মনু নদের খননকাজে ধীরগতি

মৌলভীবাজারে মনু নদ খননকাজ ধীরগতিতে চলার খবরটি উদ্বেগজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নদটির খননকাজ সম্পন্ন না হলে যে বিপর্যয় হবে, তা সামলানো কঠিন হবে।

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নদ রক্ষা ও সারা বছর নৌযান চলাচলের উপযোগী করতে এবং বন্যা প্রতিহত করতে মনু নদ খননের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে খননকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা বাধার কারণে তা শুরু হয়েছে অক্টোবরে। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি খুবই সামান্য। মাত্র ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন যে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব নয় তা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থায় আগামী বর্ষায় মনু নদের আশপাশের এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

খননকাজ শুরুর ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ হিসেবে যে কয়েকটি বিষয় সামনে আনছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, তাতে বোঝা যাচ্ছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। যেমন: খনন এলাকায় বালুমহাল ছিল। ইজারাদার এপ্রিল মাস পর্যন্ত বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করেন। ফলে এপ্রিল পর্যন্ত খননকাজ শুরু করা যায়নি। আবার এপ্রিলের পর বন্যা শুরু হয়ে যায়। তাই কাজ শুরু করতে আরও বিলম্ব হয়েছে। বন্যার পর নতুন করে জরিপ করতে হয়েছে। জরিপকাজ সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে ইত্যাদি।

আসলে আমাদের দেশে সরকারি প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হওয়াটা একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি যে এর জন্য দায়ী, এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রথমে একটি নির্ধারিত অঙ্কের টাকায় প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। পরে যেকোনোভাবে ব্যয় বাড়ানো হয়। কারণ ব্যয় যত বাড়বে, ততই প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লাভ।

এমনও দেখা গেছে, প্রয়োজন বিবেচনা না করে বহু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যা জনগণের কোনো উপকারে আসে না।

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থ বিবেচনায় নয়, জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হতে হবে। যেকোনো প্রকল্প শুরু করার আগে তার বাস্তবায়নের ব্যাপারে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট রূপরেখা গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

মনু নদের খননকাজসহ দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যাতে যথাসময়ে শেষ হয়, সে ব্যাপারে সরকারের কর্তৃপক্ষগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।