মেহগনির তেল থেকে কীটনাশক

রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা যতটা জানেন, সাধারণ কৃষকেরা ততটা উপলব্ধি করতে পারেন না। কৃষকেরা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকেন। সবার আগে তাঁদের লক্ষ্য থাকে যথাসম্ভব কম বিনিয়োগ করে বেশি ফসল উৎপাদন। তাঁরা তাৎক্ষণিক ‘সুফল’ পেতে ফসলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন।

ফসলে কীটনাশকের প্রভাব থেকে যায়। এই ফসল খাবার হিসেবে গ্রহণের দীর্ঘমেয়াদি ফল খুব খারাপ। মানবদেহের কিডনি ও লিভারে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। দুঃখের বিষয়, কীটনাশক বিক্রির দোকানগুলো কার্যত হাতুড়ে চিকিৎসকের চেম্বারে পরিণত হয়েছে। দোকানিরা চাষিদের যেমন ইচ্ছে পরিমাণে কড়া কড়া ওষুধ দিতে বলছেন। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে যেমন একসময়ে অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হয় না, তেমনি অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আর আগের মতো কাজ হচ্ছে না ঠিক কীটনাশকেও। বেশি মাত্রার কীটনাশক ব্যবহারে নতুন প্রজাতির পোকার আক্রমণও বাড়ছে।

বিষয়টি অনুধাবন করে কৃষি কর্মকর্তারা বহুদিন ধরেই কৃষকদের বিকল্প পথ বাতলে দিচ্ছেন। তাঁরা কীটপতঙ্গ দমনের জন্য ‘সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা’র কথা বলে আসছেন। ‘আলোক ফাঁদ’, গাছের ডাল পুঁতে (পার্চিং পদ্ধতি) পাখিদের বসার আশ্রয়স্থল করাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পোকা দমন কৃষকদের শেখাচ্ছেন। একই সঙ্গে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে তাঁরা ব্যবহার করতে বলছেন ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো কম্পোস্ট) সার।

 তবে কীটপতঙ্গ দমনে এবার খুলনার কৃষি কর্মকর্তারা যে সমাধান দিয়েছেন, তা বেশ ফলপ্রসূ হচ্ছে। তাঁদের পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা মেহগনির বিচি পিষে তার ভেতরকার তৈলাক্ত নির্যাস বের করে আনছেন। সেই নির্যাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে তা রাসায়নিক কীটনাশকের মতোই ধানখেতে স্প্রে করছেন। এতে পোকামাকড় তো দূর হচ্ছেই, ইঁদুরও খেতের কাছে ভিড়তে পারছে না।

রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হলে পাখিরা মৃত অথবা ওষুধের প্রভাবে নেতিয়ে পড়া পোকা খেতে চায় না। পাখিরা পোকা খেতে না পারায় খাদ্য চেইনে বিপত্তি বাধছে। জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার সময় যিনি ওষুধ ছিটান, তাঁর নাক-মুখে বিষ ঢুকে যায়। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। মেহগনির তেল ব্যবহারে এ সমস্যা নেই। সবচেয়ে বড় কথা এবং কৃষকদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর হলো, রাসায়নিক কীটনাশকের চেয়ে এর খরচ অনেক কম।

কৃষি কর্মকর্তারা যেহেতু নিশ্চিত হয়েছেন, মেহগনির তেল শতভাগ অরগানিক এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, সেহেতু এর ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার, দেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়ে গেছে। আর সেই ঘাটতি পূরণ করতে হলে জৈব কীটনাশক ছাড়া উপায় নেই।