শিশু জারিফ উদ্ধার

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এলাকাবাসী ও পুলিশ মিলে অপহৃত এক শিশুকে যেভাবে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে, তা সত্যিই অনন্য। এ ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চার তরুণ যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন, তা অতুলনীয়।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সন্দ্বীপের বাউরিয়া আইল্যান্ড কিন্ডারগার্টেনের কেজি শ্রেণির ছাত্র জারিফকে গত মঙ্গলবার দুপুরে অপহরণ করা হয়। মা পরিচয় দিয়ে জারিফকে স্কুলভ্যান থেকে নামিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নিয়ে যান এক নারী। অপহরণের পরদিন জারিফের বাসার সামনে তার স্কুলড্রেস ও একটি চিরকুট রেখে যায় কেউ একজন। চিরকুটে বলা হয়, চার লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে জারিফকে হত্যা করা হবে। সেখানে একটি মুঠোফোন নম্বরও দেওয়া হয়। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর জারিফের বাবা ছেলেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। অপহরণকারীদের চিরকুট পাওয়ার পর এক ভিডিওতে ছেলেকে খুঁজতে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আকুল আহ্বান জানান। ৫১ সেকেন্ডের ভিডিওটি গত বুধবার রাতে ফেসবুকে শেয়ার করলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। আর ভিডিও দেখে জারিফের সন্ধানে নেমে পড়ে এলাকাবাসী। তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন হান্নান তারেক, সজীব খান, জাহিদ ও ফিরোজ খান নামের চার তরুণ। মূলত তাঁরাই চিরকুটে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরের ক্লু ধরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জারিফের অবস্থান শনাক্ত করেন। এরপর পুলিশের সহায়তায় জারিফকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী ওই নারীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।

এলাকাবাসীর অসাধারণ তৎপরতায় শিশু জারিফ এখন মায়ের কোলে। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? এখানে প্রকৃত অর্থেই মানবতার জয় হয়েছে। এলাকাবাসী যদি এভাবে তৎপর না হতো, তাহলে হয়তো শিশু জারিফকে ফিরে পাওয়া সম্ভব হতো না। কেননা, অতীতে এমনও হয়েছে যে অপহরণের পর উদ্ধারে সময়ক্ষেপণের কারণে অপহৃতকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি।

সন্দ্বীপবাসী যে তৎপরতা দেখিয়ে জারিফকে উদ্ধার করেছে, তা অন্যদের জন্য অনুসরণীয়। অপহৃতকে উদ্ধার করা পুলিশের কাজ—এই ভেবে তারা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। তারা জারিফকে উদ্ধার করে দেখিয়েছে, মানুষ মানুষের জন্য।

আজকাল অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া শিশুর সন্ধান চেয়ে বা দিয়ে অথবা মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত চেয়ে পোস্ট দেন। কিন্তু দেখা যায় সবাই এসব পোস্টে সমানভাবে সাড়া দেন না। অথচ সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে কোনো হারিয়ে যাওয়া শিশু বা বেঁচে যেতে পারেন কোনো মরণাপন্ন রোগী। জয় হোক মানবতার।