রাঙামাটির পাহাড়ধসের দুই বছর

২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে ১২০ জনের প্রাণহানির পর ×গঠিত তদন্ত কমিটির একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন না হওয়া শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতারও বড় প্রমাণ। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সরকার নড়েচড়ে বসে, তদন্ত কমিটি করে, কমিটি সুপারিশও করে; কিন্তু সেই সুপারিশ অনুযায়ী কাজ হয় না। এখানেও তার ব্যতিক্রম হলো না।

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর রাঙামাটি প্রতিনিধির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটির সুপারিশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো থেকে বসতি সরিয়ে ফেলা, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করা। কিন্তু এখন জেলা প্রশাসন বলছে, বসতি সরানোর কাজটি করা কঠিন। ফলে রাঙামাটিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতে বসবাস করছে, যাদের বেশির ভাগই গরিব ও নিরুপায়। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি খাসজমিতেও অনেক অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে গড়ে ওঠা বসতি সরানোর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনকে বেগ পেতে হলেও খাসজমিতে যেসব বসতি গড়ে তোলা হলো, সেগুলো কেন তারা সরিয়ে ফেলতে পারল না? তাদের নাকের ডগায় এসব বসতি স্থাপিত হলোই–বা কীভাবে?

তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, ২০১৭ সালে পাহাড়ধসে যে চারটি প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেগুলো মেরামতের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সড়কগুলো হলো রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-কাপ্তাই। জেলা প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই সময় চারটি সড়কের ১৩৬টি স্থানে ভেঙে যায়। এরপর থেকে জোড়াতালি দিয়ে এসব সড়কে কোনোভাবে যানবাহন চলাচল করছে, যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়কগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে ২০১৮ সালে একবার এবং গত মে মাসে দ্বিতীয়বার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে অগ্রাধিকার না পাওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

২০০৭ সালেও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৮ জনের মৃত্যু ঘটেছিল। প্রতিবছরই পাহাড়ধসে কমবেশি মানুষ মারা গেলেও কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় ঘটে না। প্রচারপত্র বিলি ও সতর্কতামূলক ফলক টাঙিয়ে তারা জনগণকে সচেতন করলেও নিজেরা সচেতন নয়। শুধু রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম নয়, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারেও পাহাড়ধসে প্রতিবছর মানুষ মারা যায়। এভাবে পাহাড়ে আমরা আর কত লাশের মিছিল দেখব? এখন বর্ষা মৌসুম। রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে যেসব মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে আছে, তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই বলে থাকেন, কেউ গৃহহীন থাকবে না ও সবার জন্য নিরাপদ আবাস গড়ে তোলা হবে। তাঁদের কথা ও কাজের মিলই দেখতে চায় দেশবাসী।