দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলায় বিমা বাস্তবায়নে করণীয়

গত ২৬ মে ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও অক্সফামের সহযোগিতায় ‘দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলায় বিমা বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।


আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

আমাদের দেশে ঝড়, খরা ও বন্যা লেগেই থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষক অনেক সমস্যায় পড়েন। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিমার মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, আলোচনায় এ বিষয়টি আসবে। এখন আলোচনা করবেন কাজী এন এম এন আজম। 

কাজী এন এম এন আজম
কাজী এন এম এন আজম

কাজী এন এম এন আজম
বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ। এ দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবছরই আমরা বন্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের দেশের ওপর দিয়ে কয়েকটি প্রধান নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা বয়ে গেছে। এটা বন্যার অন্যতম একটি কারণ।

বন্যার ফলে জনগণের শস্য, গৃহপালিত পশু ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটছে। সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রমের ফলে মানুষের মৃত্যুহার অনেক কমেছে।

এই অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এরই প্রেক্ষাপটে অক্সফাম ২০১৩ সালে বন্যাবিমা নামে একটি প্রকল্প শুরু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল নির্দিষ্ট এলাকায় বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া। জনগণের জানমাল রক্ষা করা। তাদের প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করা।

১ হাজার ২৭৪ পরিবারকে এ বিমার আওতায় আনা হয়। আমাদের প্রকল্পের আওতায় বন্যার সময় মজুরি ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি শস্য ক্ষতি ও গৃহপালিত পশু ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। ২০১২-২০১৩ সালে আমরা ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের সঙ্গে একটা বন্যা নকশা (ফ্লাড মডেল) করি। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা নদীর গতিপথ ও পানি নিয়ে গবেষণা করে এই মডেল তৈরি করেছেন।

বন্যা নকশা তৈরির খরচ কমানো, কিস্তির (প্রিমিয়াম) ওপর মূসক কমানো ও স্থানীয় প্রশাসনকে এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সরকার যদি ভর্তুকির ব্যবস্থা করে, তবে এ ধরনের প্রকল্প চালানো সহজ হয়।

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন

খালিদ হোসেন
আমাদের কাজকে চার ভাগে দেখছি। প্রথম কাজটি কমিউনিটি পর্যায়ে। এখন পর্যন্ত কিস্তির টাকা আমরাই বহন করছি। এখানে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাহলে তাঁরা কিস্তির কিছু অংশ হলেও যেন দিতে পারেন।

দ্বিতীয়টি হলো মডেল তৈরি ও তথ্যের খরচসংক্রান্ত। যাঁরা মডেল তৈরি করেন, তাঁরা যেন সেগুলোর সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন। এর ভিত্তিতে বিমা কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্ট ডিজাইন করতে পারে।

তৃতীয় হলো বিমাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করা। প্রথমে আমরা প্রগতি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করি। পরবর্তীকালে গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে আসে। বিমার আওতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। বিমা খাতে ঝুঁকি রয়েছে। তাই একটা বা দুটো কোম্পানি এলে টিকবে না। সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

চতুর্থ হলো সরকারি ভূমিকাসংক্রান্ত বিষয়। যে মানুষদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি, তাদের কিস্তি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। কিন্তু তাঁদের অনেকেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় আছে। দুর্যোগের সময় তাদের পেছনে ব্যয় করা হয়। সে জায়গা থেকে বিমাকে দেখতে হবে। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এটাকে চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য।

এম জে আজিম
এম জে আজিম

এম জে আজিম
চার বছরের ফলাফলে দেখা যায়, যে পরিমাণ কিস্তি (প্রিমিয়াম) এসেছে, তার ৮৫ শতাংশ বিমা দাবি হিসেবে চলে গেছে। প্রথম বছর বিমার কাভারেজের ১০ শতাংশ হারে কিস্তি দিতে হতো। পরবর্তী সময়ে তা ১৪ শতাংশ হারে দুই বছর চলমান ছিল। চতুর্থ বছর সেটা ১৯ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এই হারে কেউ প্রকল্প চালাতে চাইবে না। তাই সরকারকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বন্যার সময় সরকার প্রচুর টাকা খরচ করছে। এটা না করে যদি বিমা কিস্তির ভর্তুকি দেয়, তবে সরকারের খরচ কমে যাবে। এ–সংক্রান্ত তথ্য ব্যক্তি খাত থেকে নিতে হচ্ছে। ফলে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। সরকারকে তথ্য সেবা দিতে হবে। বাংলাদেশের বন্যাপ্রবণ এলাকাকে বিমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এখানেও সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

কোম্পানির মধ্যে পার্টনারশিপ মডেল তৈরি করতে হবে। এখানে যাঁরা তথ্য–সহযোগিতা দিচ্ছেন, তাঁদের ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে পার্টনারশিপ করা প্রয়োজন। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অন্যান্য দেশে কিস্তিটা এককভাবে সরকার দিচ্ছে না। সরকার, সুফলভোগী ও দাতা সংস্থা সমন্বিতভাবে দিচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্যও করা দরকার।

হাসিনা বেগম
হাসিনা বেগম

হাসিনা বেগম
যমুনা নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের জীবন। বন্যা হলে আমাদের সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায়। বন্যায় চারবার আমার বাড়ি ভেঙেছে।

বিমার টাকা পেয়ে ঘর মেরামত করি। আর কিছু টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনি। পরে সে ছাগল বাচ্চা দিয়েছে। সেটি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। বিমার কিস্তি আমরা দিই না। মানবমুক্তি সংস্থা কিস্তি দেয়।

লাভলি বেগম
লাভলি বেগম

লাভলি বেগম
একবার ১১ দিন বন্যার পানি ছিল, তখন আমরা ২ হাজার ৮০০ টাকা করে পেয়েছি। বিমা কোম্পানি টাকা ঠিকই দেয়। কিন্তু সময়মতো দেয় না। আমাদের বিমার টাকা যেন দ্রুত দেওয়া হয়।

বিপদের সময় টাকা পাওয়া যায় না। চার-পাঁচ মাস পর টাকা দেওয়া হয়। যাঁদের কৃষিজমি আছে, তাঁদের ক্ষতি বেশি হয়। ২১ দিন পানি থাকলে যে ক্ষতি হয়, ৫ দিন পানি থাকলেও সে ক্ষতি হয়।

মো. মনিরুল ইসলাম
মো. মনিরুল ইসলাম

মো. মনিরুল ইসলাম
দুর্যোগ কী? এটা কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাকি আকস্মিক দুর্যোগ—এ বিষয়টা আসেনি। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিমার আওতাভুক্ত।

বিমানীতি অনুযায়ী বন্যার প্রথম পাঁচ দিনের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। বন্যার পানিতে ৫ দিন বা ১০ দিনে সমান ক্ষতি হয়। এই বিষয়টাও বিবেচনায় আনা দরকার। গত বছরের একটি আলোচনায় এ ধরনের কিছু সুপারিশ এসেছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, আমার জানা নেই।

বিমাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিমার আওতা বাড়ালে কিস্তির পরিমাণও বাড়বে। তখন বিমা দাবি পূরণ করতে কোম্পানিগুলোর সমস্যা হবে না। সাধারণভাবে বিমা দাবি পরিশোধ একটি ভিন্ন মডেল। এ ক্ষেত্রে একজন জরিপ করেন, জরিপের ফলাফল দেন এবং বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন হয়। ফলে অনেক সময় লাগে।

বন্যার ক্ষেত্রে আবহাওয়া বিভাগের প্রতিবেদন পেলেই আমরা দাবি পরিশোধ করতে পারি। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেদন পাওয়ামাত্রই দাবি পরিশোধ করতে হবে, যা এককভাবে কোনো বিমা কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।

ফারজানা চৌধুরী
ফারজানা চৌধুরী

ফারজানা চৌধুরী
আমাদের সমস্যা অনেক দিনের। আমরা সব সময়ই দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি। প্রথমেই আমরা উদ্যোগ নিয়ে উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি জায়গায় ফ্লোরিকালচার নিয়ে কাজ শুরু করি। বাংলাদেশ পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে আমরা কাজ করি।

আমাদের তথ্যগুলো আসে স্যাটেলাইট থেকে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) হতে ৩৫ বছরের আবহাওয়াসংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হয়েছে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

তথ্যগুলো খুব স্পষ্ট। দুই হাজার কৃষকের বিমা দাবি আমরা পরিশোধ করেছি। পাঁচ দিনের বেশি বৃষ্টিপাত আমাদের সফটওয়্যারে ধরা পড়ছে। এ ক্ষেত্রে তথ্য সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) ও স্কাইমেট ওয়েদার সার্ভিস।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৮০ শতাংশ প্রিমিয়াম সরকার দেয়। বাংলাদেশে জাতীয় দুর্যোগ তহবিল করে কৃষককে বিমায় সহায়তা করা প্রয়োজন। সব কৃষককে বিমার আওতায় আনতে হবে। ফসল উৎপাদনের সময় সম্পর্কে কৃষকের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এখন আমরা ভারত থেকে স্যাটেলাইট তথ্য নিচ্ছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে তথ্য নেওয়া গেলে আমাদের তথ্য খরচ কমবে।

মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া
মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া

মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। বন্যা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। মৌসুমি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা, শহর অঞ্চলে বন্যা ইত্যাদি।

আমরা সার্বিকভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিমার কথা বলছি। দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বন্যা বাংলাদেশের একটি প্রধান দুর্যোগ। বন্যার ধরন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়। সে অনুযায়ী বিমা পরিকল্পনা করতে হবে।

আমরা বর্তমানে মৌসুমি বন্যার জন্য ৫ দিন ও ১০ দিনের পূর্বাভাস দিচ্ছি। এ বন্যা জুন মাসে শুরু হয়ে অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে। আমন এ সময়ের প্রধান ফসল।

কৃষকের জন্য ১০ দিনের একটি পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ দিনের সুনির্দিষ্ট ভিত্তি পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে। এই পূর্বাভাস খুব যথাযথ হয়ে থাকে। এটার ভিত্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) থেকে পাওয়া একটা আবহাওয়া মডেল, যার ভিত্তি স্যাটেলাইট নয়।

১০ দিনের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে আমরা স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে থাকি। এর যথার্থতা পাঁচ দিনের পূর্বাভাসের চেয়ে কম। ১০ দিনের পূর্বাভাস জাতীয় পর্যায়ে প্রচার করা হয়। সেটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও এ–সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এই কমিটি সচল করতে হবে। এই পূর্বাভাস একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মো. শামীম হাসান ভূইয়া
মো. শামীম হাসান ভূইয়া

মো. শামীম হাসান ভূইয়া
স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ সহজেই নির্ণয় করা যায়। আবহাওয়া পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভূমিকা খুব কম। বিদেশ থেকে এ–সংক্রান্ত তথ্য আনতে হলে সেটার খরচ অনেক বেশি হয়। এ জন্য দেশেই এর একটা ব্যবস্থা করা দরকার।

এখানে চারটি পক্ষ রয়েছে। সেগুলো হলো বিমাগ্রহীতা, তথ্য সরবরাহকারী, বিমা কোম্পানি ও সরকার। তথ্য সরবরাহকারী ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানি প্রতিটি আলাদা পক্ষ। বিমা কোম্পানি যদি তথ্য প্রক্রিয়া করে, তবে সেখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে যায়। তাই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার অবকাঠামো তৈরি করে দিতে পারে। এখানে চতুর্থ পক্ষ হলো সরকার। সরকারকে বিমা খাতে অবকাঠামো তৈরি, নীতিমালা তৈরি ও অর্থায়ন করতে হবে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থেই শস্যবিমার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা রাখা প্রয়োজন। এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত।

মনোয়ার হোসেন
মনোয়ার হোসেন

মনোয়ার হোসেন
আমরা যাদের জন্য বিমা করছি, তারা আমাদের সমাজে প্রভাবশালী নন। তারা অর্থনৈতিকভাবে খুব ভঙ্গুর একটা সম্প্রদায়। কোনো দুর্যোগ হলে সেটাকে সামাল দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক বা সামাজিক কোনো অবস্থানই তাদের নেই। সে জন্য সরকারকে এখানে ভর্তুকি দিতে হবে। বিশ্বের সব দেশেই সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে।

দেশে বন্যায় সাধারণত ২০ থেকে ২২ শতাংশ প্লাবিত হয়। বন্যায় ৫০ শতাংশ প্লাবিত হলে তাকে আমরা বিপর্যয়কারী (ক্যাটাস্ট্রফি) বন্যা হিসেবে চিহ্নিত করি। কোনো একক কর্তৃপক্ষের পক্ষে এটা সামাল দেওয়া সম্ভব না।

আমাদের কাজের ক্ষেত্রে যে তথ্যের প্রয়োজন, তা স্যাটেলাইট হতে পাওয়া যায় না। স্যাটেলাইট তথে্যর যথার্থতার একটা মাত্রা রয়েছে। সে মাত্রার তথ্য বাংলাদেশকে কেউ দেবে না। আমেরিকায় অঞ্চলভিত্তিক কৃষি খাতে ভর্তুকি ৫০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশেও অঞ্চলভিত্তিক ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের ভূমিকা ছাড়া বিমা ব্যবস্থা টেকসই করা সম্ভব নয়।

রেজাউল করিম
রেজাউল করিম

রেজাউল করিম
২০১৩ সালে আমাদের ১ হাজার ৬৬১ জন কৃষক বিমার আওতাভুক্ত ছিলেন। সেখানে জনপ্রতি বিমার পরিমাণ ছিল ৮ হাজার টাকা।

মোট বিমার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩২ হাজার ৮৮ টাকা। আমাদের প্রিমিয়াম আয় ছিল ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৪ টাকা। ওই বছর প্রগতি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কোনো লোকসান হয়নি।

২০১৪ সালেও সমানসংখ্যক কৃষক বিমার আওতাভুক্ত ছিলেন। সেখানে প্রিমিয়াম আয় ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৮১২ টাকা। ওই বছর বিমা দাবি পরিশোধিত হয়েছিল ১৯ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা। ২০১৩ সালে আমাদের লোকসান হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে লোকসান হয়েছিল। আমরা হয়তো নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এটা করছি। কিন্তু এটা করতে হবে দেশব্যাপী।

বেসরকারি সহায়তায় দুর্যোগঝুঁকি বিমা তিন-চার বছর পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু রাখা সম্ভব। তাই সরকারকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে হবে। একসময় সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়েছিল। ২০১০-১১ সালে বাজেটে পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম ভর্তুকি রাখা হয়েছিল। সেটা পরে আর কার্যকর হয়নি।

মো. সিদ্দিকুল ইসলাম খান
মো. সিদ্দিকুল ইসলাম খান

মো. সিদ্দিকুল ইসলাম খান
অনেকগুলো জাতীয় দুর্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে বন্যা হলো প্রধান দুর্যোগ। এটা প্রতিবছর হয়। অনেকগুলো জায়গায় এখনো বহু কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তার মধ্যে আজকের বিষয়টা একটা। বিমা বলতে মোটাদাগে জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমাকে বোঝানো হয়। এখন যে বিমার ব্যাপারে আমরা কথা বলছি, তা নতুন একটি বিষয়।

জনসংখ্যার একটা বড় অংশই এসব ব্যাপারে জানে না। তাই প্রথম কাজ হচ্ছে এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক রাখতে পারে। কৃষককে সহায়তার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের কৃষকেরা ভালো থাকলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এটা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ না। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিসহ আমাদের সবার ভূমিকা থাকা উচিত।

প্রতিবছর ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬০০-৭০০ কোটি টাকা জরুরি ত্রাণ দেয়। এই ত্রাণের একটা অংশ কৃষকের বিমার প্রিমিয়ামে ব্যয় করা যায়। তাহলে আমাদের কৃষকেরা উপকৃত হবেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাইরেও কিছু মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। সেসব মন্ত্রণালয়কেও যুক্ত করা প্রয়োজন।

তথ্যের ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করলে খরচ কমবে। খরচ কমলে বিমার প্রিমিয়ামও কমবে।

রেজাউল করিম সিদ্দিক
রেজাউল করিম সিদ্দিক

রেজাউল করিম সিদ্দিক
আজকের বিষয়টা কৃষিক্ষেত্রে একেবারেই নতুন বললে ভুল হবে। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করার সক্ষমতার যে উদাহরণগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে একত্র করা দরকার। এ–সংক্রান্ত সবকিছু যদি নিজেদের মধ্যে শেয়ার করা যায়, তাহলে সরকারি ও বেসরকারি খাতের পক্ষে কাজের পরিকল্পনা করা সহজ হবে।

গণমাধ্যমকর্মীদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তথ্য পৌঁছে দেওয়া। কৃষকের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাঁদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।

স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবার সুবিধা দেওয়া হয়। শস্যবিমার ক্ষেত্রেও কৃষককে প্রযুক্তিগত সুবিধা দেওয়া দরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় এখন ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করে। এখান থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা সারের ভর্তুকিতে ব্যয় হয়। এই ভর্তুকি থেকে কিছু অর্থ কৃষকের বিমার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মাহবুবা নাসরীন
মাহবুবা নাসরীন

মাহবুবা নাসরীন
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বন্যা হলে বিমা কোম্পানি দেউলিয়া হয়। আর বাংলাদেশে বন্যা হলে কৃষক দেউলিয়া হন। ২০১৬ সালে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশনের সঙ্গে আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় রোড টু সেন্দাই নামে একটি কর্মশালা করে। কিন্তু উপস্থিতির হার ছিল অত্যন্ত কম। কেননা, বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ছয়টি লক্ষ্যতেই মানুষকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে। এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নাজুক শ্রেণির প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে। যখন কোনো প্রকল্প করা হয়, তখন সবার কথা মাথায় রেখে তা করা উচিত।

প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু প্রকল্প আছে। কিন্তু ওই প্রকল্পের সঙ্গে এটা যুক্ত নেই যে আরেকটি দুর্যোগ এলে কীভাবে তাঁরা এটা থেকে রক্ষা পাবেন। ১ টাকা দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসের জন্য ব্যয় করা মানে ৯ টাকা বাঁচানো।

পলাশ মণ্ডল
পলাশ মণ্ডল

পলাশ মণ্ডল
আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখনো ত্রাণনির্ভর। চাল, ডাল ও ঢেউটিন দেওয়া হয়। সরকার এর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে।

এখান থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যায়, ততই ভালো। এখন কিছু জায়গায় পাইলট প্রকল্প হচ্ছে। এগুলো আরও ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। সে জন্য সরকার, এনজিও ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে অংশীদারত্বের মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে বিমা সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে।

এ বিষয়ে বহুপাক্ষিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য মানুষকে বিমার সুবিধা সম্পর্কে বোঝাতে হবে। বিমার টাকা অনেকেই দেরিতে পাচ্ছেন। এগুলো নেতিবাচক দিক।

কারিগরি উপাত্ত কেনার ব্যয় অনেক বেশি। এটাকে কীভাবে আরও সাশ্রয়ী করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। ইনস্যুরেন্স প্রোডাক্ট ডিজাইন ও তদারক এ দুই জায়গায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

এম মোশাররফ হোসেন
এম মোশাররফ হোসেন

এম মোশাররফ হোসেন
আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে সারা বিশ্বই এখন সচেতন রয়েছেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়ছে, অসময়ে বৃষ্টিপাত ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এগুলো জীবন ও সম্পদের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই বিমা কোম্পানির একার পক্ষে এটা সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য। কারণ বিমা কোম্পানির সক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এ জন্য প্রথমত সরকারকে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত এর একটা অংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। তৃতীয়ত এ খাতে বিনা সুদে অর্থায়ন করা যেতে পারে। এখনই এ ধরনের সমস্যার কথা ভাবতে হবে। তা না হলে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে যে ঝুঁকি তৈরি হবে, তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এ সমস্যা সমাধানে বিমাব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এসব সমস্যা সমাধানে অন্যান্য উপায়ও থাকতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বিমাব্যবস্থা খুবই ভালো চিন্তা। এতে সরকার ভর্তুকি দিতে পারে।

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন
মো. মোয়াজ্জেম হোসেন

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন
এখানে দুইটা বিষয় এসেছে। সেগুলো হলো দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমা কোম্পানির ভূমিকা জানিয়ে দেওয়া। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আগের মতো নেই। এখন সরকার ত্রাণনির্ভরতার পরিবর্তে ঝুঁকি মোকাবিলার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এসব বিষয় এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার সিদ্ধান্তগুলো সদস্য রাষ্ট্রগুলো বাস্তবায়ন করছে। সে আলোকে আমরাও বিভিন্ন গুচ্ছ প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছি।

ঝুঁকি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একাধিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর তিন ভাগের দুই ভাগ প্রাকৃতিক দুর্যোগঝুঁকিতে আক্রান্ত হয়। সবচেয়ে বড় দুর্যোগ হলো বন্যা। এতে গ্রামীণ মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এত দিন মন্ত্রণালয় থেকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্প চালু ছিল। এখন থেকে এর বদলে আমরা গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছি। এ বছর গৃহহীনদের জন্য ১১ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরে ২ লাখ ৫০ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি আধা–পাকা ঘরের পেছনে ব্যয় হবে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫১৫ টাকা। এ ঘরগুলো দুর্যোগ হ্রাসের একটা বড় কার্যক্রম।

উপকূলীয় বাঁধের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

এ ছাড়া মুজিব কেল্লা নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের সময়ে মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে। ওখানে গৃহপালিত পশুর জন্য আলাদা শেড থাকবে। দুর্যোগের শিকার ব্যক্তিদের বিমার আওতায় আনতে সরকারি সহায়তার সম্ভব্যতা বিবেচনা করা হবে। কিছু বেসরকারি সংস্থা খাদ্যসহ নানা উপকরণ দিত। তারাও বিমায় সহায়তা করতে পারে।

আব্দুল কাইয়ুম

আজকের আলোচনায় দুর্যোগঝুঁকি মোকবিলায় বিমা সহায়তার বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছে। জাতীয় পর্যায়ে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।

এর পাশাপাশি ঝুঁকিও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে আবহাওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে সবকিছু নতুন করে ভাবতে হবে। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

যাঁরা অংশ নিলেন

মো. মোয়াজ্জেম হোসেন: অতিরিক্ত সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

এম মোশাররফ হোসেন: সদস্য, ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)

মাহবুবা নাসরীন: পরিচালক ও অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া: নির্বাহী প্রকৌশলী, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, ঢাকা

মো. সিদ্দিকুল ইসলাম খান: ব্যবস্থাপক, রেজিলিয়েন্স ইনোভেশন, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাব্লিউএফপি), বাংলাদেশ

মো. শামীম হাসান ভূইয়া: পরামর্শক, হাইড্রোম্যাটেরিওলজিস্ট, বিশ্বব্যাংক

পলাশ মণ্ডল: িডজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস স্পেশালিস্ট, ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম, ইউএনডিপি

ফারজানা চৌধুরী: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

রেজাউল করিম: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রগতি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

মো. মনিরুল ইসলাম: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

মনোয়ার হোসেন: নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)

এম জে আজিম: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

রেজাউল করিম সিদ্দিক: উপস্থাপক, মাটি ও মানুষ, বিটিভি

খালিদ হোসেন: কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, অক্সফাম

কাজী এন এম এন আজম: সিনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা, অক্সফাম

হাসিনা বেগম: বিমা সুবিধাভোগী, সিরাজগঞ্জ

লাভলি বেগম: বিমা সুবিধাভোগী, সিরাজগঞ্জ

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো