শিক্ষামন্ত্রীর সদুপদেশ

ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছ থেকে আমরা ভিন্ন কিছু আশা করেছিলাম। ভেবেছিলাম, অন্তত তিনি শিক্ষার্থীদের আবেগ ও মন বোঝার চেষ্টা করবেন, কেননা ছাত্রাবস্থায় তিনিও বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু গত রোববার শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যে ভাষায় আহ্বান জানিয়েছেন, তার মধ্যে পরোক্ষ হুমকিও আছে। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা জানাতে বলা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা কী অবস্থায় আছে, কেন আন্দোলনে নেমেছে সেটিও উপলব্ধি করতে হবে। তারা তো নিরাপদ সড়কের দাবিতে শান্তপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিল। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় নিশ্চয়ই জানেন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান জোর করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে পারবেন না। তাঁরা বড়জোর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বোঝাতে পারেন। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে কাণ্ড ঘটেছে, তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সে কথা বলার সুযোগ আছে কি না, সে কথাও ভেবে দেখার বিষয়।

মন্ত্রীরা যখন শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছেন, তখনই আমরা দেখছি, ক্ষমতার আশ্রয়পুষ্ট কিছু যুবক লাঠি, রামদা ইত্যাদি নিয়ে তাদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছেন। বেশ কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় তারা হামলা চালাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন সহপাঠীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিল। তারা বিভিন্ন সড়কে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, কী উপায়ে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আসবে, তা-ও তারা দেখিয়ে দিচ্ছিল। তাদের নয় দফা দাবির মধ্যে রাজনীতি ছিল না। উদ্বেগের বিষয় হলো মন্ত্রীরা আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার সদুপদেশ দিলেও তাদের ওপর যারা সংঘবদ্ধ আক্রমণ করছেন, তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলছেন না। আক্রমণকারীদের নিবৃত্ত না করে আক্রান্তদের প্রতি সদুপদেশ বর্ষণ শুধু অনৈতিক নয়, প্রবঞ্চনামূলকও।

আমরাও মনে করি, শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। তারা দিনের পর দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে না। কিন্তু তার আগে রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর যে সন্ত্রাসী আক্রমণ হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। আক্রমণকারীদের বিচার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যে নয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে, সেটি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। আগে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ ঠেকান, এরপর শিক্ষার্থীদের উপদেশ দিন। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ব্যতীত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান কিংবা উপস্থিতির হিসাব নেওয়ার নির্দেশনা নিষ্ফল হতে বাধ্য।

এই সরল সত্যটি কি শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় অস্বীকার করতে পারবেন?