শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে তাদের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারির খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাদের দৌরাত্ম্য আবার দেখা গেল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাসে ফেস্টুন টাঙানো ও সরানো নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যেভাবে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়েছেন, তা একেবারেই অনভিপ্রেত।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে টাঙানো হয়েছিল নৌকা প্রতীকের ফেস্টুন। সম্প্রতি তার পাশেই ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংবিরোধী ফেস্টুন টাঙায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ইকবাল কবিরের ব্যাপক বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে ইকবাল কবিরকে রাজাকার বলে গালাগাল করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। শুধু তা–ই নয়, এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতা–কর্মীরা তা পণ্ড করে দেন। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগ অধ্যাপক ইকবাল কবিরকে অপসারণ না করা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

২০১৪ সালের মে মাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি শুরু করে ছাত্রলীগ। তারপর থেকে ক্যাম্পাসে নানা অঘটনের জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগ। যাত্রার দুই মাসের মাথায় নাইমুল ইসলাম নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের প্রধান আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের নেতৃত্বে শহীদ মশিয়ুর রহমান হলে বহিরাগতরা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। ছাত্রলীগের দাঙ্গাবাজ নেতা-কর্মী ও সমর্থকের হাতে শুধু যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নন; জিম্মি হয়ে পড়েছেন গোটা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্রলীগের এ দৌরাত্ম্যের অবসান কি কোনো দিন হবে না? যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় মনে হচ্ছে না যে ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখার ওপর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে। যখন যা খুশি মনে হচ্ছে তারা করছে। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। ছাত্রলীগের ওপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার জন্য কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।