সংঘাতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা

আ ন ম মুনীরুজ্জামান
আ ন ম মুনীরুজ্জামান

নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতীয় বিমানবাহিনীর জঙ্গি বিমান মঙ্গলবার বালাকোটে যে হামলা চালিয়েছে, তা ভারত ও পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ’৯৯-তে কারগিল যুদ্ধের সময়ও দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছিল। ওই সময় ভারতের অবস্থান আক্রমণাত্মক থাকলেও তাদের বিমানবাহিনী তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করেনি। ফলে পাকিস্তানের ওপর ভারতের এ হামলা বড় উদ্বেগ তৈরি করেছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আর সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সামরিক পরিভাষায় ‘এসকালেশন লেডার’ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে উচ্চ মাত্রায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন এ সংঘাতের রেশ দুই দেশের মধ্যে সীমিত থাকবে না। তা ছড়িয়ে পড়বে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য তৈরি করবে বড় ধরনের ঝুঁকি। অতীতে দুই দেশের মধ্যে যেসব যুদ্ধ হয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তানের নতুন এ সংঘাত আমাদের জন্যও উদ্বেগের।

পৃথিবীতে এ মুহূর্তে যেসব দেশের বড় সেনাবাহিনী রয়েছে, সে তালিকায় ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আছে। অধিকন্তু দুই দেশ পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। কাজেই এ দুই দেশের লড়াই-সংঘাত শুধু আঞ্চলিকই নয়, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। এখানে অতিসাবধানতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অতি-উদ্বেগের সঙ্গে গণমাধ্যমের খবরে জেনেছি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ন্যাশনাল কমান্ড কাউন্সিলের সভা ডেকেছেন। আমরা জানি, ন্যাশনাল কমান্ড কাউন্সিল পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যেতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আস্থা স্থাপনের প্রক্রিয়া বা ‘কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার’কে কাজে লাগাতে হয়। বর্তমান অবস্থায় সেটি যে দুই দেশের মধ্যে কাজ করছে না, তা স্পষ্ট। কিন্তু এটাকে কার্যকর রাখতে হবে। যদিও আলোচনার পথ সংকুচিত হয়ে আসছে, সমাধান খুঁজে নিতে হবে আলোচনার টেবিলেই। কাশ্মীরের দাবি নিয়ে দুই দেশের সংঘাত দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা আলোচনা করেই মেটাতে হবে।

দুই দেশের এবারের উত্তেজনায় প্রথমবারের মতো প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা দুই বৈরী প্রতিবেশীর সংঘাতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া ‘ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটিকে’ আন্তর্জাতিক পানি চুক্তির ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে ধরা হয়। অতীতের সংঘাতগুলোতে কখনোই এটিতে হাত পড়েনি। ভারত এবার বলেছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে যে পানি যায়, তার একটা অংশ রেখে দেওয়া হবে। এ নিয়ে পাকিস্তানের কথা হচ্ছে, তাদের পানির হিস্যা কম দেওয়া হলে সেটা তারা মানবে না। কারণ, এতে তাদের শস্য উৎপাদনে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে। অর্থাৎ এবার সশস্ত্র পদক্ষেপের পাশাপাশি সম্পদকে কাজে লাগানো হচ্ছে লড়াইয়ে। বিভিন্ন সময় সম্পদ নিয়ে সংঘাতের প্রসঙ্গটি আলোচনায় এলেও এবার ভারত ও পাকিস্তানের লড়াইয়ে তা বাস্তবে এল।

নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলা নিয়ে দুই দেশ দুই রকম দাবি করছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাদের এ ধরনের পাল্টাপাল্টি দাবি নতুন নয়। কাজেই হামলায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। এবার ভারত যেভাবে আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, তা সাম্প্রতিক অতীতেও ঘটেনি। তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন হোক, এটাই আমাদের কাম্য।