এই সরকার ব্যবসাবান্ধব: বাণিজ্যমন্ত্রী

>
বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।  ছবি : সাইফুল ইসলাম
বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী। ছবি : সাইফুল ইসলাম
প্রথমবারের মতো বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছেন টিপু মুনশি। মুক্তিযোদ্ধা এই মন্ত্রী একাধারে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। একসময় পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা দিক ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফখরুল ইসলাম

প্রথম আলো: বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন?

টিপু মুনশি: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা, বাংলাদেশে বিদেশিদের বিনিয়োগ ও দেশীয় কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং রপ্তানির জন্য বহির্বিশ্বে নতুন নতুন বাজার খোঁজা—এগুলো হচ্ছে অগ্রাধিকার খাত। আমাদের যেহেতু ভারত, চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলতে হয়, সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছি।

প্রথম আলো: মাঝখানে আফ্রিকায় কিছু রপ্তানি বাজার খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল।

টিপু মুনশি: তা হয়েছিল। যতটুকু জানি কিছুটা সাফল্যও এসেছে। এখন রাশিয়া এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানির জন্য বড় বাজার খোঁজা হচ্ছে। কাজ চলছে। আশা করছি ভালো কিছু সাড়া পাব এবং এই দেশগুলোতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশ তো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। এলডিসি হিসেবে বর্তমানে রপ্তানিতে যে শুল্কসুবিধা পাওয়া যায়, তা কিন্তু পরে পাওয়া যাবে না। এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

টিপু মুনশি: বিশ্ববাজার এখন প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এখনই আমরা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দিকে যাচ্ছি। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ), অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ)—এগুলো করব। আর যেহেতু আমরা আনুষ্ঠানিকভাবেই উন্নয়নশীল দেশ হতে চলেছি, আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে এখন আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এই কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

প্রথম আলো: এফটিএ বা পিটিএর ব্যাপারে বাংলাদেশের এযাবৎকালের অর্জন শূন্যের কোঠায়। শুধু আলাপ–আলোচনাই হয়েছে; কোনো দেশের সঙ্গেই এফটিএ, পিটিএ হয়নি।

টিপু মুনশি: তা মানছি। তবে এখন এগুলো হবে। হবে মানে করতে হবে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়টি অনেক দূর এগোল।

প্রথম আলো: শ্রীলঙ্কা তো ছোট বাজার। এর সঙ্গে এফটিএ, পিটিএ করে লাভ কী? বেশি দরকার তো ইউরোপীয় এবং উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে।

টিপু মুনশি: সে পথেও চেষ্টা করে যাব। ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ব্যাপারে কথা চলছে। আশা করছি এ দফায় আমরা সফল হব। দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার আগে অবশ্য নানা দিক বিশ্লেষণ করে সমীক্ষা করতে হয়।

প্রথম আলো: দীর্ঘ বছর থেকেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মূল সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। আপনি কিছু পরিবর্তন আনতে চান?

টিপু মুনশি: ব্যবসায়ীদের আলাদা করে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তাঁদের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। কারণ, তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেন। তাঁদের স্বার্থ দেখতেই হবে। আপনি যদি বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে ইঙ্গিত করতে চান, তাহলে আমি বলব সিদ্দিকুর রহমান তখন একটা সংকটের সময় পার করছিলেন।

প্রথম আলো: যেমন?

টিপু মুনশি: শ্রম অসন্তোষ, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার বিষয়গুলো তখন ছিল। হুট করে একজন নতুন মানুষের পক্ষে এগুলো দেখাটা একটু কঠিন ছিল। সংকট মোকাবিলায় সিদ্দিকুরের অভিজ্ঞতা ছিল বলেই আমি মনে করি তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। আর এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি অবশ্য নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। দেশের যদি ক্ষতি না হয়, এগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে।

প্রথম আলো: ব্যবসায়ী হয়েও আপনি একজন মন্ত্রী, তা-ও আবার বাণিজ্যমন্ত্রী। এতে স্বার্থের সংঘাত হবে না?

টিপু মুনশি: দেখুন, ব্যবসায়ী আমি ৩৫ বছর আর রাজনীতিবিদ ৫২ বছর। মূলত আমি রাজনীতিবিদ। ১৯৬৬ সালে ছাত্রলীগ করতাম, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ২৪ বছর ছিলাম গুলশান আওয়ামী লীগের সভাপতি। স্বার্থের সংঘাত হবে না। সরকার ব্যবসাবান্ধব। আর আমিও ব্যবসাবান্ধব।

প্রথম আলো: আমদানি নীতি ও রপ্তানি নীতি নামে দুটি আলাদা নীতি থাকলেও দেশে সমন্বিত বাণিজ্যনীতি (কমপ্রিহেনসিভ ট্রেড পলিসি) বলতে কিছু নেই। অথচ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন প্রায়ই।

টিপু মুনশি: নতুন মন্ত্রী হয়ে এসেছি। আমি এটা দেখব। একটু সময় দিতে হবে আমাকে। সমন্বিত বাণিজ্যনীতি করার দরকার থাকলে না করার তো কিছু নেই।

প্রথম আলো: দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কি আপনার মন্ত্রণালয়ে অনুসরণ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন?

টিপু মুনশি: অবশ্যই অনুসরণ করতে পারব। আমার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কোনো সংস্থার ভেতরে দুর্নীতিকে বরদাশত করা হবে না। তবে আপাতত আমার এক নম্বর লক্ষ্য হচ্ছে রপ্তানিকে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়া এবং এটা খুবই সম্ভব।

প্রথম আলো: সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

টিপু মুনশি: আপনাকেও ধন্যবাদ।