টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬, নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন: বাস্তবতা ও করণীয়

গত ২৭ মার্চ প্রথম আলোর আয়োজনে ওয়াটারএইড ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় ‘টেকসই উন্নয়ন ও অভীষ্ট ৬, নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

যাঁরা অংশ নিলেন

শামসুল আলম: সদস্য (সিনিয়র সচিব), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

হোসেন জিল্লুর রহমান: নির্বাহী চেয়ারম্যান, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)

তাকসিম এ খান: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা ওয়াসা

মুজিবর রহমান: অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট

মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ: সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)

মো. শফিকুল ইসলাম: সাবেক অতিরিক্ত সচিব

মো. মনিরুল আলম: ওয়াশ স্পেশালিস্ট, ইউনিসেফ

সৈয়দা আফজালুন নেসা: ম্যানেজার, করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি, এইচএসবিসি

মো. শরিফুল আলম: ওয়াশ সেক্টর স্পেশালিস্ট

দিবালোক সিংহ: নির্বাহী পরিচালক, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ডিএসকে)

মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: পরিচালক, রিসার্চ, প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং, ডরপ ও সিএসও স্টিয়ারিং কমিটি; সদস্য, দক্ষিণ এশিয়া, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল

খাদিজা আহমেদ: প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়াটার ডট অর্গ

মো. লিয়াকত আলী: ডিরেক্টর, প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ

মো. সাইফুর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ

■ নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনকে স্বাধীন সেক্টর করতে হবে

■ স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজির বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি

■ নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ ওয়াশ চাহিদা বিবেচনায় এনে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা দরকার

■ এসডিজি ৬ অর্জনে ওয়াশ খাতে অর্থায়ন ঘাটতি কমিয়ে আনতে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিনিয়োগের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে

■ জাতীয় সংসদে এসডিজির অগ্রগতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করে গুণ ও পরিমাণগত মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করা প্রয়োজন

■ প্রতিটি স্কুলে ছেলেমেয়েদের আলাদা টয়লেট করতে হবে

■ নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের গুণগত মানের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ (এসডিজি-৬)–এ সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ।

এসডিজি–৬–এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে দেশের সবার জন্য সুপেয় নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জনগণের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য এটা জরুরি। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে এখন আলোচনা করবেন হোসেন জিল্লুর রহমান।

হোসেন জিল্লুর রহমান
নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থায় বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় এসেছে, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগেই আমাদের এ অর্জন।
আগে মানুষ পুকুর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করত। এখন অধিকাংশ মানুষ নলকূপ থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ শতাংশ সফল হয়েছি। এরপর এল আর্সেনিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানেও আমরা কাজ শুরু করেছি।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এমজিডি) ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনেও আমাদের অনেক বেশি উদ্যমী হতে হবে। আমাদের এডিপি ও জিডিপি বেড়েছে। কিন্তু ওয়াশ খাতে সেভাবে বরাদ্দ বাড়েনি। এসডিজির একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হলো ‘ফর অল’। কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। প্রত্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চল, চর, হাওর, পাহাড়ি এলাকা, শহরের বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। পিছিয়ে পড়া সবাইকে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে সফলতা অর্জন সম্ভব হবে না। শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের মতো সেবা দিলে হবে না। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সচেতনতাও সৃষ্টি করা জরুরি। ১ হাজার ১০০ বিলিয়ন টাকা লাগবে এসডিজি অর্জন করতে। এ জন্য সময় আছে মাত্র ১১ বছর।

মো. সাইফুর রহমান
মো. সাইফুর রহমান

মো. সাইফুর রহমান
নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। তবে গুণগত মানের প্রশ্নে আমরা পিছিয়ে আছি। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের গুণ ও পরিমাণগত মান নিয়ে কাজ করতে হবে।
শহর এলাকায় পানির অন্যতম উৎস হলো নলকূপ। আগে আমরা স্বল্পসংখ্যক নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করতে পারতাম। এখন নতুন প্রকল্পের আওতায় বছরে প্রায় এক লাখ নতুন পানির উৎস স্থাপন করতে পারছি। এসব উৎস হচ্ছে নিরাপদ। তবে এটাই শেষ কথা নয়। এখনো ৪২ শতাংশ বাসাবাড়ির পানিতে রোগজীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার পরিমাণ অনেক বেশি।
দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ এখনো আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য মানসম্পন্ন নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যটি সহজ নয়। তাই কঠিন এ লক্ষ্য অর্জনে এ খাতের দক্ষতা বাড়াতে হবে। লোকবল ও সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরেরও দুর্বলতা রয়েছে। জনশক্তির যথেষ্ট স্বল্পতা আছে। যা অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করতে হবে।
নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনকে একটি পৃথক খাত হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি। এটা এখনো একটি উপখাত হিসেবে কাজ করছে। স্বাধীন খাত হিসেবে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনকে বের করে না আনতে পারলে এই সমস্যাগুলো দূর হবে না। তবে আমরা আশাবাদী। সবাই সহযোগিতা করলে আমরা এটা করতে পারব।

মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান

 মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান
‘স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল’ একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম। ২০০টি দেশি ও বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে যুক্ত আছে। আমরা মনে করি, দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ এলাকা এবং শহরের বস্তি ও নিম্ন আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ অর্জনে বাজেটে পৃথক বরাদ্দ রাখতে হবে। কারণ, এমডিজিতে এ বিষয়ক আলাদা কোনো অভীষ্ট ছিল না। এসডিজিতে এখন আলাদা অভীষ্ট পাওয়া গেছে। নতুন অভীষ্টের আলোকে বাজেটে পৃথক বরাদ্দের বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
নারী, শিশু, বয়স্ক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ প্রয়োজন বিবেচনায় এনে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। এসডিজিতে উল্লেখ করা গুণগত মানসম্পন্ন নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করার জন্যই এটা জরুরি।

মুজিবর রহমান
মুজিবর রহমান

মুজিবর রহমান
এসডিজি ৬-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে স্যানিটেশন বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগের বিষয়টি বন্ধ হয়েছে। পয়োবর্জ্য অপসারণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে না পারলে পরিবেশদূষণ ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাবে।
হিসাবমতে পাঁচ হাজার লিটার বর্জ্য পরিবেশে ছড়িয়ে থাকলে তা পাঁচ হাজার মানুষের খোলা স্থানে মলত্যাগের সমান হবে। কাজেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুবই জরুরি। খোলা স্থানে মলত্যাগ বন্ধ করার মাধ্যমে আমরা নিরাপদ স্যানিটেশনের একটি অংশমাত্র সম্পন্ন করতে পেরেছি।
গ্রামাঞ্চলে মাত্র ৩২ শতাংশ পয়োবর্জ্য নিরাপদে অপসারণ করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলের কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই। এটা নির্দেশ করে জাতীয়ভাবে আমরা এ জায়গাটিতে পিছিয়ে আছি।
দেশের স্যানিটেশন–ব্যবস্থা সুয়ারেজের ওপর নির্ভরশীল নয়। ঢাকার কিছু অংশে সুয়ারেজের ব্যবস্থা থাকলেও সেটা পরিপূর্ণ নয়। যার অধিকাংশই নদী বা খালের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নদী ও খালকে দূষণ করছে। আশার কথা হলো, এ দূষণরোধে সরকার কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশে ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৯টি পৌরসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে পয়োবর্জ্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা এখন পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা (এফএসএম) সম্পর্কে জানেন।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে ১০টি পৌরসভায় এফএসএম (মল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) নিয়ে কাজ হচ্ছে। ১১৫টি পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এফএসএমের কাজ শুরু হবে। আরও ২৬টি পৌরসভা আছে, যেগুলোতে এফএসএমের কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুত আছে। কিন্তু এখনো দেশের ১৮৪টি পৌরসভা আছে, যেগুলো এফএসএমের কাজ শুরুর জন্য এখনো প্রস্তুত নয়। লোকবল, অর্থ এবং জায়গার অভাবই এর মূল কারণ।

তাকসিম এ খান
তাকসিম এ খান

তাকসিম এ খান
সবার জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকা ওয়াসা ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল, ঢাকা ওয়াসার সম্পূর্ণ ওয়াটার সেক্টরকে পুনর্গঠন করা।
ঢাকা অনেক বড় একটা অঞ্চল। শুরুতে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করেছি। পরবর্তী সময়ে এটা এসডিজির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আমরা বর্তমানে কাজ করছি। তবে এসডিজি অর্জনে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগের দরকার।
ঢাকা শহরে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পানি উত্তোলন প্রক্রিয়া ব্যবহার করছিলাম। এখনো করি। কিন্তু পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই ওখান থেকে বের হয়ে আমরা সারফেস ওয়াটার (ভূমির উপরিভাগের পানি) ব্যবহারের বিষয়টি নজরে আনলাম। এ ক্ষেত্রেও নতুন প্রযুক্তি ও বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার।
বর্তমানে আমরা ৭৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি ও ২৫ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করছি। আমাদের পরিকল্পনা হলো ২০২১ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি ও ৭৫ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করা। এটা পরিবেশের জন্য টেকসই হবে।
ঢাকায় ১৫-২০ শতাংশ মানুষ বস্তি এলাকা বা নিম্ন আয়ের অঞ্চলে বসবাস করে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এরা বৈধ পানি আওতায় ছিল না। বাংলাদেশ সরকার এদের বৈধভাবে পানি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে এর মানে এই নয় যে আমরা বস্তির বৈধতা দিচ্ছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য সবাইকে পানি দেওয়া। এখন পর্যন্ত আমরা ৭০ ভাগ বস্তিতে বৈধ পানি সরবরাহ করতে সফল হয়েছি। ২০১৯ সালের মধ্যে সব বস্তিকে বৈধ পানির সংযোগের আওতায় আনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

বর্তমানে আমাদের চলমান সারফেস ওয়াটার (ভূমির উপরিভাগের পানি) ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের প্রায় সব কটির কাজ শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে। আমাদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল পদ্মা যশোর মেগা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। সেটা সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করছি, ২০২১ বা ২০২২ সালের মধ্যে আমরা সারফেস ওয়াটারের ওপর নির্ভরশীল হতে পারব।

আমাদের পাইপলাইন সুয়ারেজ বর্তমানে মাত্র ২০ শতাংশ আছে। বাকিটা অনসাইট স্যানিটেশন।

২০১০ সালে আমাদের মাস্টারপ্ল্যান ছিল পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে। ঢাকা মহানগরকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে সম্পূর্ণ এলাকাকে পাইপলাইন সুয়ারেজে আনতে চাচ্ছি আমরা। মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ থাকলেও আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা শহর সম্পূর্ণ পাইপলাইন সুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে।

এ ছাড়া নদীদূষণ বন্ধ করতে সরকারের একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আমরা একটি মাস্টারপ্ল্যান করেছি। পদ্মা ও মেঘনা নদী এর আওতায় আনা হয়েছে। আমরা দূষণের উৎস খুঁজে বের করছি।

 

সৈয়দা আফজালুন নেসা
সৈয়দা আফজালুন নেসা

সৈয়দা আফজালুন নেসা
এইচএসবিসির ওয়াটার কর্মসূচি আছে। গত আট বছর ধরে আমরা ১১টি জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের এ কর্মসূচির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সাত লাখের বেশি মানুষকে পানি ও স্যানিটেশন সেবা দিতে পেরেছি। এভাবে এসডিজি অর্জনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার।
টেকসই সাপ্লাই চেইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নিশ্চিত করা গেলেই উন্নয়ন সম্ভব। আমরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছি। ব্যাংক হিসেবে ওয়াশ কর্মসূচিতে আমাদের অনেক মনোযোগ আছে। ওয়াটারএইডসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে আমাদের কাজ আছে।
নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের উন্নয়নে সরকার অনেক কাজ করছে। তবে এ খাতে বেসরকারি সংস্থাগুলোরও একটা ভূমিকা থাকা দরকার।
সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ ছাড়া এসডিজি ৬–এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

মো. শরিফুল আলম
মো. শরিফুল আলম

মো. শরিফুল আলম
কাজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তথ্য ঘাটতি আমাদের এক অন্যতম সমস্যা। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের তথ্য ঘাটতি আছে। বিশেষ করে শারীরিকভাবে অক্ষম, বয়স্ক ও আর্সেনিক আক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
সম্প্রতি একটি গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল। গবেষণার ১১টি দিকনির্দেশক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় খোঁজ নিয়ে জেনেছি এসব বিষয়ে কোনো প্রকার তদারক করা হয়নি।
ওয়াশ (ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন) খাতের প্রাথমিক অনুমোদন আছে। ২০১০-১১ সালে ওয়াটার রেগুলেটরি কমিশন করারও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। সে সময় ওয়াসা কর্তৃপক্ষগুলো রেগুলেটরি কমিশনের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছিল। তবে এখনো বিষয়টি আলোর মুখ দেখেনি।
ডিপিএইচই (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর) নিজে সার্ভিস প্রোভাইডার, আবার নিজেই রেগুলেটর। যে সাপ্লাই দেয়, তার পক্ষে নিজের কাজের পর্যবেক্ষণ করা দুরূহ।
ডিপিএইচই বা ওয়াসার পানি কতটা বিশুদ্ধ, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সনদ নেই। ওয়াটার সেফটি প্ল্যানের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি না।
এখন সময় এসেছে ওয়াশকে একটি আলাদা খাত হিসেবে ঘোষণা করার। এ খাতের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ রাখতে পারলে আমরা এরা অগ্রগতিও জানতে পারব।
আমরা ইনপুট বেজ তথ্য সংগ্রহ করি। আউটপুট বেজ তথ্য সংগ্রহেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

দিবালক সিংহ
দিবালক সিংহ

দিবালোক সিংহ
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ বাস্তবায়নে একটি অন্যতম সমস্যা হলো নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করা। এসডিজির স্লোগানটা খুব আকর্ষণীয় ‘কাউকেই পেছনে ফেলে রাখা যাবে না’। কিন্তু বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে।
এক তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ শতাংশ শিশুর শরীরে সব সময় ইনফেকশন থাকে। এদের জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন–সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে এ অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
‘ওয়াটার অ্যাক্ট ২০১৩’-এর বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)। এর সক্ষমতা এবং ওয়াটার অ্যাক্ট বাস্তবায়নের পরিধির মধ্যে কোনো মিল নেই। প্রাইভেট সেক্টরে যারা আছে, তারা ইচ্ছামতো ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নিচ্ছে। এতে করে পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো ওয়াটার অ্যাক্টে আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করবে কে? কিন্তু ওয়ারপো ছোট একটি সংগঠন। তার পক্ষে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না।
একটা জরিপ করে দেখা উচিত কারা এখনো সেবা থেকে বঞ্চিত আছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে কি না, সেটিও দেখার বিষয়। সাধারণ মানুষের মতামত বিবেচনায় নিয়েই আমাদের সামনে এগোতে হবে। এ জন্য অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমে গুরুত্বারোপ করতে হবে। জাতীয় সংসদে এসডিজি নিয়ে জোরালো আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। কাজেই এর অগ্রগতির বিষয়গুলো সংসদে আলোচনা হলে নীতিনির্ধারকেরা বিষয়গুলো নিয়ে কী ভাবছেন, সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের জানার সুযোগ তৈরি হবে।

খাদিজা আহমেদ
খাদিজা আহমেদ

খাদিজা আহমেদ
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি ৬-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে ওয়াশ খাতের জন্য আলাদা বাজেট করতে হবে। সরকারি নীতিমালায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। যারা পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য ওয়াশ সেবা নিশ্চিত করতেই বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরি। সবাই মিলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ না করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন খুব কষ্টকর হবে।
সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাসমূহ এ কাজে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে। তবে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, কাজ করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে সামনে থেকে।
গ্রামগঞ্জে ঘুরে দেখেছি, গ্রামের অনেক মানুষের নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু তাদের সামর্থ্য নেই। সামর্থ্যহীন এসব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছানোর জন্য পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

মো. শফিকুল ইসলাম
মো. শফিকুল ইসলাম

মো. শফিকুল ইসলাম
এসডিজি বাস্তবায়নে সঠিক তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ২০২১ সালে দেশে আদমশুমারি হতে যাচ্ছে। এটা ১০ বছর পরপর হয়। আদমশুমারিতে প্রতিটি থানার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আমাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। এসডিজির আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়নে কোনো ধরনের তথ্য–উপাত্তের ঘাটতি থাকলে এ সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আদমশুমারি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আমাদের উচিত এসডিজির জন্য যেসব তথ্য দরকার, সেগুলো যেন সংগ্রহ করা যায়, সে বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
শেয়ারড ল্যাট্রিনের বিষয়টি বর্তমানে আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এসডিজির ইন্ডিকেটর অনুসারে শেয়ারড ল্যাট্রিনকে নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। দেশে প্রকৃত অর্থে কী পরিমাণ শেয়ারড ল্যাট্রিন আছে, তার তথ্য আদমশুমারির প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে বের করা সম্ভব। আদমশুমারি জরিপের বড়–ছোট দুই ধরনের প্রশ্নপত্রের মাধ্যমেই নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সম্পর্কিত অনেক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের কাছে এসডিজি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। এ দেশে শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এসডিজি বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ের সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মো. মনিরুল আলম
মো. মনিরুল আলম

মো. মনিরুল আলম
এমডিজি থেকে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও বাস্তবায়ন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একটি গ্রামে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য কতটা নলকূপ দেওয়া হলো, এটা হলো এমডিজি। আর নলকূপের পানি বিশুদ্ধ কি না, তা থেকে পানি সংগ্রহে কতটা সময় লাগছে, সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষটি নলকূপ থেকে পানি পাচ্ছে কি না—এসব গুণগত মান অর্জনের বিষয়গুলো হলো এসডিজি।
রোগমুক্ত থাকার জন্য মানুষ নলকূপের পানি খাবে। কিন্তু সে পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে সে রোগে ভুগবে। একইভাবে টয়লেটের ব্যবহার নিরাপদ না হলে কোনো লাভ হবে না। অর্থাৎ গুণ ও পরিমাণগত মান নিশ্চিত করাই হলো এসডিজির লক্ষ্য।
ঢাকা শহরে বস্তিবাসীদের অনেকে সমস্যা মনে করেন। অথচ তারা আমাদের অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। কড়াইল বস্তিতেই প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস করে। সেখানে পয়োনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বস্তির পানির চাহিদা পূরণের জন্যই একটি আলাদা মিনি ওয়াসা দরকার। এ জন্য পিছিয়ে পড়া এ মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে নয় বরং তাদের সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।

মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ
মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ

মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ
ওয়াশ বাজেটের বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সময় আমরা দেখেছি, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে না। এসডিজির আলোকে বাজেটে বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। তাই এসডিজির গুরুত্ব বোঝা দরকার।
বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। ওয়াশ খাতের উন্নয়নে সরকার সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান তৈরি করেছিল। ২০১১-২০১৫ মেয়াদি বড় এ পরিকল্পনার অগ্রগতি কতটুকু, সে বিষয়ে আমাদের হাতে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। এগুলো খতিয়ে দেখতে না পারলে আমরা সামনে এগোতে পারব না।
আর একটি বড় সমস্যা হলো এসডিজির অগ্রগতি পরিমাপে এখন পর্যন্ত সর্বজনগৃহীত কোনা উপায় আমরা বের করতে পারিনি। সঠিক তথ্য-উপাত্তেরও ঘাটতি রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোনো তথ্যের ওপর নির্ভর করছি। সঠিক ও সময়োপযোগী তথ্য পেতে বিবিএসকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।

মো. লিয়াকত আলী
মো. লিয়াকত আলী

মো. লিয়াকত আলী
এসডিজিতে গুণগত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় এমডিজির মতো এসডিজি অর্জন সহজ হবে না। এসডিজির নির্দেশকগুলো এমডিজির তুলনায় অনেক কঠিন। এসডিজি অর্জনে অনেক বেশি অর্থ ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে হবে। গুণগত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে এসডিজি অর্জনে পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঠিক তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার জরুরি। এসডিজির বিভিন্ন নির্দেশক ও মানদণ্ড অর্জনে বর্তমান অবস্থার প্রকৃত চিত্র ব্যবহার করতে না পারলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতে পরবর্তীকালে অনেক সমস্যা হবে।
২০১৪ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের মাধ্যমে ওয়াটারএইড এবং আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় হাইজিনের বেজ লাইন জরিপ করা হয়েছিল। এটি এ অঞ্চলের প্রথম হাইজিনের বেজ লাইন জরিপ। ২০১৮ সালে জরিপটি পুনরায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে করা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই এর রিপোর্ট বের হবে। হাইজিন–বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়নে এ রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগানো যেতে পারে।

শামসুল আলম
শামসুল আলম

শামসুল আলম
সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ, ভুটানে ১০০ শতাংশ, ভারতে ৯৪ শতাংশ, নেপালে ৯২ শতাংশ ও মালদ্বীপে ৯৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি ব্যবহার করছে। নিরাপদ পানির ক্ষেত্রে আমাদের সেবার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। এসডিজিতে নিরাপদ স্যানিটেশন বলতে প্রতিটি পরিবারে আলাদা টয়লেট থাকার কথা বলা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, পয়োবর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা কঠিন। শেয়ার করা এ টয়লেটগুলো তাই যথাযথ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পানির উৎস পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। জলাশয়গুলোকে বাঁচিয়ে রাখাও জরুরি। নদীকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্তমান সরকার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। নদী-খাল পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। ভূ–উপরিস্থ পানি ব্যবহারে জোর দিতে কয়েক হাজার পুকুর খনন ও পুনঃখনন করছি। প্রতিটি মৌজায় একটি নিরাপদ পানি সংগ্রহের পুকুর থাকবে—এমন নীতি গ্রহণ করছি আমরা।
এসডিজি ৬ অর্জনের সঙ্গে জড়িত এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। ভবিষ্যতে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে অর্থায়ন ঘাটতি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আব্দুল কাইয়ুম
সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করা জরুরি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৬ নম্বর লক্ষ্যে এটা গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।
আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।