আজ থেকে ১১০ বছর আগে ১৯০৯ সালে বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ঢাকার ওয়ারী এলাকায় বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম ফুলগাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদ এনে রোপণ করেছেন নিজের তৈরি এ উদ্যানে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ উদ্যানের জয় হাউসে বসে এখানকার ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর বিখ্যাত ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি লিখেছিলেন। এখন সেই উদ্যানের দুর্লভ সব গাছ মরে যাচ্ছে পানির অভাবে!
রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বলধা গার্ডেনে পানির সংকট চলছে পাঁচ বছর ধরে, কিন্তু পাঁচ মাস ধরে চলছে তীব্র সংকট। প্রয়োজনের এক-তৃতীয়াংশ পানিও পাচ্ছে না বলধা গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। বাগানের ছোট-বড় চৌবাচ্চাগুলোর পানির স্তর নেমে গেছে। বিশাল পুকুরটি পানিশূন্য। ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানির অভাবে ইতিমধ্যেই লাল গোলাচি, উদয় পদ্ম, অর্কিড, কোকোলোভা গাছসহ বেশ কিছু বিদেশি সুপারিগাছ ও পাতাবাহারগাছ মারা গেছে। অন্য গাছগুলোও মরে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বলধা গার্ডেন কর্তৃপক্ষ এ সমস্যার কথা জানিয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে তিনবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির সংকট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এভাবে ওয়াসা বলধা গার্ডেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। ১৯৮১ সালে দুই পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ওয়াসার প্রতিদিন ১০ হাজার গ্যালন পানি দেওয়ার কথা। আমরা ওয়াসার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করি না।
বলধা গার্ডেন শুধু পুরোনো উদ্যানই নয়, এটি ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবেও দেশে-বিদেশে পরিচিত। এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটা মূল্যবান নিদর্শন। স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি পর্যটক এলে তাঁদের পছন্দের তালিকায় ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনের নামটিও থাকত। এখানে রয়েছে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজার উদ্ভিদ। সরকারের ঘোষিত ৯৩টি হেরিটেজের মধ্যে বলধা গার্ডেন অন্যতম।
এমন একটি ঐতিহ্যবাহী উদ্যান শুধু পানির অভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। বলধা গার্ডেনকে রক্ষা করতেই হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। ওয়াসা কেন পানি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং তারা যাতে বলধা গার্ডেনে অবিলম্বে যথেষ্ট পানি সরবরাহ শুরু করে—সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। পানির সংকট ছাড়াও আরও নানা সমস্যায় আক্রান্ত বলধা গার্ডেন। এটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতারও অভাব রয়েছে। এসব দিকে নজর দেওয়ার জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।