প্রিয়াঙ্কা কি সফল হবেন?

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী খুব আয়াসেই নেহরু-গান্ধী বংশের পরিচয় বহন করছেন। উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটকে তাঁর মায়ের সংসদীয় আসনের সভাগুলোতে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে একজন স্পষ্টভাষী যোগাযোগকারীর ভূমিকায় ছিলেন। তবে কংগ্রেস ও গণমাধ্যমে তাঁর গোঁড়া সমর্থকেরা তাঁকে তাঁর দাদি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করছেন।

তাঁদের মতে, কংগ্রেসের সব স্তরের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে আমজনতার মধ্যে প্রিয়াঙ্কার গ্রহণযোগ্যতা দাদি ইন্দিরা গান্ধীর মতোই। পরীক্ষিত না হলেও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ওপর অনেকেই আস্থা রাখেন। কিন্তু এমনটা ভাবা কি ঠিক হচ্ছে?

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন এবং একজন দক্ষ রাজনীতিক হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি এমনকি কারাগার থেকেও ইতিহাসের সমালোচনামূলক শিক্ষা দেন মেয়েকে। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা হাতে-কলমে এমন কোনো শিক্ষা পাননি। আমরা সত্যিই প্রিয়াঙ্কার বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বা তাঁর আদর্শগত পছন্দ সম্পর্কে জানি না। ইন্দিরা গান্ধী যে সময়টায় বসবাস করেছেন, তার চেয়ে ভিন্ন একটি সময়ে বসবাস করছেন প্রিয়াঙ্কা। ইন্দিরা গান্ধী নিজেকে একজন দক্ষ শাসক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু তাঁর সব কাজই যে সঠিক ছিল, এমন নয়।

১৯৫৯ সালে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী কেরালায় প্রথম নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার ভেঙে দেন। তাঁর এই পদক্ষেপ তখন ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। এর আট বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। দল থেকে ডানপন্থীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কমিউনিস্টদের সঙ্গে হাত মেলান। এখন ডানপন্থীরা আবার নতুনভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে।

কংগ্রেস এখন চাইছে উত্তর প্রদেশে তাদের হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে। প্রিয়াঙ্কাকে আসলে উত্তর প্রদেশে পাঠানো হয়েছে মোদিবিরোধী দুটি দলের সমন্বয়ে গঠিত জোটের সঙ্গে লড়াই করতে। নিম্নবর্ণের কৃষকদের দল সমাজবাদী পার্টি ও দলিতদের দল বহুজন সমাজ পার্টির এই জোট মুসলমানদের সমর্থন নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ও তাঁর ডেপুটির ছেড়ে দেওয়া আসনের উপনির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির প্রার্থীদের পরাজিত করে সবাইকে চমকে দিয়েছে।

ভাই ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কাকে, যেখানে রাহুলের নিজের ও মা সোনিয়া গান্ধীর
আসন আমেথি ও রায়বেরিলি অবস্থিত। রাহুল মনে–প্রাণে চান যে তাঁর বোন উত্তর প্রদেশে ফের কংগ্রেসের শাসন ফিরিয়ে আনুক। আর সেটা কেবল সম্ভব হবে উত্তর প্রদেশে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটের ওপর সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটিয়ে।

ইন্দিরা গান্ধী সব সময় এ এন হাকসার ও মোহন কুমারামঙ্গলমের মতো উপদেষ্টাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সাম্প্রতিক নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেনেহরুর দল গরুর পরিশোধিত মূত্র বিক্রি করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাঁরা তার বিরোধিতা করতেন।কিন্তু চারপাশে এত বিজ্ঞ উপদেষ্টা থাকার পরও অমৃতসরে শিখদের তীর্থক্ষেত্র স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান চালানোর মতো ভুল করেছিলেন ইন্দিরা। আর এটার দাম তাঁকে দিতে হয় নিজের জীবন দিয়ে। এ ঘটনার পর ইন্দিরার ছেলে ও প্রিয়াঙ্কার বাবা রাজীব গান্ধী শিখদের ওপর নিষ্ঠুর পুলিশি নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধী মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এমন একজনকে নিয়োগ করেছেন, যাঁর নাম ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সহিংসতার উসকানিদাতাদের নামের তালিকায় পাওয়া যায়।

এটা সত্য যে প্রিয়াঙ্কার মা সব সময় কংগ্রেস দলের মানবিক ভাবমূর্তি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি এখন অসুস্থ এবং এমন জল্পনাকল্পনাও ছড়িয়ে পড়েছে যে সোনিয়া হয়তো রায়বেরিলি আসনটি ছেড়ে দিতে পারেন প্রিয়াঙ্কার জন্য। প্রিয়াঙ্কা লোকসভার সেই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নিম্নবর্ণের কৃষকদের সমাজবাদী পার্টি ও দলিতদের বহুজন সমাজ পার্টির যঁারা রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন, তঁাদের তুলনায় প্রিয়াঙ্কা মধ্যবিত্ত শ্রেণির আইকন হিসেবে উজ্জ্বল, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদের চেয়ে তিনি অনেক বেশি উপস্থাপনযোগ্য। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাজনীতিতে এত দিন নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন মা সোনিয়া গান্ধী ও ভাই রাহুল গান্ধীর হয়ে প্রচারের কাজেই। কিন্তু ভোটের মাত্র কয়েক মাস আগে যেভাবে তিনি উত্তর প্রদেশের মতো কঠিন রাজ্যে লড়াইয়ে নামলেন, তাতে তিনি সফল হবেন কি না বলা মুশকিল। 

ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
জাভেদ নাকভি দিল্লিতে ডন–এর প্রতিনিধি