৯ নদ-নদী খননের সিদ্ধান্ত

সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বন্যা সমস্যার মোকাবিলা, জলাধার বৃদ্ধি ও পানিপ্রবাহ অবাধ করতে মৌলভীবাজার জেলার ছোট-বড় ৯টি নদ-নদী খননের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মনু, ধলাই, লাঘাটা, করাদাইর, বরাক, গোপলা, ফানাই, ধামাইছড়া ও মরা জুড়ী—এই ৯টি
নদ-নদী খনন করা হবে। এসব নদ-নদীতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো খনন করা হয়নি। ফলে পলি পড়ে এগুলো ভরাট হয়ে গেছে।
একটু বৃষ্টি হলেই এগুলোর পানি উপচে পড়ে এলাকায় বন্যার সৃষ্টি করত। এতে এলাকার মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হতো। তাই নদ-নদীগুলো খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন এসব নদ-নদীর খনন করা মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আশপাশের নিচু এলাকা ভরাট করা হবে। এতে এসব নদ-নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। পানির ধারণক্ষমতা ও প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।

আমাদের দেশের বহু নদ-নদী ও খাল-বিল জলাশয়ের অস্তিত্ব-সংকটের মুখে। যথাসময়ে খনন না করাই এর প্রধান কারণ। খনন না করায় পলি
পড়ে ভরাট হয়ে নদ-নদীগুলো গভীরতা হারাচ্ছে। চর পড়ে অনেক নদ-নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে দেশের নৌপথের
দৈর্ঘ্য এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার আগে দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার। এখন সে দৈর্ঘ্য ৫ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।

ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে প্রতিবছর ১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি ঘনমিটার পলি প্রবাহিত হয়। এর বড় অংশই নদ-নদীর তলদেশে জমে নাব্য-সংকট সৃষ্টি করছে। ৪৭ বছরে নদ-নদীগুলোতে পলি জমেছে প্রায় ১৭৮ কোটি টন। পলির কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ নদ-নদী। ফলে নদ-নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছে লাখো পরিবার। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাই নিয়মিত এগুলোর খনন করাটা খুবই জরুরি।

অতীতে দেখা গেছে, নদ-নদী খননে প্রায়ই কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। খনন করে নদ-নদীর গভীরতা বাড়ানোর বদলে এসব প্রকল্প দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেট ভরতে সহায়ক হয়েছে। মৌলভীবাজারের ৯টি নদ-নদী খনন প্রকল্প যাতে এ রকম ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়, তা দেখতে হবে। খননের নামে যাতে হরিলুট না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমরা চাই, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন যেন যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে হয়।