মধ্যবর্তী নির্বাচনে ঝুলছে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই এখানকার অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস রাজনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে।
প্রথমত, নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন উন্মত্ত সমর্থক ১৪টি বোমা এমন সব শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতার বাসায় পাঠিয়েছেন (বোমাগুলোর একটিও বিস্ফোরিত হয়নি), যাঁদের ট্রাম্প উপর্যুপরি আক্রমণ করে এসেছেন। এরপর আরও ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে পিটসবার্গ সিনাগগে। সেখানে গত শনিবার প্রার্থনা করতে যাওয়া ১১ জন ইহুদিকে ১ জন শ্বেতাঙ্গ নাগরিক গুলি করে হত্যা করেছেন।

আজ আমেরিকার নাগরিকেরা দুই শিবিরে বিভক্ত। তাঁদের একটা বিরাট অংশ খোদ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মহা উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। তাঁদের সামনে এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি তাঁর জাতির উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ তালাশ করে দেখার ব্যাপারে মোটেও আগ্রহী নন। পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ সরিয়ে জাতিকে একটি ঐক্যের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁর মধ্যে কোনো তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।

যে ১৪টি বোমা পাঠানো হয়েছিল, এফবিআই সেগুলোকে ‘মারাত্মক ধ্বংসক্ষমতাসম্পন্ন’ বলে উল্লেখ করেছে। বোমাগুলো যদি সত্যিই ফাটত, তাহলে ট্রাম্পের প্রধান সারির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতারা হয় মারা যেতেন, নয়তো জখম হতেন। যাঁদের ঠিকানায় এই বোমা পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দুজন সাবেক প্রেসিডেন্টও রয়েছেন (বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা)। এ ছাড়া আছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল, সিআইএর সাবেক পরিচালক, ২০২০ সালের নির্বাচনের দুজন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। এই তালিকার অধিকাংশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাম্প নানা সময়ে নানা ধরনের আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন। অবশ্য ট্রাম্প শিবিরের লোকজন ইতিমধ্যেই এই নাশকতার চেষ্টাকে ডেমোক্রেটিক পার্টির পাতানো খেলা বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলা শুরু করেছেন, ট্রাম্পকে দোষারোপ করার জন্য এই ‘মিথ্যা বোমা’ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে লোককে আটক করা হয়েছে, তিনি অবশ্য এখন পর্যন্ত বলেননি যে ডেমোক্র্যাটরা তাঁকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। তবে তিনি যে একজন একনিষ্ঠ ট্রাম্প–সমর্থক, তা তাঁর ব্যক্তিগত রেকর্ড থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, ট্রাম্প ইতিমধ্যেই নানা আচরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো নেতৃত্বের গুণাবলি তাঁর মধ্যে নেই। একজন প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি যখন উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করার পক্ষে কথা বলেন, তখন ট্রাম্প–সমর্থকদের উন্মত্ততায় কেউ চমকাবেন না। গণমাধ্যমকে তিনি যখন ‘জনগণের শত্রু’ বলে আক্রমণ করেন, তখন ধরে নেওয়া যায়, তাঁর অনুসারীদের কেউ কেউ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বসতে পারেন। ক্লিনটন দম্পতি, ওবামাসহ অন্যদের বাড়ি থেকে বোমাগুলো অপসারণের পরের দিন হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প একটি বিবৃতি দেন। সেখানে তিনি এ ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক সহিংসতাপূর্ণ কাজ অথবা হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, জাতিকে অবশ্যই একতাবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু এই বিবৃতি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি উইসকনসিনে এক সমাবেশে বলেন, কোনো অবৈধ অভিবাসীকে তিনি আমেরিকায় থাকতে দেবেন না। তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। সেখানে তিনি প্রতিপক্ষের নেতাদের তীব্র আক্রমণ করে বক্তব্য দেন।

এ বিষয়গুলো মার্কিন নাগরিকেরা মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না। ৬ নভেম্বর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সব কটি এবং সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনকে স্মরণকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুই বছর ধরে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট, প্রেসিডেন্ট পদ দখল করে আছেন। অতি সম্প্রতি তাঁদের দলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ব্রেট কাভানাও যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে তাঁদের এই একচেটিয়া আধিপত্য তছনছ হয়ে যেতে পারে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বর্তমান জনপ্রিয়তার পাশাপাশি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেরও বাতাস বোঝা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। প্রতিনিধি পরিষদ যদি ডেমোক্র্যাটদের হাতে যায়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্প মহাবিপদে পড়বেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা, আয়কর বিবরণী, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ—এসব নিয়ে ব্যাপক তদন্তের মুখে পড়বেন তিনি।
ট্রাম্প যদি সিনেটে তাঁর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেন, তাহলে সেই চাপ কিছুটা কম পড়বে। তবে এবারের নির্বাচনে সিনেটও রিপাবলিকানদের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

আর যদি কোনো কারণে উভয় কক্ষেই রিপাবলিকানরা জিতে যান, তাহলে ট্রাম্পের দমন–পীড়ন আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে নেমে আসবে। সুতরাং এই মধ্যবর্তী নির্বাচন যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

এলিজাবেথ ড্রিউ নিউ রিপাবলিক পত্রিকার কন্ট্রিবিউটিং এডিটর