আবার পাহাড়ধস

প্রতিবছরের জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে পাহাড় আর ভূমিধসে মানুষের মৃত্যু এখন যেন এক স্বাভাবিক বাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দিন দিন ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ২৪ জুলাই রাতে সর্বশেষ পাহাড়ধসে আবারও কক্সবাজার সদর আর রামুতে ঘুমের মধ্যে মাটিচাপা পড়ে মারা গেল পাঁচ শিশু। এর মধ্যে চারজন আপন ভাইবোন, তাদের আহত মা এখন হাসপাতালে, বাবা কাজ করেন সৌদি আরবে।

এর আগে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসের স্মৃতির (১২ জুন ২০১৭) ঠিক এক বছরের মাথায় গত ১২ জুন আরেক পাহাড়ধসে ঝরে যায় ১১টি প্রাণ। মনে আছে, ২০১৭ সালের সেই ভয়াবহ পাহাড়ধসে নিহত হয় ১৬৬ জন। সেবার শুধু রাঙামাটিতেই ঝরে যায় ১২০টি প্রাণ। আহত হয়েছিল ২২৭ জন। ৩ হাজার ৭৫০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৩৬ হাজার ৬৩৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আশা ছিল, পাহাড় রক্ষায় পাহাড়ের কোনাকানচিতে বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাণ রক্ষায় এবার একটা বাস্তব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক আশার বাণী প্রচারিত হয়েছিল সে সময়। বলাবাহুল্য, পরের পাহাড় বিপর্যয়ের ঘটনায় মানুষের প্রাণ রক্ষায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ষণমুখর রাতে মানুষ শুধু মাইকের ঘোষণা শুনেছে। নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি ছিল ঘুমের ঘোরে শোনা সেসব ঘোষণায়।

আসলে তথাকথিত উন্নয়নের নির্যাতন–নিপীড়নে কাহিল পাহাড়গুলো এখন দাঁড়িয়ে আছে লাশের মতো, মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির চাপ সহ্য করার শক্তি তার নেই। ১২ জুলাই প্রকৌশলীদের এক সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বলেছিলেন, বৃষ্টি এলেই পাহাড়ধসের আতঙ্কে থাকে বাংলাদেশ। এ দুর্যোগ কিছুটা প্রাকৃতিক এবং কিছুটা মানবসৃষ্ট। সে সভায় সংশ্লিষ্ট গবেষক ও প্রকৌশলীরা বলেছেন, প্রায় ২০ বছর আগে ১৯৯৭ সালে জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলায় ১৬০টি ভূমিধসপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়। তারপর যা করণীয় ছিল, তা করা হলে বছর বছর এসব ভূমিধসের ঘটনা এড়ানো যেত।

পাহাড়ধস রোধে কী করা যায়, তা জানতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি তাদের সুপারিশ দিয়েছে বলে মন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। আমরা মনে করি, কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তা জনগণকে, বিশেষ করে পাহাড়ের মানুষকে জানানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। পাহাড় কাটা বন্ধ ও পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

এখন বর্ষার সময়, পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের জানমাল রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক ও প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পাহাড়কে পাহাড়ের মতো থাকতে দিতে হবে।