ফেরিঘাটে পশুর হাট

ফেরিঘাট হচ্ছে সেই স্থান, যেখান থেকে যানবাহন ফেরিতে ওঠে এবং যানবাহন নিয়ে ফেরি এসে ভেড়ে। এই ওঠা–নামার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কিছু জট ও বিলম্ব ঘটে। এখন কোনো ফেরিঘাট এলাকায় যদি গবাদিপশুর হাট বসে, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় ৫ ও ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় অনেক দিন ধরে ঠিক এমনটাই হয়ে আসছে। ফলে এই দুটি ফেরিঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন ওঠা–নামা বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই দুই ফেরিঘাট এলাকায় কয়েক বছর ধরে প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার প্রভাবশালী স্থানীয় কিছু ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় গবাদিপশুর অবৈধ হাট বসছে। রাজবাড়ী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুরসহ অনেক এলাকা থেকে করিমন, ভটভটি ও পিকআপে করে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানে শত শত গরু ও ছাগল নিয়ে আসা হয়। ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে মানিকগঞ্জের আরিচা হাটে নেওয়ার আগে চলে বেচাকেনা। আর জায়গার মালিক দাবিদার স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরুপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা, ছাগলপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা আদায় করেন। ঘাটের পাশে গরু-ছাগল, এগুলো বহনকারী গাড়ি, ব্যাপারী ও খরিদ্দারদের সমাগম থাকায় গাড়ির চালক ও যাত্রীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অবৈধ হাটের কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যানবাহনগুলোকে ঘাট এলাকায় এসে ফেরিতে ওঠা ও নামার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে দেখা দেয় যানজট।

 ফেরিঘাট এলাকায় এ ধরনের হাটের কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। ফেরিঘাটের যাবতীয় সমস্যা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ বিআইডব্লিউটিএর। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, তাদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা অবৈধ এসব হাটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে এই সন্দেহ মনে জাগা খুবই স্বাভাবিক যে তাদের এখানে কোনো স্বার্থ বা ভাগ-বাঁটোয়ারার সম্পর্ক রয়েছে।

দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটগুলোতে সারা বছরই কোনো না কোনো সমস্যা লেগে থাকে। বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট, শীতে ঘন কুয়াশা, কখনো অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, আবার কখনো থাকে ফেরির স্বল্পতা। তার ওপর গবাদিপশুর এ অবৈধ হাট গোদের ওপর বিষফোড়ার মতোই।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে প্রতিদিন ছোট-বড় চার-পাঁচ হাজার যানবাহন নদী পারাপার হয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন সরকারের প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। জাতীয় স্বার্থেই এখানকার ঘাটগুলোকে সমস্যামুক্ত রাখতে হবে।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার অবৈধ গবাদিপশুর হাট উচ্ছেদ ও কোনোভাবেই যেন তা বসতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহন ওঠা–নামার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা ও বিড়ম্বনা দূর করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।