জাহাঙ্গীরনগরে নিয়োগ-বাণিজ্য

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন না হলেও সেই বাণিজ্যের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম। এটি ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করি।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০টি পদে নিয়োগের জন্য ৬০ লাখ টাকার উৎকোচ ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বিদায়ী ও বর্তমান নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষাঙ্গন হলো শিক্ষাদান ও জ্ঞান সৃষ্টির জন্য। সেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ কেন হবে? কেনই-বা বিবদমান ছাত্রসংগঠন বা একই সংগঠনের দুটি গ্রুপ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে?

 ঘটনার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের একাংশ, বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ সংবাদ সম্মেলন করে নিয়োগ-বাণিজ্য ও সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে। লিখিত ভাষ্যে বলা হয়, ছাত্রলীগের নিয়োগ-বাণিজ্য ও একে কেন্দ্র করে অন্তঃকোন্দলের নানা তথ্য উঠে আসে। কোন্দলের জেরে আবাসিক হলগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ঢোকার তথ্যও পাওয়া গেছে। সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের নেতাদের দাবি, নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য হয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তার দায় এড়াতে পারে না।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যে নির্বাচন হয়, তাতে সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ অধিকাংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টি পদ পায়। আর প্রশাসন-সমর্থক শিক্ষকেরা মাত্র ৫টি পদে জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকদের একাংশ প্রশাসনের সঙ্গে থাকলেও অপরাংশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজে যোগ দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর র‍্যাগিংয়ের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার যে দাবি জানিয়েছে, তা অত্যন্ত যৌক্তিক বলে মনে করি। শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঔপনিবেশিক আমলের এই অপসংস্কৃতি বিদায় দিতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্যের বিষয়ে সহ-উপাচার্য নূরুল আলমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে তদন্ত রিপোর্ট বের হোক, এটা আমাদের প্রত্যাশা। তবে সেই তদন্তে যদি প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে না আসে, সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক। অতীতে এ রকম লোক দেখানো অনেক তদন্ত হয়েছে। এবার তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সবার ওপরে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষার্থীদের কল্যাণের স্বার্থেই তদন্তটি সুষ্ঠু হতে হবে।