বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের ইটভাটার মালিকেরা এই আইনের আদৌ কোনো তোয়াক্কা করেন না। তা না হলে সেখানকার একটি বিদ্যালয়ের পাশে চারটি ইটভাটা গড়ে উঠত না।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০ থেকে ৩০০ গজের মধ্যে চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন ইটভাটার মালিকেরা। তা-ও আবার সব কৃষিজমিতে। এই চারটি ছাড়াও ভোলাকোট ইউনিয়নে আরও সাতটি ইটভাটা রয়েছে। আর গোটা রামগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ২১টি ইটভাটা। গত ১৫ বছরে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে।

এসব ইটভাটার কারণে সেখানকার পরিবেশ এখন মারাত্মক দূষণের শিকার। ইটভাটা থেকে সৃষ্ট ধুলা ও ধোঁয়ার কারণে এলাকার বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। খেতে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। বড় বড় সব গাছ মরে গেছে। এলাকাবাসী বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অনেকবার জানিয়েছেন, কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। মাঝেমধ্যে দু-একটি ভাটার কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সদর্পে চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইটভাটার মালিকেরা না হয় আইন ভেঙেছেন, কেউ আইন ভাঙলে যঁাদের দেখার কথা তাঁরা কী করছেন? তঁারা একদিকে যেমন ইটভাটা গড়ে ওঠার সময় নজর রাখেননি, তেমনি গড়ে ওঠার পরও ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। অভিযোগ আছে, উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ইটভাটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের স্বার্থের সম্পর্ক বা ভাগ-বাঁটোয়ারার ব্যাপার না থাকলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। রামগঞ্জ উপজেলা কর্তৃপক্ষকে এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে হবে।

তবে শুধু রামগঞ্জে নয়, সারা দেশেই এভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে লোকালয় ও কৃষিজমিতে অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, ইট সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম ও অবকাঠামো তৈরির একটি অতিপ্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ইট আমাদের লাগবে কিন্তু তা উৎপাদন করতে হবে নিয়ম মেনে ও পরিবেশসম্মত উপায়ে। ইটভাটা আইনে হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, জিগজ্যাগ ক্লিন ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব ইটভাটা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। তবে এসব ভাটা নির্মাণ যেহেতু বেশ ব্যয়বহুল, তাই এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।

আমাদের ইট যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন পরিবেশ বাঁচানো। পরিবেশ বাঁচানোর জন্য ইটভাটাগুলো যাতে নিয়ম মেনে চলে, তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সব ইটভাটাকে পর্যায়ক্রমে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।