটেছিল। ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
খেলাধুলার পেছনে বিনিয়োগ যেমন সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করে, তেমনি তরুণদের জীবনকে স্বাস্থ্যকর, সুখী ও আরও উৎপাদনশীল করে তোলে। কাজেই এই খাতে বিনিয়োগই বেশি লাভজনক।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

লুইস আলবার্তো মরিনো ইন্টার আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) প্রেসিডেন্ট