রমাদানে দোয়া, দরুদ ও ছায়্যিদুল ইস্তিগফার

রমাদান মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। বিশেষত রমাদানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমার। রমাদান মাসের আমলসমূহের মধ্যে তাওবা ও ইস্তিগফার গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো, যারা রমাদান পেল কিন্তু নিজেদের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারল না।’

তাওবা, ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। রমাদান মাসে যে আমলগুলো বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হলো জাহান্নাম বা দোজখ থেকে পরিত্রাণ চাওয়া, জান্নাত বা বেহেশত কামনা করা, ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করা, দরুদ শরিফ পাঠ করা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করতে থাকা।

ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা স্বতন্ত্র একটি ইবাদত, যা আল্লাহ তাআলার খুবই পছন্দনীয়। তাই সব নবী–রাসুল নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও বেশি বেশি ইস্তিগফার করতেন। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবীদের ইমাম ও রাসুলদের সরদার হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকেও ইস্তিগফার করার নির্দেশ দিলেন। (আল–কোরআন, সুরা-১১০ নাছর, আয়াত: ৩)।

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি দৈনিক সত্তরবার আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করি।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৩০৭)।

পবিত্র কোরআনে ইস্তিগফারের বহু নির্দেশনা রয়েছে। যেমন ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ১০)।

‘(হে রাসুল সা.!) আপনি বলুন, হে আমার (আল্লাহর) বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা-৩৯ জুমার, আয়াত: ৫৩)।

ইস্তিগফার দ্বারা আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভ করা যায়। ইস্তিগফারের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন করিমে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি সুষম বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তোমাদের সম্পদে প্রাচুর্য ও সন্তানে বরকত দেবেন এবং তোমাদের জন্য বাগবাগিচা পানির ফোয়ারায় শোভিত করবেন।’ (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ১১-১২)।

আমরা নিজেরা তাওবা–ইস্তিগফার করব, অনুরূপ সব মোমিন নর-নারীর জন্য ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করব। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মোমিন নর-নারীর বিনিময়ে আমাদের একটি করে নেকি প্রদান করবেন। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা ৩৫২, হাদিস: ১৭৫৯৮)।

যে ব্যক্তি সর্বদা ইস্তিগফার করতে থাকে, আল্লাহ তাআলা তাকে সংকট থেকে মুক্তির পথ করে দেন। যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে প্রশস্ততা ও প্রশান্তি দান
করেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দান করেন। (আবু দাউদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ৪৭৫, হাদিস: ১৫১৮)।

ইস্তিগফারের শ্রেষ্ঠ দোয়াকে ছায়্যিদুল ইস্তিগফার বলা হয়। শাঈখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন: ছায়্যিদুল ইস্তিগফার দ্বারা পাপের শাস্তি হতে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। ছায়্যিদুল ইস্তিগফার হলো অন্য সব ইস্তিগফারের মধ্যে শব্দে ও অর্থে সেরা ও শ্রেষ্ঠ, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) বারবার পড়তেন।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়া (র.) বলেন, এই দোয়াটি সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ, দ্রুত কার্যকর, এর বিষয়ের ব্যাপকতা অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন তার প্রতি আল্লাহর নেয়ামতরাজির কীর্তন করে এবং স্বীয় অপরাধ স্বীকার করে, এটাই তার আনুগত্যের পূর্ণতারূপে গৃহীত হয় এবং এতেই সে সব অমঙ্গল ও অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায়। এভাবেই তার ইমানের উন্নতি হতে থাকে। বান্দার দীনতা, হীনতা ও বিনয় তাকে পূর্ণতায় পৌঁছে দেয়।

শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে (অনুধাবনপূর্বক একনিষ্ঠভাবে খাঁটি অন্তর
দিয়ে) প্রত্যুষে এই ইস্তিগফার পাঠ করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে এবং সকাল হওয়ার আগে ইন্তেকাল করবে, সে–ও জান্নাতি হবে। (বুখারি)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক