ভেনেজুয়েলায় কি সমাজতন্ত্রের পতন ঘটছে?

ভেনেজুয়েলার জনবিক্ষোভকে আরও উসকে দিতে ট্রাম্প প্রশাসন চাপিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক অবরোধ। ছবি: এএফপি
ভেনেজুয়েলার জনবিক্ষোভকে আরও উসকে দিতে ট্রাম্প প্রশাসন চাপিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক অবরোধ। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার দিকে এ মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের নজর। ঘটনাবলির বড় দিক তিনটি। এক. যুক্তরাষ্ট্র সেখানকার সরকারকে সরাতে চাইছে; দুই. নিকোলা মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছে এবং তিন. দেশটির অর্থনীতি সংকটে পড়েছে।

দেশটি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র-হুমকি-অবরোধ বহু পুরোনো। সেখানকার খনিজ সম্পদকে নিজের নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তার বশংবদ শাসককে আবারও ক্ষমতায় বসাতে চাইছে। পাশাপাশি ইরান-রাশিয়া-চীনের মিত্র দেশটাকে কাবু করা গেলে সেটা বাড়তি লাভ। ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের গণমাধ্যমের মায়াকান্নার রাজনৈতিক অর্থনীতি তাদের প্রচারিত সত্যের একেবারে উল্টো। দুনিয়ার অনেকেই সেটা জানে ও বোঝে।

কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিষয়টি আলোচনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে অনেক বিভ্রান্তি আছে এবং সেসব নিয়ে আলোচনার বৈশ্বিক প্রয়োজন রয়েছে।

অনেকেই মাদুরোর পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন এই বলে, দেশটির ‘সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠন’ প্রক্রিয়া ধ্বংস করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ প্রচারমাধ্যমগুলো ভেনেজুয়েলার সংকটকে ‘সমাজতন্ত্রের সংকট’ আকারে হাজির করতে সচেষ্ট। বাংলাদেশেও অনেকে এসব বিশ্বাস করে। এমন বিশ্বাস থেকে অনেকে ভেনেজুয়েলার বর্তমান সরকারের পক্ষে এবং আরেক দল বিপক্ষে মতামত দিচ্ছে। প্রচারমাধ্যমগুলো সম্ভবত উভয় পক্ষকেই ধোঁকা দিয়ে চলেছে।

প্রশ্ন হলো, আসলেই কি ভেনেজুয়েলায় সমাজতন্ত্র চলছে?

সমাজতন্ত্রের শর্ত কী
ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ সোভিয়েত মডেলের ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’র প্রধান এক শর্ত। কিন্তু বড় বড় কিছু ‘প্রাইভেট সেক্টর’ বন্ধ করে তা রাষ্ট্রীয়করণ করলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান হয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম হয় না। বাংলাদেশে অতীতে এইরূপ ভুল পদক্ষেপের ফলাফল দেখেছি আমরা। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেই ‘রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র’-এর সংকটগুলো অনুমান করা যায়। একে আসলে রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রও বলা যায় না। কার্যত বিশ্বজুড়ে এ রকম ‘নিরীক্ষা’ রাষ্ট্রীয় পুঁজিতন্ত্রের অধীনেই অনেক ঘটেছে। ভেনেজুয়েলার বর্তমান ও পূর্ববর্তী সরকার যে তেলসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতের রাষ্ট্রীয়করণ করেছিল, তাতেই দেশটিকে সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা ১৯৭২ সালের বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ধরে নেওয়ার মতো ব্যাপার। অথচ বড় বড় কিছু খাতের রাষ্ট্রীয়করণের পরও ভেনেজুয়েলায় ব্যক্তিগত মালিকানার ধরন পুরোপুরিই রয়ে গিয়েছিল। এখনো আছে।

সমাজতন্ত্রের আরেকটি শর্ত সম্পদের সামাজিকীকরণ এবং উৎপাদনপ্রক্রিয়া ও পণ্যের বিতরণ সিদ্ধান্তে জন-অংশগ্রহণ। এরূপ অংশগ্রহণের কোনো নির্দিষ্ট ‘মডেল’ নেই। তবে নিঃসন্দেহে তা আমলানির্ভরতার চেয়ে আলাদা। ভেনেজুয়েলায় সম্পদের সামাজিকীকরণ ঘটেছিল এবং তার ব্যবহার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তে সর্বহারা শ্রেণির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এমন দেখা যায়নি। সেখানে মজুরি-শ্রম সম্পর্কটিও আছে অন্যান্য পুঁজিতান্ত্রিক দেশের মতো।

ভেনেজুয়েলা কি সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়েছিল?
ভেনেজুয়েলার আজকের সরকার হুগো চাভেজ সরকারের উত্তরসূরি। চাভেজ তেল খাত থেকে প্রাপ্ত আয়কে দারিদ্র্যমুখী অনেক কর্মসূচিতে ব্যয় করতে শুরু করেন। ফলে দারিদ্র্য পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হয়। কিউবা থেকে চিকিৎসকদের এনে স্বাস্থ্যসেবায়ও বিপুল পরিবর্তন সাধন করা হয়। এসবের মধ্য দিয়ে তাঁর সরকার জনপ্রিয়তা পায় এবং ‘সমাজতন্ত্রমুখী’ একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়। দেশটির পুরোনো সমাজতন্ত্রীরাও চাভেজকে সমর্থন দিতে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের নামও রাখা হয় সোশ্যালিস্ট পার্টি।

অন্যদিকে, তেল খাত থেকে করপোরেটদের আয় হাতছাড়া হওয়ায় কোম্পানিগুলোর রাজনৈতিক মুরব্বি যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয়। তারা চাভেজকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অপসারণের চেষ্টা করে। চাভেজ সেটা মোকাবিলা করে টিকে যান। কিউবা তাঁকে মদদ দেয়। চাভেজ অনেক বক্তৃতায় মার্ক্স-লেনিনের নাম নিতেন। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিশ্ব র‌্যাডিক্যাল সমাজে চাভেজ ‘হিরো’ হয়ে ওঠেন। তিনি নিজেও তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ‘একুশ শতকের সমাজতন্ত্র’ বলতে শুরু করেন। যদিও এটা ছিল পুরোপুরি ‘বাজার’ভিত্তিক। অন্তর্বস্তুর দিক থেকে চাভেজের দারিদ্র্যমুখী কর্মসূচিগুলো নরওয়ে-ডেনমার্ক-সুইডেনের জনকল্যাণমূলক অনেক কর্মসূচির মতোই জনবান্ধব। কিন্তু তাতেই কেউ সমাজতন্ত্রী হয়ে যায় না। চাভেজের হাত ধরে ভেনেজুয়েলায় সোশ্যাল ডেমোক্রেসির একটা ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল, এটা বলা যায়। একে ‘নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ’ও বলা যায়।

সরকারব্যবস্থা হিসেবে ভেনেজুয়েলায় কী চলছিল
ভেনেজুয়েলায় সরকার হিসেবে যা চলছে, তা মুখ্যত রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্র মাত্র। অনেক পেট্র-রাষ্ট্রের মতোই ভেনেজুয়েলায়ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল দুর্বল। জবাবদিহির সংস্কৃতিতে ঘাটতি ছিল। এখন এবং আরও আগে থেকেই সরকার প্রধানত নির্ভর করছিল সেনাশক্তির ওপর। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘রাষ্ট্র’ ও প্রচলিত ধাঁচের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ‘সমতা’ প্রতিষ্ঠার ধারণাকে লেনিন ‘কুসংস্কার’ ও ‘ভাঁওতা’ বলতেন। যেকোনো রাষ্ট্রবাদিতার মূলে থাকে পীড়নের মনস্তত্ত্ব। ‘রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকৃতগতভাবেই জনস্বার্থবিরোধী। খুব অস্বাভাবিক নয় যে সাম্প্রতিক জন-অসন্তোষ মোকাবিলায় ভেনেজুয়েলায় মাদুরো একনায়কতান্ত্রিক কর্মপদ্ধতির দিকেই ধাবিত হয়েছেন। রাষ্ট্রনির্ভরতার এই পরিণতিই স্বাভাবিক। চাভেজও একপর্যায়ে নিজের জন্য ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা তুলে দিয়েছিলেন।

সংকটের সময় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, চীন, ইরান, তুরস্ক। ছবিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে মাদুরোকে। ছবি: এএফপি
সংকটের সময় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, চীন, ইরান, তুরস্ক। ছবিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে মাদুরোকে। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলায় চলতি সংকটের মূল কারণ কী
দেশটির অর্থনীতি, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার উৎস অনেকখানিই খনিজ তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। মাটির নিচে স্বর্ণ ও বক্সাইটও আছে তাদের। দেশটির আয়ে প্রতি ১০০ ডলারের ৯৭ ডলারই ছিল তেল থেকে। জিডিপির ৫০ ভাগ নির্ভরতা ছিল তেলের ওপর।

‘পেট্র-রাষ্ট্র’গুলোর অনেকগুলোতে যেসব খারাপ লক্ষণ থাকে, ভেনেজুয়েলাও তার শিকার। তেলের দাম যখন ভালো ছিল, সরকারও ভালোভাবে অর্থনীতি চালিয়েছে। কিন্তু পারেনি অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য তৈরি করতে। তেলের ওপর অস্বাস্থ্যকর নির্ভরশীলতা কাটাতে কোনো বিকল্প জাতীয় শিল্প গড়ে তোলা হয়নি।

চাভেজ ও মাদুরোর সরকার তেলের আয়ের একটা বড় অংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে খরচ করছিল। ২০১৪-এর আগে-পরে তেল যখন প্রতি ব্যারেল প্রায় ১০০ ডলার ছিল, তখন সমস্যা হয়নি। ২০১৬-এর পর তেলের দাম যখন প্রায় ৩০ ডলারে চলে আসে, তখন সমস্যায় পড়ে সরকার। সৌদি আরবকে ব্যবহার করে তেলের দাম কমিয়ে ফেলার উদ্যোগটিও ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পরিকল্পনার অংশ। রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর ও ইরান ছিল যার লক্ষ্য। ভেনেজুয়েলা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ফেঁসে যায়। অন্যদের অর্থনৈতিক বিকল্প ছিল। ভেনেজুয়েলার সেটা ছিল না।

তেল থেকে আয় কমে যাওয়ায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতের খরচ না কমিয়ে সরকার নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে তা চালু রাখতে চাইছিল। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। সম্পদের অভাবে স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি খাত পরিচালনাতেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ রকম অবস্থার জন্য ওয়াশিংটন অপেক্ষা করছিল। তারা সর্বশেষ অবরোধ আরও কঠোর করে। এতে ভেনেজুয়েলার বৈদেশিক ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। বৈদেশিক মুদ্রার জোগান আরও কমে। দক্ষ পেশাজীবীরা অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে থাকেন। ফলে তেল উত্তোলন সামর্থ্যও কমে যায়। জনগণের অর্ধেকের বেশি নতুন করে দারিদ্র্য পরিস্থিতির মুখে পড়ে।

বিরূপ পরিস্থিতির মুখে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও অতিকেন্দ্রীভূত হতে থাকে। দেশটির আজকের অবস্থার বড় দিক হলো কেন্দ্রীভূত শাসন সংস্কৃতির সংকট। উন্নয়নকে গণতন্ত্রের বিকল্প ভাবলে এ রকম সংকট অন্য দেশেও হতে পারে।

রাশিয়া-চীন কেন ভেনেজুয়েলাকে সমর্থন করছে
ভেনেজুয়েলার বর্তমান সংকটকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যা কায়েম করতে চাইছে, তা হলো একটা পুতুল সরকার। এমন সরকার যে ফ্যাসিস্ট চরিত্রের হবে, সেটা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মাদুরোবিরোধী শিবিরের দিকে তাকালে বোঝা যায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কয়েকবারই ভেনেজুয়েলাকে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য দেশটির বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধকে নিজের জনগণের কাছে জায়েজ রাখা। তবে এ–ও বলার সুযোগ নেই, মাদুরোর বিরুদ্ধে জন-অসন্তোষ নেই। সেটা বরং বাড়ছে। প্রশ্ন হলো, রাশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ তাহলে মাদুরোর পাশে দাঁড়াচ্ছে কেন? তারা কি ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য দক্ষিণপন্থী সরকারের আগমন প্রতিরোধে নেমেছে?

ব্যাপারটা মোটেই সে রকম নয়। এই দেশগুলো চাভেজ ও মাদুরোর আমলে ভেনেজুয়েলার তেল সম্পদের অন্যতম সুবিধাভোগী। সেই সুবিধা হারাতে চাইছে না তারা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক হেজিমনির বিরোধিতা থেকেও তারা মাদুরোকে সমর্থন দিচ্ছে। মাদুরোর সোশ্যাল ডেমোক্রেসি কিংবা কথিত সমাজতন্ত্র নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই এবং সেটা রক্ষার জন্যও তারা লড়ছে না। অন্তত রাশিয়া তো নয়ই। দক্ষিণ আমেরিকায় ব্রাজিলকে হারানোর পর চীন-রাশিয়ার জন্য ভেনেজুয়েলাকে রক্ষা করা বৈশ্বিক প্রভাবের অংশ হিসেবেই দরকার। এর সঙ্গে সমাজতন্ত্রের জন্য তাদের অনুরাগের বিন্দুবিসর্গ সম্পর্ক নেই।

মোদ্দাকথা, ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির ধরনই যেখানে পুঁজিতান্ত্রিক, সমাজতন্ত্র যেখানে ছিলই না, সেখানে সমাজতন্ত্রের পতনেরও সুযোগ নেই। দেশটির সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের এমন অনেক কর্মসূচি নিয়েছিল, যা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অনেক দেশেই আছে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় খাতের প্রাধান্যের কারণে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিকে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদই বলতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার লড়াইটা মূলত একধরনের অর্থনৈতিক যুদ্ধমাত্র। বিমান পরিবহন এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে বাধাগ্রস্ত করে বহুভাবে সিআইএ এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ভেনেজুয়েলার মুদ্রাকে প্রায় অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এজেন্সিগুলোকে দিয়ে দেশটির রেটিং অতিরিক্ত খারাপ দেখানো হচ্ছে। বৈদেশিক সম্পদ আটকে দেওয়া হয়েছে। বিদেশের ব্যাংকে রাখা ভেনেজুয়েলার স্বর্ণ আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্তের জবাবে ভেনেজুয়েলা এই জানুয়ারি মাসেই তুরস্কে সোনা রপ্তানি করার বিনিময়ে জনগণকে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি চালু রাখতে চাইছে। নিশ্চিতভাবেই মার্কিন অবরোধ ভেনেজুয়েলার সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধতুল্য। ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ব্যবস্থা কী হবে, সেটা একান্তই সে দেশের মানুষের ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রকে সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা উচিত।

ভেনেজুয়েলায় চাভেজের আমল থেকে সোশ্যাল ডেমোক্রেসি বা সামাজিক গণতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা হচ্ছিল। এটা পূর্ববর্তী সরকারগুলোর চেয়ে অনেক অগ্রসর একটা ব্যাপার ছিল। বহু মানুষের দারিদ্র্য পরিস্থিতি লাঘব হয় তাতে। কিন্তু সরকারের ভুলে ভরা কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং অর্থনীতি পরিচালনায় সৃজনশীলতার অভাব দেশটিকে খাদের কিনারে নিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ এ ক্ষেত্রে অপরাধতুল্য সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এর সঙ্গে সমাজতন্ত্রের সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই। সমাজতন্ত্র মোটেই একনায়কতন্ত্র নয়। সমাজতন্ত্র ওপর থেকে চাপিয়েও দেওয়া যায় না। সমাজমুখী বা দারিদ্র্যমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে আমলাতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র কায়েম সমাজতন্ত্র কখনো অনুমোদন করে বলে চিরায়ত মার্ক্সীয় সাহিত্যে দেখা যায় না। আশা করি, ভেনেজুয়েলাকে সঠিকভাবে বুঝতে পারব আমরা। গণতন্ত্র ছাড়া সমাজমুখী কর্মসূচি বরাবর ঝুঁকিতে পড়ে। সেটা ভেনেজুয়েলাই হোক কিংবা ইরান বা বাংলাদেশে হোক।

আলতাফ পারভেজ: গবেষক