পদ্মায় বালুর নৌকায় চাঁদাবাজি

এ এক আজব ব্যবস্থা। বছরের পর বছর চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদা না দিলে নিরীহ মানুষকে মারধর করা হচ্ছে। প্রাণভয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারছে না। আর প্রশাসন বলছে ‘অভিযোগ পাইনি’। সুতরাং ঘটনা নির্বিঘ্নে ঘটে চলেছে।

প্রশাসনের কর্তারা ‘অভিযোগ পাওয়া যায়নি’ বললে তা তথ্যের অভাব নির্দেশ করে না। তা দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবোধের অভাবকেই বোঝায়। কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে তা জানাই তাঁদের কাজ। সবার চোখের সামনে যে দুর্নীতি, অপরাধ, অপব্যয় ঘটছে, তা নিয়ে কখনো শোরগোল উঠলেই কর্মকর্তারা বাঁধা গৎটি বাজিয়ে দেন, ‘অভিযোগ তো আসেনি’। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রকারান্তরে বলে দেন, লিখিত অভিযোগ না পাওয়া গেলে তাঁদের করণীয় কিছু নেই। নিজেদের কাজের নিয়মিত মূল্যায়ন এবং তৎসম্পর্কিত অভাব-অভিযোগের বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা যে সরকারি কাজেরই অঙ্গ, তা তাঁরা ভুলে যান। পরিতাপের বিষয়, জনপ্রতিনিধিরাও আজকাল ‘অভিযোগ পাইনি’ বলা শুরু করেছেন। লেখা বাহুল্য, এ ক্ষেত্রে তাঁদের মোক্ষম সমস্যা মোকাবিলা নয়, উড়িয়ে দেওয়া।

প্রথম আলোয় গতকাল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ওপরে উল্লেখ করা ঠিক এই চিত্রই পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে বালুবোঝাই শতাধিক নৌকা থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তীরবর্তী প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই কায়দায় চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। নদীর মধ্যে ছোট ছোট নৌকায় চাঁদা আদায়কারীরা অবস্থান করে। ওই এলাকা পার হওয়ার সময় বালুবোঝাই নৌকা থেকে তারা নৌকাপ্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্র থাকে। চাঁদা না দিলে মাঝিদের বেদম মারধর করা হয়। মাঝিরা প্রাণভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে পারেন না।

এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আজও পাইনি। এটা যদি হয়ে থাকে, তবে খুবই গুরুতর অপরাধ। অভিযোগ পেলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে জানানো হবে।’ দেশের বাস্তব অবস্থার নিরিখে জনমনে এই ধারণা আসতে বাধ্য যে অভিযোগ নিয়ে ইউএনওর কাছে কারও যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই পুলিশের ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণতর। ফলে অবস্থাটা বদলাবে, সে আশা করা শক্ত।

নদীর চর থেকে বালু কেটে আনার সময় চাঁদাবাজদের হাতে ব্যবসায়ীদের যে টাকা তুলে দিতে হয়, তা তাঁদের বেশি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিতে হয়। এতে বালুর দর বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষকে বেশি টাকা দিয়ে তা কিনতে হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সেটি করতে হবে প্রধানত প্রশাসনকে। ‘অভিযোগ পাইনি’ বলে দায় এড়ানো যাবে না।