ওসি মোয়াজ্জেমের পরোয়ানা যাচ্ছে রংপুর: ফেনীর এসপি

কাজী মনিরুজ্জামান
কাজী মনিরুজ্জামান
>ফেনীতে আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোনাগাজীর সেই আলোচিত সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ২৭ মে সাইবার ট্রাইব্যুনাল এই পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু আট দিন পরে আজ (মঙ্গলবার) রাতে সেই পরোয়ানা নিয়ে বার্তাবাহক রংপুরে রওনা দিচ্ছেন বলে জানালেন ফেনীর বর্তমান পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। ঢাকা থেকে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: এসপি সাহেব বলছেন? আপনি ভালো আছেন?
পুলিশ সুপার: জি বলছি। ঈদ মোবারক।

প্রথম আলো: ঈদ মোবারক। প্রথম আলোয় পড়লাম, নিখোঁজ হওয়া পরোয়ানা আপনি নাটকীয়ভাবে খুঁজে পেয়েছেন।
পুলিশ সুপার: গত রাতে প্রথম আলোর ফোন যখন এসেছে, তখন ওরা (স্টাফ) গিয়েছিল তারাবির নামাজে। পরোয়ানা তারা দুপুরবেলা রিসিভ করেছে। এটা ৩ তারিখে। প্রথম আলো থেকে একজন ভদ্রমহিলা ফোন করেছিলেন। তাঁর টেলিফোন পেয়ে আমি আমার কোর্ট ইন্সপেক্টরকে ফোন করলাম। বললাম, তুমি একটু তাড়াতাড়ি আসো। সে তারাবির নামাজ শেষ করেই এল। ওকে দিয়ে মোটামুটি খুঁজে-টুজে জানলাম, সেটা (পরোয়ানা) আমাদের ডেসপ্যাচ শাখায় আছে। আমি ওটা খুঁজে পাওয়ার পরেই অ্যাকশনে দিয়ে দিয়েছি।

প্রথম আলো: অ্যাকশনে দেওয়ার অর্থ কী? কী করলেন? এটা কি একটি অ্যাকটিভ ওয়ারেন্ট নয়?
পুলিশ সুপার: যেহেতু তিনি আমাদের এখানে চাকরি করেন না। যদিও আমাদের এখানে পরোয়ানা দিয়েছেন। তিনি এখন চাকরি করেন রংপুরে। আমরা তাই পরোয়ানা স্পেশাল মেসেঞ্জার দিয়ে রংপুরে পাঠাব।

প্রথম আলো: আদালত আজ তো বন্ধ ছিল।
পুলিশ সুপার: বন্ধ ছিল। কিন্তু আমরা আমাদের প্রসিডিউর অনুযায়ী আদালতে আমাদের মেসেঞ্জার পাঠিয়েছিলাম। আদালত বলেছেন এই পরোয়ানা তাঁর বর্তমান কর্মস্থলে পাঠাতে। এখানে নরমাল যে ট্রাইব্যুনালের সিস্টেম ছিল, সেটা হলো আমাদের স্টেশনে চাকরি না করলে, তার বর্তমান স্টেশনে পাঠানোর আগে আদালতকে অবহিত করতে হয়। আদালত তখন তা পরীক্ষা করেন। কিন্তু এখানে আদালত বললেন, আপনারা এটা সরাসরি ওখানে (রংপুরে) পাঠিয়ে দিন। যার কারণে আমি স্পেশাল মেসেঞ্জার দিয়ে আজ (মঙ্গলবার) রাতেই রংপুরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

প্রথম আলো: আপনার স্পেশাল মেসেঞ্জার কি রওনা দিয়েছে? [মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪০]
পুলিশ সুপার: না। এই যে কেবল ঢাকা থেকে ফিরে আসছে। সে অন দ্য ওয়ে। আমি তার জন্য বসে আছি।

প্রথম আলো: তার মানে আজ রাতেই রংপুরে পরোয়ানা নিয়ে আপনার মেসেঞ্জার যাবে?
পুলিশ সুপার: আজ রাতেই রওনা দেবে ইনশা আল্লাহ।

প্রথম আলো: কিন্তু এটা তো পৌঁছাবে কাল।
পুলিশ সুপার: কাল ঈদের দিন। তো ঈদের দিন যদি বন্ধ থাকে, কেউ যদি না থাকে, তাহলে হয়তো পরশুদিন পৌঁছাবে।

প্রথম আলো: আপনি নিশ্চিত করছেন যে আজ রাতে রওনা দেবে। কিন্তু ঈদের ছুটি আছে না?
পুলিশ সুপার: কিন্তু কী করা, আমাদের তো সরকারি চাকরি, এ রকমই—

প্রথম আলো: কিন্তু ওই ওসি সাহেব কি রংপুরের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন?
পুলিশ সুপার: না না না। আমি যতটুকু জানি, তিনি (সাবেক ওসি) আমার কর্মস্থলে না থাকার কারণে আমি কোনোভাবেই বলতে পারব না। একজন পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না। কারণ, আমি একজন পুলিশ অফিসার। আমি বর্তমানে ফেনীতে কর্মরত রয়েছি। তাই আমি রংপুর জেলার কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না। রংপুরের অফিসার বলতে পারবেন তিনি কোথায় আছেন বা না আছেন।

প্রথম আলো: তার মানে একজন ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত ওসি কোথায় আছেন, সেটা জানার উপায় আইন আপনাকে দেয়নি?
পুলিশ সুপার: না, এটা আমাদের চাকরিতে স্বভাব সুলভভাবেই সম্ভব নয়। আপনি যদি কিছু না মনে করেন, তাহলে অনুগ্রহ করে রংপুরে তাঁর কর্মক্ষেত্রের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করুন।

প্রথম আলো: ওসি সাহেবকে তো কোনো শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নয়, তাঁকে স্বাভাবিক বদলি করা হয়েছে, তাই নয়কি?
পুলিশ সুপার: জি, তাঁকে তো রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমি এতটুকু জানি।

নুসরাত জাহান।
নুসরাত জাহান।

প্রথম আলো: কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান করেছেন কি না, সেটা আপনি জানেন না?
পুলিশ সুপার: না, আমি এটা বলতে পারব না।

প্রথম আলো: তিনি কি রংপুরের এসপির অধীনে আছেন?
পুলিশ সুপার: না, তিনি ডিআইজি মহোদয়ের অধীনে আছেন বলে জানি।

প্রথম আলো: তিনি রংপুরে কত তারিখে সংযুক্ত হয়েছেন?
পুলিশ সুপার: আমি এটা বলতে পারব না, কাইন্ডলি।

প্রথম আলো: তার মানে ওসি সাহেব আইনের চাখে এখনো পলাতক নন?
পুলিশ সুপার: আমি সেটাও বলতে পারব না। প্রকৃতপক্ষে এটা (ফেনী) তাঁর আগের কর্মস্থল। তাই আমি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না। তার কারণ, তিনি বর্তমানে রেঞ্জ ডিআইজি রংপুরে সংযুক্ত রয়েছেন। আমার এখানে থাকলে এখানকার পরিস্থিতি আমি বলতে পারতাম। তা ছাড়া আমরা যেহেতু এখানে নতুন এসেছি, আসলে আমরা এই বিষয় নিয়ে খুব একটা ইন্টারফেয়ার করতে চাই না, ফোনে বা অন্য কোনোভাবে। কারণ, বিষয়গুলো এখন পাবলিকলি হয়ে গেছে।

প্রথম আলো: অন্য দুজন এসআইয়ের কী অবস্থা?
পুলিশ সুপার: মহোদয়, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। জব করি তো।

প্রথম আলো: নিশ্চয়ই। আমরাও আইনের মধ্যেই থাকব। কিন্তু এটা আমাদের জানার অধিকার রয়েছে যে সেই ওসি সাহেব বর্তমানে কোথায় রয়েছেন? তাঁর ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট কীভাবে কার্যকর হবে? এবং তা কবে?
পুলিশ সুপার: এ বিষয়টি আপনি রেঞ্জ ডিআইজি রংপুরের কাছ থেকে জানতে পারবেন। সরি, আপনি ডিআইজি মহোদয়ের স্টাফ অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন, তাঁরই এই বিষয়টি জানার কথা।

প্রথম আলো: আপনি যে ওয়ারেন্ট পাঠাচ্ছেন, তা তাঁর কাছেই যাবে?
পুলিশ সুপার: জি।

প্রথম আলো: আপনি বলছেন যে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছে দেওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই।
পুলিশ সুপার: যেহেতু তিনি এখনো প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। যেহেতু আদালত কর্তৃক প্রমাণিত হয়নি, সুতরাং ওটা (পরোয়ানা) তো লাগবে। এটা আমার ধারণা। আমি যে সঠিক বলছি, তা দাবি করছি না। কারণ আমাকে আইন দেখে বলতে হবে। তবে আমার মনে হয় এ রকমই সম্ভাবনা।

প্রথম আলো: কিন্তু আপনি যে পরোয়ানাটি পাঠাচ্ছেন, সেটি সই করেছেন কে?
পুলিশ সুপার: ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

প্রথম আলো: তার মানে তিনি আইনের চোখে একজন আসামি।
পুলিশ সুপার: আমি আসলে এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আমি তো চাকরি করি।

প্রথম আলো: ওসি সাহেব কোন তারিখে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন?
পুলিশ সুপার: যত দূর জানি, তিনি প্রায় দুমাস আগে এখান থেকে গেছেন।

প্রথম আলো: নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চাইছি। কবে তিনি ফেনী থেকে রিলিজ হয়ে গিয়েছেন?
পুলিশ সুপার: ১ থেকে ২ মাস আগে গিয়েছেন। আমি নিশ্চিত বলতে পারব না। কারণ, আমি তো এখানে ছিলাম না। আমাকে কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তবে এটা আমি জানি, আমি যেহেতু এখানে দেড় মাস হয় এসেছি। তার আগেই তিনি এখান থেকে ডিসচার্জ হয়ে গেছেন।

প্রথম আলো: গত ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন দ্বারা অভিযোগপত্র দাখিল এবং আদালত থেকে জারি হওয়া পরোয়ানা হাতে নিয়ে আপনি ওই ওসিকে একজন আসামি মানতে চাইছেন না, আপনার সঙ্গে আমাদের কথোপকথন প্রকাশিত হলে মানুষ সেই রকম ধারণা পাবে।
পুলিশ সুপার: না না। আপনি এভাবে না নিয়ে আপনি বরং এটা বলুন, আসামি কাকে বলে?
আমি আপনাকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমি যেহেতু চাকরিজীবী মানুষ, এটা কি আমার কাছ থেকে জানা খুব দরকারি, এটা তো আদালত বলবেন।

প্রথম আলো: আমরা বলতে চাই, আদালত যার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা আপনাদের দায়িত্ব।
পুলিশ সুপার: এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে যাদের দায়িত্ব, তাঁরা এটা পালন করবেন। যেহেতু আমাদের কর্ম ক্ষেত্রে তিনি নেই। তাই আমাদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না।

প্রথম আলো: তাহলে তো দেখা যাচ্ছে, তাঁকে এখান থেকে বদলি করে দিয়ে তাকে একটা সুবিধা দেওয়া হলো। লোকে বলছে যে এর মাধ্যমে তাকে ঈদ উদ্‌যাপনের সুবিধাই করে দিল পুলিশ বিভাগ।
পুলিশ সুপার: এই বিষয়ে উত্তর দেওয়ার যথাযথ কর্তৃপক্ষ আসলে আমি নই।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
পুলিশ সুপার: ধন্যবাদ।