শিক্ষার্থী আন্দোলন

ঈদের আগে শিক্ষার্থীদের জামিনে মুক্তি নিশ্চিত করে সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। এখন আমরা সরকারের কাছে আরও একটু উদারনৈতিক অবস্থান আশা করতে পারি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরপরই নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল। উভয় আন্দোলনেরই যারা নিয়ামক শক্তি, প্রধানত তাদের দুটি বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নেওয়ার দাবি রাখে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট দুটি বিষয়ে প্রতিকার চেয়েছে। কোটার মতো নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনও নিরাপদ এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ। এই দুই পর্বের কোনোটিতেই এমন কোনো কিছুর সঙ্গে অন্তত শিক্ষার্থীরা জড়ায়নি, যাতে সরকার তাদের প্রতি ‘রাজনৈতিকভাবে’ বৈরী আচরণ করতে পারে। প্রতিবাদ করা এবং দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। নিরীহ ছাত্রছাত্রীরা বিশুদ্ধভাবে সেটাই করেছে। তাদের প্রায় সবার জামিন লাভ সেই সত্যের প্রতি একটা স্বীকৃতি।

এখন এই দুটি উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কিছু গুরুতর বিচ্যুতি সত্যিই ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হলে যথাযথ প্রক্রিয়া (ডিউ প্রসেস) অনুসরণ করাই প্রশাসনের রুটিন কাজ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমকে যে উপায়ে ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়েছে, তাতে আইনের শাসনের মূলনীতি মার খেয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কেন নির্বাচনী বছরটিতে সরকারি দলের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর হতে পারে জেনেও এ রকম হঠকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করল, তা আমাদের কাছে বিস্ময়কর। ১১ নোবেল বিজয়ীসহ ২৮ বিশিষ্ট ব্যক্তির রোববারের বিবৃতি এবং বিশ্বের মর্যাদাসম্পন্ন পত্রিকাগুলোর তরফে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে, তাতে তাঁর বাসভবন থেকে ‘অপহরণ’ করার অভিযোগটি সাধারণভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। অথচ এ রকম ভীতিকর একটি আচরণ যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ঘোষণা সরকারের দিক থেকে আসেনি।

বাংলাদেশ সংবিধানে সন্দেহভাজন ও গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি রাষ্ট্রের কাছ থেকে সদাচরণ পাওয়ার যে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে, তার পদ্ধতিগত লঙ্ঘন ঘটছে। রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা, এমনকি বর্তমান সরকার পুলিশি নির্যাতন রোধে যে উত্তম আইনটি করেছিল, আমরা দেখতে পাচ্ছি সেসবের পরিষ্কার ব্যত্যয় ঘটছে, অথচ জনপ্রশাসন এ বিষয়ে কোনোভাবে উদ্বিগ্ন বলে প্রতীয়মান হয়নি। এসব বিষয়ে উদাসীন থাকতে সরকারকে যাঁরাই পরামর্শ বা উৎসাহিত করেন, তাঁরা একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার বন্ধু বলে গণ্য হতে পারেন না।

সার্বিক বিচারে আমরা আশা করব, ঈদের আগে জামিনে মুক্তিদানে সরকার যে একটি উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে একটা অধিকতর মানবিক ও সার্থক রূপ দেওয়া হোক। বিতর্কিত ৫৭ ধারার আওতায় যারা অভিযুক্ত, তাদের জামিন লাভের সুযোগ ঈদের অবকাশে মহানগর দায়রা জজ নিশ্চিত করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে এই আদালত জামিনের দরখাস্ত ছুটির মধ্যেও শোনার এখতিয়ার রাখেন।

ঈদের পরে জামিনপ্রাপ্তদের মামলা প্রত্যাহার করাই হবে সুবিবেচনাপ্রসূত। এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলিদের (পিপি) উপযুক্ত নির্দেশনা দেওয়াসহ প্রচলিত আইনে যেসব সুযোগ রয়েছে, তা শিক্ষার্থী আন্দোলন-সংশ্লিষ্টদের অনুকূলে প্রয়োগে আমরা রাষ্ট্রপতির বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করি। দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার একটি বিষয় যে এর সঙ্গে জড়িত আছে, তা তিনি ও প্রধানমন্ত্রী বিবেচনায় নেবেন আশা করি। ঈদ উপলক্ষে দণ্ডিতদের সাজা মওকুফের ঐতিহ্যও কিন্তু আমাদের আছে।