বস্ত্রশিল্পে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তৌফিক আলম সম্প্রতি বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের জন্য
টেকসই ও পরিবেশবান্ধব যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, সেটি নিঃসন্দেহে বস্ত্র খাতে এক অমিত সম্ভাবনার হাতছানি। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মো. তৌফিক আলমের এই প্রযুক্তি পানি, জ্বালানি ও সময় সাশ্রয়ী। এটা বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলোতে পানির ব্যবহার ৪৫ শতাংশ হ্রাস করবে, জ্বালানির ব্যবহার কমাবে ৩৫ শতাংশ এবং সময় বাঁচাবে ৪৫ শতাংশ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বস্ত্রশিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যেগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ ঘটায় এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া এ শিল্পে বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের মানুষ যত পানি ব্যবহার করে, তার দ্বিগুণ পানি ব্যবহার করে বস্ত্রশিল্পগুলো। মূলত কাপড়কে রং করার উপযোগী করতে এই বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রি-ট্রিটমেন্ট।

বস্ত্রশিল্পগুলোতে প্রি-ট্রিটমেন্টের জন্য অনুসৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাই সবাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। অন্যটি পরিবেশবান্ধব হলেও ভালো ফল না পাওয়ার কারণে এর ব্যবহার কম। এ ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিগুলোতে প্রি-ট্রিটমেন্ট চার থেকে পাঁচ ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু তৌফিক আলমের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সাহায্যে তা এক ধাপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ফলে পানির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সময় ও জ্বালানির সাশ্রয় হবে।

আমরা আশা করছি, বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলো এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পরিবেশদূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামানোর চেষ্টা করবে। গাজীপুরের দুটি বস্ত্র কারখানায় ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য আগে প্রযুক্তিটির পেটেন্ট পাওয়া দরকার। দ্য ডেইলি স্টার-এর খবর অনুযায়ী, ড. মো. তৌফিক আলম তাঁর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির পেটেন্টের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। দ্রুত এই পেটেন্ট দেওয়া হোক সেটাই কাম্য।

দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যেকোনো উদ্ভাবনকে বাণিজ্যিক পর্যায়ে নেওয়ার উদ্যোগ কম। উদ্ভাবনকে টেকসই করতে হলে অবশ্যই তাকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তুলতে হবে। মানুষের কাছে এসব উদ্ভাবন পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে নতুন উদ্ভাবনে কেউ উৎসাহিত হবেন না। এ দিকটিতে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। নতুন নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।