পুরোনো কাগজের শিল্প

কবি বলেছেন, ‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’। বগুড়ার শিল্প উদ্যোক্তারা ছাই উড়িয়ে রতন না পেলেও ফেলনা পুরোনো কাগজ দিয়ে তৈরি করছেন নিউজপ্রিন্ট, মিডিয়াম ও বোর্ড পেপার। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় পুরোটাই যখন শহরমুখী, তখন বগুড়ার গ্রামাঞ্চলে কাগজ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে ওঠা উৎসাহব্যঞ্জকই বটে।  প্রথম আলোর বগুড়া প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, টোকাই ও ফেরিওয়ালাদের হাত ঘুরে পুরোনো ও ফেলনা কাগজ দিয়ে বগুড়ায় তৈরি হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট, মোড়কীকরণ শিল্পে ব্যবহারযোগ্য মিডিয়াম ও বোর্ড পেপার। এসব পণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সমাদৃত। জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৬টি পেপার ও ১৮টি বোর্ড পেপার মিল। এসব কারখানা বছরে দেড় লাখ টন কাগজ উৎপাদন করে থাকে, যা দেশীয় ছাপাখানাশিল্পে বিদেশি কাগজের নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি সরাসরি ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এসব কারখানায় কম পুঁজি লাগে আর কাঁচামালও সহজে পাওয়া যায়।

বগুড়ায় কাগজ প্রক্রিয়াজাত শিল্পের একটি ইতিহাস আছে। ২০০৯ সালে প্রথম ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের টিএমএসএসের প্রধান কার্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠে বিসিএল পেপার মিলস। এর সাফল্য দেখে অন্যান্য উদ্যোক্তা কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন। একটি কারখানার উদ্যোক্তার মতে, গ্রামের মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতেই শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। তবে তিনি যে সমস্যার কথাটি বলেছেন, সরকারের উচিত হবে সেটি দ্রুত সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তাঁর দাবি, গ্রামে কারখানা হওয়ায় গ্যাস-সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না এবং বিদ্যুৎ দিয়ে চালানোয় উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। শহরের কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে গ্রামের কারখানায় কেন করা যাবে না?

একসময় বগুড়া ছিল উত্তরাঞ্চলের প্রধান শিল্পশহর এবং সেখানে অনেক বড় বড় কারখানা ছিল। কিন্তু গ্যাসভিত্তিক কারখানার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেখানকার অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বগুড়ার গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এই স্বল্প পুঁজির কারখানাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এদিকে কচুরিপানা, গাছের পাতা, বর্জ্য পাট, বর্জ্য তুলা, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি বর্জ্যজাতীয় কাঁচামাল দিয়ে ফেনীতে হ্যান্ডলুম পেপার মিল স্থাপনের খবরটিও আমাদের আশান্বিত করে। সেখানে হাতে তৈরি কাগজ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। অনেক এলাকায় সহজে ও সুলভে প্রাপ্ত কাঁচামাল ব্যবহার করে শিল্প গড়ে তোলার চেষ্টা আছে। সেসব উদ্যোগে চাই সরকারের প্রণোদনা ও সহায়তা।

বগুড়া ও ফেনীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠুক। শুধু শহর নয়, গ্রামেও শিল্পায়নের প্রসার ঘটুক।