দখলে বিলীন হামকুড়া

মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ ও সীমাহীন লোভ একটি নদীকে কীভাবে আস্তে আস্তে মেরে ফেলে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে হামকুড়া নদী। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলা এই নদীর অস্তিত্ব এখন বলতে গেলে নেই। সেখানে এখন অসংখ্য ছোট-বড় স্থাপনা। প্রশ্ন হচ্ছে এসব দেখার কি কেউ নেই?

গতকাল ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে প্রথম আলোয় একসময়ের প্রমত্তা নদী হিসেবে পরিচিত হামকুড়ার অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার খবরটি প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল ‘হামকুড়ার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে শুধুই একটি সেতু’।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দুই যুগ আগেও প্রমত্তা হামকুড়া নদী দিয়ে চলত ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ। এটি একটি সংযোগ রক্ষাকারী নদী। উত্তরে শ্রীনদী থেকে উৎপত্তি হয়ে হামকুড়া বিস্তীর্ণ বিল ডাকাতিয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণে ভদ্রায় মিশেছে। গত শতকের আশির দশকের শুরুতে বিল ডাকাতিয়া অঞ্চল জলাবদ্ধতায় কবলিত হলে ওই অঞ্চলের জনগণ বিল ডাকাতিয়ার আমভিটাসহ চারটি স্থানে বাঁধ কেটে দেয়। এতে বিলের সঙ্গে তৈরি হয় নদীর সরাসরি সংযোগ। ভদ্রার জোয়ারের পানি হামকুড়া হয়ে বিল ডাকাতিয়ায় উপচে পড়ে।

বছর দুয়েক পর খুলনা-যশোর ড্রেনেজ রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাঁধের কাটা অংশ আটকে দিলে হামকুড়া মাস তিনেকের মধ্যেই শুকিয়ে যায়। সেই থেকে নদীটির ওপর নির্মাণ শুরু হয় ছোট-বড় নানা স্থাপনা। যে যাঁর মতো ভরাট হওয়া নদীর বুক দখল করে রেখেছেন। ভবিষ্যতে নদীটি খনন করে আবার স্রোতস্বিনী করার জন্য অবশিষ্ট জায়গাও এখন আর ফাঁকা নেই। নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতু কেবল জানান দিচ্ছে যে এখানে কোনো সময় একটি নদী ছিল।

শুধু হামকুড়া নয়, এভাবে দেশের আরও বহু নদ-নদী এভাবে বিলীন হয়েছে এবং হচ্ছে। নদীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ—এখন এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই। এ দেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবন–জীবিকা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য—সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। হাজার বছর ধরেই এসব নদ-নদী আমাদের কৃষি, প্রকৃতি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। নদী রক্ষা না করলে তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না।

এ জন্য নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। হামকুড়া নদীসহ দেশের সব নদ-নদী বাঁচাতে সরকারকে খুব দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।