নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন্দল-সংঘাত

গত শনিবার রাজধানীর আদাবর এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই দুটি বিবদমান পক্ষের সংঘর্ষের ফলে দুই তরুণের নিহত হওয়ার খবরটি শুধু দুঃখজনক নয়, উদ্বেগজনকও বটে। কারণ, এ ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।

ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের বর্তমান সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকের কর্মী-সমর্থকেরা একই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাদেক খানের কর্মী-সমর্থকদের মিছিলে হামলা করেছিলেন—এই অভিযোগ করেছেন নিহত দুই তরুণের বন্ধুরা। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য–প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। কিন্তু হামলার শিকার হয়ে পিকআপ থেকে নামতে গিয়ে সুজন ও আরিফ নামের দুই তরুণের গুরুতর আহত হওয়া এবং পরে হাসপাতালে মারা যাওয়ার ঘটনাটি যে সন্দেহাতীতভাবে একটি ফৌজদারি অপরাধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কারা হামলাটি করেছিল এবং সংঘাত কী নিয়ে বেঁধেছিল, এ বিষয়ে প্রথম আলোর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ‘তদন্তের স্বার্থে’ কিছু বলতে অসম্মতি জানিয়েছেন। এ থেকে শঙ্কা জাগতে পারে যে ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান পক্ষগুলোর এ ধরনের পারস্পরিক হানাহানির ঘটনার ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না-ও ঘটতে পারে। যদি সত্যিই তা হয়, অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যদি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সহিংস আচরণসহ সামগ্রিকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় নিষ্ক্রিয়তা দেখায়, তাহলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান দুরূহ হয়ে উঠতে পারে।

সারা দেশে প্রায় সব সংসদীয় আসনে একই দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তি আছেন; ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে আছেন সবচেয়ে বেশি। সুতরাং তাঁদের মধ্যে বিরোধ-সংঘাতের আশঙ্কাও বেশি। এই আশঙ্কা দূর করতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে বেশি তৎপর হতে হবে, যেন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ভাবতে না পারেন যে তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে রয়েছেন।

সাধারণভাবে আমরা দেখে আসছি যে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন করেও অনেক ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে একধরনের ছাড় পান। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও যদি এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে তা একটি পক্ষপাতদুষ্ট পরিস্থিতি হিসেবেই বিবেচিত হবে। ফলে এ ধরনের ঘটনায় এখন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশিত। 

বলপ্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সংঘাত-সহিংসতা ইত্যাদি যা কিছু নির্বাচনী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা, মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া, তারপর নির্বাচনী প্রচারণাসহ ভোটার আকর্ষণের নানা কর্মকাণ্ড সামনে রয়েছে। এই সময়ে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপূর্ণ অনুসরণ নিশ্চিত করার পুরো দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আশা করি কমিশন তা যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবে।