এখন জোর দিচ্ছি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর

>
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
নসরুল হামিদ ২০১৪-১৮ সালে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবারও তিনি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, সাশ্রয়ী মূল্যসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান।

নসরুল হামিদ ২০১৪–১৮ সালে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবারও তিনি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, সাশ্রয়ী মূল্যসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান।

প্রথম আলো: বিদ্যুৎ বিভাগের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে আপনি মনে করেন?

নসরুল হামিদ: সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এখন বিদ্যুৎ বিভাগের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে রয়েছে পরিবেশ রক্ষা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এগুলো যদি যথাযথভাবে সামাল দিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎব্যবস্থা পশ্চিমের উন্নত দেশের আদলে গড়ে উঠবে। নতুন দিনের এসব চ্যালেঞ্জ নিতে বিদ্যুৎ বিভাগ তৈরি।

প্রথম আলো: অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে কিন্তু দামও বেড়েছে বিদ্যুতের।

নসরুল হামিদ: আমরা ৯২ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। এটি আমাদের এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় অর্জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু এলাকা, দেশের কিছু দ্বীপ অঞ্চল ছাড়া সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আরও দু–তিন বছর সময় লাগবে। বিদ্যুৎ না থাকার চেয়ে বিদ্যুৎ আছে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এতে কিছুটা দাম বেড়েছে কিন্তু সেটি মানুষ মেনে নিয়েছে।

আমরা এখন জোর দিচ্ছি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ওপর। এ জন্য বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে আনতে হবে। এগুলো উৎপাদনে এলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রথম আলো: কিন্তু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একটিও সময়মতো আসতে পারছে না?

নসরুল হামিদ: এটি ঠিক। পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সময়মতো আনা যায়নি। কিন্তু এখন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণের বড় অগ্রগতি রয়েছে। যেমন এ বছরের শেষের দিকেই আসবে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ ছাড়া আগামী তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে আসবে পাবনার রূপপুরের ২৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এগুলো এলে পুরোনো তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।

প্রথম আলো: আপনাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর হাব (এক স্থানে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র) দক্ষিণাঞ্চলে। উত্তরাঞ্চল নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

নসরুল হামিদ: এটা ঠিক, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব হাব দক্ষিণাঞ্চলে। যদিও সিরাজগঞ্জে ১ হাজার মেগাওয়াটের একটি গ্যাসভিত্তিক হাব তৈরি হয়েছে। তবে আমরা উত্তরাঞ্চলের রংপুর-দিনাজপুরে বিদ্যুতের বড় হাব তৈরি করতে চাই। উত্তরাঞ্চলের একটি ভালো দিক হচ্ছে, সেখানে কয়লা আছে। সেখানকার জনগণের মধ্যে কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। এখন অনেক আধুনিক ব্যবস্থা এসেছে। পরিবেশ, মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করে কয়লা উত্তোলন করার বহু উপায় আছে। এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

প্রথম আলো: বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর বেশি নজর দেওয়া হলেও সঞ্চালন খাতের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ হয়নি।

নসরুল হামিদ: প্রথমে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছিলাম। কারণ, তখন সেটিই প্রধান কাজ ছিল। এখন আমরা বিদ্যুৎব্যবস্থার আধুনিকীকরণের ওপর জোর দিচ্ছি। যেমন স্মার্ট প্রিপেইড মিটার, স্মার্ট গ্রিড ইত্যাদি। গোটা ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করা গেলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।

প্রথম আলো: এই সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে আপনারা পরিবেশ ধ্বংস করছেন?

নসরুল হামিদ: আমাদের সরকারই একমাত্র, যারা উন্নয়ন ও পরিবেশ দুটো রক্ষা করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বের সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমরা নির্মাণ করছি। এতে খরচও বেড়ে যাবে। সেটি আবার বিদ্যুতের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু মনে রাখতে বাংলাদেশ অত্যন্ত একটি ছোট দেশ, মানুষ অনেক বেশি। পরিবেশ নষ্ট করে এখানে কিছু করা যাবে না।

প্রথম আলো: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আপনাদের প্রবৃদ্ধি সামান্য।

নসরুল হামিদ: প্রায় ৫২ লাখ পরিবার সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়। এ সংখ্যা পৃথিবীতে সর্বাধিক। বাংলাদেশে জমির মূল্য অনেক বেশি, সে কারণে সৌরবিদ্যুৎ এখানে বড় আকারে করা কঠিন। হিমালয়ের জলবিদ্যুৎ আমদানির চেষ্টা করছি আমরা। গ্রিন এনার্জির ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। সে কারণে কয়লা দিয়েই কিন্তু আমরা সব বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি না। আমরা ভিন্ন ভিন্ন জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছি। যেমন এলএনজি, পরমাণু শক্তি—এগুলো কিন্তু গ্রিন এনার্জি। এ ছাড়া বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের মোট প্রয়োজনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নসরুল হামিদ: আপনাকে ও প্রথম আলো পরিবারকে ধন্যবাদ।