ডাকসুর তফসিল

সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ ছাড়া সব ছাত্রসংগঠনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর কথা আমলে না নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১১ মার্চই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, ২০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা হবে ৩ মার্চ।

গত সোমবার তফসিল ঘোষণার পর এর পক্ষে ছাত্রলীগ ও বিপক্ষে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। তবে আশার কথা, কোনো ছাত্রসংগঠন এমন কথা বলেনি যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন জোট ক্যাম্পাসে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে। বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাত্রলীগের আশ্বাসকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, এর বাস্তবায়ন হতে হবে। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মতে, ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগ তাদের গত ১০ বছরের ছাত্রস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে এ ধরনের লোক দেখানো আশ্বাস দিচ্ছে। হলগুলোয় তাদের দখলদারি এখনো বজায় আছে। আছে গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতিও।

ক্যাম্পাস বা হলে কোনো ছাত্রসংগঠনের দখলদারি বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে ডাকসু বা হল সংসদের নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগেই সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী সব ছাত্রসংগঠনের সম–অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। দলমত-নির্বিশেষে সবাই যাতে অবাধে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারে, সেই নিশ্চয়তা কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে। হলগুলোতে ছাত্রলীগ গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতির নামে যে জবরদস্তি চালাচ্ছে, সেসবও বন্ধ করা জরুরি। নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ ও ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশই প্রত্যাশিত। 

অভিযোগ আছে, অধিকাংশ হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক সরকার–সমর্থক নীল দলের সদস্য। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর সংশয় অমূলক নয়। শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষকেরা সাদা ও নীল দলে বিভক্ত থাকলেও হলগুলোর প্রশাসনিক দায়িত্বে শুধু নীল দলের শিক্ষকেরা আছেন। প্রশাসন শুধু একটি ছাত্রসংগঠনের কথা শুনছে। এমনটি কেন হবে? শিক্ষকদের কাছে সব ছাত্রসংগঠনেরই সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত, সবাই তাঁদের শিক্ষার্থী। কারও প্রতি তাঁরা পক্ষপাত বা বৈষম্য দেখাতে পারেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, ২৮ বছর পর দেশের ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ হিসেবে পরিচিত ডাকসুর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থী তো বটেই, সারা দেশের মানুষের আগ্রহ আছে। ১৯৭৩ সালের পুনরাবৃত্তি নয়, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল হোক, এটাই প্রত্যাশিত।