কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়ন: দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীর সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ

>গত ২২ মে ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়ন: দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন-সহযোগীর সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা 

আব্দুল কাইয়ুম

কারিগরি শিক্ষা নিয়ে গত দশ বছরে আমাদের দেশে অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই একই ধরনের উদ্যোগের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারলে তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। এসব কায৴ক্রমে দাতা সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এর আগে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সমন্বিত কম৴সূচি দেখেছি। আজ আমরা কারিগরি শিক্ষার সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা করব। এই আলোচনা আশা করি ভালো ফল নিয়ে আসবে। 

এখন কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়নে দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন-সহযোগীর সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ সোয়াপ (সেক্টর ওয়াইড অ্যাপ্রোচ) নিয়ে বলবেন মানস ভট্টাচার্য।

মানস ভট্টাচার্য
মানস ভট্টাচার্য

মানস ভট্টাচার্য
কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকার ও উন্নয়ন-সহযোগীদের একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য গত বছর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে সরকার ও উন্নয়ন-সহযোগীদের সঙ্গে ১৫ জনের সোয়াপ কমিটি নামে একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট সবার অংশীদারত্ব ছিল। কাজ করার জন্য বিভিন্ন খাত আছে। এখানে সরকার ও উন্নয়ন-সহযোগীরা সমন্বিতভাবে কাজ করলে দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব।

আজকের এই গোলটেবিল আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো, কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে আমরা কোথায় আছি এবং আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা।

উপস্থিত অনেকেই বলতে পারবেন, সমন্বিত কম৴সূচি নিয়ে কাজ করতে গেলে কী ধরনের সমস্যা হয় এবং কীভাবে সেগুলো সমাধান করা যায়।

টুমো পোটিআইনেন
টুমো পোটিআইনেন

টুমো পোটিআইনেন
কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের আলোচনার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা। কারণ, এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এখানে উপস্থিত আছেন।সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা আমরা কীভাবে ব্যবহার করব তা নিয়ে ভাবতে হবে। কীভাবে আইএলও, জাতিসংঘের অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগী বাংলাদেশ সরকারের কাজে সহায়তা করতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে। অর্থনৈতিক, কারিগরিসহ সব ধরনের সহায়তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। এটা বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। পরবর্তী পঞ্চম বাষি৴কী পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ থাকবে বলে আমরা আশা করি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সরকার ও অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগীদের সঙ্গে এক হয়ে সমন্বিত কম৴সূচির মাধ্যমে কাজ করতে পেরে আনন্দিত বোধ করছে।

কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত এই কম৴সূচিগুলো আলাদা কিংবা এককভাবে করলে হবে না। যেহেতু এখানে সব শ্রেণির অংশীদারত্ব আছে, তাই সব পক্ষের সহযোগিতা ও সমন্বয় থাকা জরুরি।

আমরা উন্নয়ন-সহযোগীদের থেকে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ শোনার জন্য আগ্রহী। এখানে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করব এটাও দেখতে হবে।

মো. আলমগীর
মো. আলমগীর

মো. আলমগীর
আমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকার সময় সেখানে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছিল। কারণ, এ ক্ষেত্রে শুধু একটি মন্ত্রণালয়—প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব দেয়। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে কাজ খুব কঠিন হবে। এই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাদ্রাসা বিভাগ যুক্ত আছে। এখানে প্রথমে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য কিছু সমন্বিত কম৴সূচির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারিগরি শিক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা হয়নি। পরবর্তী সময়ে কারিগরি শিক্ষাকেও সমন্বিত কম৴সূচির আওতায় আনা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজটা খুব কঠিন। কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে ২২টি মন্ত্রণালয় জড়িত। এগুলোর সমন্বয় হলে এর নেতৃত্ব কে দেবে? এসব বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে কারিগরি শিক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক থেকে আলাদা করা হয়।

কারিগরি শিক্ষায় সমন্বিত কম৴সূচির জন্য আইএলওর সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের স্কিলস ২১ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়।বিভিন্ন দেশের কারিগরি শিক্ষার সমন্বিত কর্মসূচির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য আমরা মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন গিয়েছিলাম।সেই অভিজ্ঞতার আলোকে একটি কমিটি এবং এর কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

শুরুতে প্রাথমিক শিক্ষায় সমন্বিত কম৴সূচি প্রকল্পকেন্দ্রিক ছিল। সরকারের উন্নয়ন বাজেট থেকে এখানে বরাদ্দ দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে সরকার সমন্বিত এই উদ্যোগকে আরও কার্যকর করার জন্য এটিকে একটি প্রোগ্রামভিত্তিক অ্যাপ্রোচে নিয়ে আসে। 

আমরা কারিগরি শিক্ষার সমন্বিত প্রকল্পের তাত্ত্বিক দিকে আছি। এর প্রায়োগিক দিকে যাইনি এখনো। আসলে সরাসরি কাজে নেমে যাওয়া যায় না। এ ধরনের কাজ করতে হলে এ ক্ষেত্রে জড়িত সবার সঙ্গে কথা বলতে হয়। উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে হয়। পরিকল্পনা করার পর কে অর্থায়ন করবে, এটা ঠিক করা হয়। এরপর এই প্রকল্পের একটি অংশ বাস্তবায়নের পর টাকা আসে। প্রতিটি ধাপে উন্নয়ন-সহযোগীদের প্রতিবেদন দিতে হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনো দাতা সংস্থাকে এ ক্ষেত্রে এখনো এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। কারিগরি শিক্ষায় একটি কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল ও কলেজ করার প্রতিশ্রুতি আছে। এই প্রকল্প শিগগিরই অনুমোদন পাবে। এটির বাস্তবায়ন হলে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে।

মেয়েদের জন্য চারটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। আরও চারটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৩টি জেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। সেখানে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। 

ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষায় তিনটি ধাপে সরকার ২০২১ সাল থেকে কারিগরি পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এখন এই প্রকল্পের বাজেট ঠিক করা হচ্ছে। এখানে পর্যাপ্ত অর্থায়ন পাওয়া গেলে সরকার কাজ শুরু করবে।

ইতিমধ্যে দুটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। একটি হলো ৬৪০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় মাধ্যমিকে ২০২০ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষা চালু করা। দ্বিতীয়টি হলো ২০২১ সাল থেকে সরকার প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রস্তাব করবে, তারা যদি ল্যাব ও ক্লাসরুম দিতে পারে, তাহলে সরকার ওখানে শিক্ষক দেবে। তাঁদের এমপিওভুক্ত করবে। 

নবম–দশম শ্রেণিতে যারা কারিগরি বিষয় নেবে না, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ১০০ নম্বরের একটি বিষয় থাকবে। এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। বড় হয়ে একজন শিক্ষার্থী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী—যা–ই হোক না কেন, তার একটি বিষয়ের ওপর কারিগরি দক্ষতা থাকতে হবে। এটি এখনো পরিকল্পনা হিসেবেই আছে। 

উন্নয়ন-সহযোগীরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষায় যেভাবে সহায়তা দিয়েছে, সেভাবে কারিগরি উচ্চশিক্ষায় সহায়তা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে অনার্স ও ডিগ্রি কলেজে যে ধরনের উচ্চশিক্ষা চলছে, তা আমরা চাই না। 

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন দেখিয়েছে, উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। আমরা এ ধরনের উচ্চশিক্ষা চাই না। 

অতিমেধাবীরা ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, আইনজীবী হবে। অনেকে সরকারি চাকরিতে আসবে। কেউ বিশ্বব্যাংকে কাজ করবে, কেউবা অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করবে। কিন্তু অদক্ষ উচ্চশিক্ষিত আমরা চাই না।

চৌধুরী মুফাদ আহমেদ
চৌধুরী মুফাদ আহমেদ

চৌধুরী মুফাদ আহমেদ
আমি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সমন্বিত কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতার আলোকে মনে করি, কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে সমন্বয় কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই।

কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে আমাদের দেশে আগ্রহ বেড়েছে। কারিগরি কলেজগুলোতে অনেক শিক্ষাথ৴ী ভতি৴ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের আগ্রহও বেড়েছে। এ খাতে আমাদের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

দক্ষতা উন্নয়নে দাতা সংস্থাগুলো সহায়তা করতে আগ্রহী। তারা কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই খাতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এমনকি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যেও কোনো কার্যকর যোগাযোগ নেই। এখানে সমন্বয় করাটা কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য আমদের অভিজ্ঞতার দিকে তাকাতে হবে। 

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সমন্বিত কম৴সূচির বেশ ভালো অভিজ্ঞতা আছে। পিইডিপিতে (প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) সমন্বিত কম৴সূচি কীভাবে সফল হয়েছে তা দেখতে হবে।

পিইডিপি ১–এ কোনো সমন্বিত কর্মসূচি ছিল না। এটি অনেক প্রকল্পের মাধ্যমে চলছিল। এর সমন্বয় কার্যক্রম খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। পিইডিপি ৩ থেকে সব উন্নয়ন-সহযোগী ও দাতাদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তা কার্যকর হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ট্রেজারি হিসাব চালু করে। তবে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ছিল অন্যান্য সাধারণ প্রকল্পের মতোই। আমাদের এখানে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রচুর প্রতিকূলতা আছে। এ কারণে বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।

এ এম জাকির হোসেন
এ এম জাকির হোসেন

এ এম জাকির হোসেন
স্বাস্থ্য খাতে সমন্বিত কর্মসূচির ধারণা আসে ১৯৯৭ সালে। এ খাতে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চারটি পর্যায়ে সমন্বয় কার্যক্রম চলছে। এখানে আমাদের ২০ বছরের সমন্বয় কর্মসূচির অভিজ্ঞতা রয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয় কায৴ক্রমের উদ্দেশ্য ছিল এ খাতে নিয়োজিত কর্মসূচি ও বাজেট এক জায়গায় আনা। যেন সরকার বুঝতে পারে, কার থেকে কোন ক্ষেত্রে কত টাকা আসবে। যেন একটি পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব হয়নি। কারণ, আমাদের নেতৃত্ব শক্ত ছিল না।

সমন্বয় কার্যক্রম কার্যকর বাস্তবায়নে প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু পরিচালনা কাঠামো। স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয় কর্মসূচির প্রতিটি ক্ষেত্রভেদে প্রধান থাকেন একজন লাইন পরিচালক। তাঁকে সহয়তা করেন কর্মসূচি পরিচালক ও সহকারী কর্মসূচি পরিচালক। প্রতিটি ক্ষেত্রের লাইন পরিচালকদের সরাসরি বাজেট অনুমোদন করার এখতিয়ার থাকে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বিবেচনায় না।

দক্ষতার দুটি দিক আছে। ‘হার্ড’ ও ‘সফট’ দক্ষতা। আমরা হার্ড দক্ষতা নিয়ে কাজ করি। সফট দক্ষতা নিয়ে কথা বলি না। যোগাযোগের দক্ষতা, জীবন দক্ষতা ইত্যাদি না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে আটকে যেতে হবে। 

সবাইকে সফট দক্ষতার ওপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।

সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ
সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ

সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ
পিইডিপি–৩ ও পিইডিপি–৪ থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা কী হয়েছে? আমরা কীভাবে সেই অভিজ্ঞতাকে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে পারি তা দেখতে হবে।

পিইডিপি–৩ ও পিইডিপি–৪ শুধু সমন্বয় কর্মসূচি ছিল না। এগুলো ফলাফলকেন্দ্রিকও ছিল। শুধু সমন্বয় কার্যক্রমের দিকে তাকালে হবে না। আমাদের ফলাফলভিত্তিক কর্মসূচির দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

পিইডিপি–২ একটি পরীক্ষামূলক সমন্বয় কর্মসূচি ছিল। পিইডিপি–৩ কে সত্যিকার অর্থে সমন্বয় কর্মসূচি বলা যায়। পিইডিপি–৪ সমন্বয় কর্মসূচির একটি সুন্দর উদাহরণ। আগের কর্মসূচিগুলোতে যে সমস্যাগুলো ছিল, আমরা সেগুলো এখানে কমানোর চেষ্টা করেছি।

কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের শক্তিশালী নেতৃত্ব লাগবে। সরকারকে সবার ওপরে থাকতে হবে। সরকারকে বলতে হবে, তাদের অগ্রাধিকার কোন কাজে। সরকারের পূণ৴ অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়। 

সরকার সমন্বয় কম৴সূচির প্রস্তাব করবে। উন্নয়ন-সহযোগীরা সেই প্রস্তাবে সাড়া দেবে। এভাবেই সমন্বিত উদ্যোগ কাজ করে। কারিগরি শিক্ষা ব্যয়বহুল। এখানকার প্রযুক্তি প্রায় প্রতিবছর, মাস, এমনকি অনেক সময় প্রতিদিনে পরিবত৴ন হয়। কারিগরি শিক্ষা আর কারিগরি দক্ষতা এক বিষয় নয়। 

কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই একজন দক্ষ হয়ে যায় না। আবার অনেকেই আছেন, যাঁদের সনদ নেই কিন্তু খুবই দক্ষ। শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে বত৴মান শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিলেই হবে না। অনেকেই আছে, যারা ঝরে পড়েছে। তাদেরও এই কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। 

প্রতিবছর গ্রামীণ এলাকায় অনেক মেয়ে অল্প বয়সে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। 

বিশ্বব্যাংক কারিগরি শিক্ষায় এ রকম সমন্বিত কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত আছে। 

আমরা বিশ্বাস করি, এ রকম সমন্বিত কার্যক্রমে অংশ নেওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা আরও সম্প্রসারণ সম্ভব।

মো. জাহাঙ্গীর আলম
মো. জাহাঙ্গীর আলম

মো. জাহাঙ্গীর আলম
২০০৮ সালে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ১ থেকে ২ শতাংশ। এখন এই হার বেড়ে ১৫ শতাংশেরও বেশি। ২০২০ সাল নাগাদ এটি ২০ শতাংশ হতে পারে। আমি মনে করি এটি বিরাট সাফল্য।  টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং (টিভেট) রিফর্ম প্রকল্প বাস্তবায়নের পর কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপকতা আসে।

কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রায় দেড় শ কোটি টাকার কর্মসূচি চলমান রয়েছে। সরকারের কাছে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। এখন প্রায় প্রতিটা বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আছে। কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্য মেয়েদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষকদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষকের স্বল্পতা আছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এখানে পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে। প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার অনিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। একটি বোর্ড দিয়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা পরিচালনা সম্ভব না। দুটির জন্য পৃথক বোর্ড দরকার। এতে কারিগরি শিক্ষার সমন্বিত কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটবে। 

কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি মেলার আয়োজন করা যায়। মেলা আয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সংস্থা সহায়তা করতে পারে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্পকারখানার যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। 

আমাদের দেশের অনেক মানুষ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এ সংখ্যা মধ্যপ্রাচ্যে বেশি। তাঁদের অনেকের ভালো দক্ষতা আছে। কিন্তু কোনো সনদ নেই। এই ক্ষেত্রে সরকারি প্রচেষ্টায় চুক্তির মাধ্যমে তাঁদের জন্য সনদের ব৵বস্থা করা যায়। এতে তাঁরা যে কাজে দক্ষ, সেই কাজটা পাবেন। তাঁদের আয় বাড়বে এবং দেশের রেমিট্যান্স অজ৴নও বাড়বে। 

কারিগরি শিক্ষায় উন্নয়ন-সহযোগী, সরকার ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় নেই। এতে অনেক ক্ষেত্রে একই কাজ বারবার করতে হয়েছে। ফলে অনেক টাকা ব্যয়ের পরেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

কামরান টি রহমান
কামরান টি রহমান

কামরান টি রহমান
আমাদের দেশের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাজের ক্ষেত্র হলো অনানুষ্ঠানিক খাত। আনুষ্ঠানিক খাতে কাজ হয় বড়জোর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

এখানে মোট কর্মশক্তির সঙ্গে প্রতিবছর ২০ লাখ কম৴ক্ষম মানুষ যোগ হচ্ছে। তাদের জন্য দেশে চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে দক্ষতার ঘাটতি এবং কম৴সংস্থানের অভাব।

শিল্পকারখানার চাহিদা ও আমাদের জনশক্তির দক্ষতার মধ্যে ঘাটতি রয়েছে। চতুর্থ শিল্প–বিপ্লবের কারণে এই দক্ষতার ঘাটতি আরও বাড়বে। 


অনেকেই বলতে পারেন, এ জন্য চাকরির বাজার বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আমাদের দেশের বেকারদের কি চতুর্থ শিল্প–বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে? বাজার যে মানের কর্মী চায়, তঁারা কি সেই মানের হবেন? আমাদের ভাবনার জায়গাটা সেখানেই।

দেশে পর্যাপ্ত কম৴সংস্থানের ব্যবস্থা নেই বলেই আমরা বাইরের দেশে কর্মী পাঠাচ্ছি। তাঁদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছেন। কিছু দক্ষতা থাকলেও তাঁদের অদক্ষ হিসেবেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিগুলো থেকে পরিদর্শক আনা যায়। তঁাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই আলোকে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সনদ প্রদান করতে হবে। এরপর দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 

বাংলাদেশের ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ দেড় হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠাচ্ছেন। ভারতে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন ৭ হাজার কোটি টাকা। শ্রীলঙ্কায় আরও বেশি। এই ব্যবধানের কারণ হচ্ছে দক্ষতার অভাব। কারিগরি শিক্ষায় ভালো শিক্ষক ও মূল্যায়নকারী দরকার। সবকিছুর মূলে প্রয়োজন শিক্ষাক্রমের পরিবত৴ন। 

শাহ মো. আবু জাফর
শাহ মো. আবু জাফর

শাহ মো. আবু জাফর
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাকে একই বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছে। এখানে মাদ্রাসার অনেক কাজ। তারা কারিগরি শিক্ষার জন্য কাজ করবে কখন?

কারিগরি শিক্ষার জন্য একটি মাত্র বোর্ড, তাও ঢাকায়। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই খারাপ। এসব প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক নেই। সরকারের পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধায়ন নেই।

কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে জেলা ও বিভাগে অফিসের অভাব রয়েছে। এই শিক্ষার জন্য সরকারের অনেক ক্ষেত্রে সুনিদি৴ষ্ট সুপারিশমালা নেই।

শিক্ষা খাতে বাজেটের অধিকাংশ টাকা শিক্ষার অন্য খাতে ব্যয় হয়। কারিগরি শিক্ষার জন্য ব্যয়ের পরিমাণ অনেক কম। দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ১৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার কথা অনেকেই বলেন। কিন্তু বাস্তবতা এমন না।

কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নেই। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা থাকেন। কিন্তু তাঁরা অধিকাংশ সময় প্রতিষ্ঠানে যান না। সাংসদদের স্কুলের পরিচালনা কমিটিতে না রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও এমন নিয়ম করা দরকার। গণতান্ত্রিক উপায়ে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে।

দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে না পারলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যথাযথ মজুরি দেবে না। এ জন্য আমাদের শ্রমিকদের আরও বেশি দক্ষ হতে হবে। 

সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বলুক, তারা যেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সরাসরি চাকরিতে নেয়। বাইরের দেশে অনেক কোম্পানি নিজেদের টাকায় শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা নিতে সাহায্য করে। আমাদের দেশের কোম্পানিকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে।

ডোর্থে বোসে
ডোর্থে বোসে

ডোর্থে বোসে
কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূণ৴ হচ্ছে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন-সহযোগীদের মধ্যে সমন্বিত কর্মসূচি। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই কর্মসূচিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া।

শ্রমবাজারের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু কীভাবে এর উন্নতি করতে হবে, তা জানি না। শ্রমবাজারের সঠিক বিশ্লেষণ দরকার।

কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়নে কার কী কাজ, সেগুলো চিহ্নিত করা দরকার। সেগুলো সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্য দরকার সবার সহযোগিতার মনোভাব। উন্নয়ন-সহযোগীরা এখানে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে সমন্বিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে আরও ভালো কিছু করা যাবে। এ জন্য দরকার বিস্তৃত পরিসরে কার্যক্রম গ্রহণ করা। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র ২ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ হয়।

বাংলাদেশের জিডিপির উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু কম৴সংস্থানের উন্নতি হচ্ছে না। এই উন্নতি অনেকটা কম৴সংস্থানবিহীন উন্নতি। প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু ঝরে পড়াদের নিয়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি নেই। 

করিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কী প্রয়োজন সেটা দেখতে হবে। সে অনুযায়ী প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দেশে থাকছেন না। তাঁরা বাইরে চলে যাচ্ছেন। আবার অদক্ষরা এখানকার শ্রমবাজারকে প্রতিনিয়ত বড় করে তুলছেন।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায় সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়নে করণীয় হিসেবে অনেক বড় তালিকা দেওয়া যাবে। কারিগরি শিক্ষার সঠিক বাস্তবায়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বেশি।

ঝিগাং লি
ঝিগাং লি

ঝিগাং লি
কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষার্থীরা যেন উদ্যোক্তা হতে পারে, সেভাবে তাদের প্রস্তুত করা।

টিভেট কর্মসূচি অনেক বেশি জটিল। এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। অনেক কিছুই বদলেছে গত কয়েক দশকে। আসছে দশকে হয়তো নতুন কোনো টিভেট দেখব আমরা। এ জন্য সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য যোগাযোগ ও শিল্পায়নের আধুনিকায়ন করতে হবে। এখানে অবিশ্বাস্য রকমের উন্নতি দরকার। কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে আথি৴ক সহায়তার জন্য এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ সহায়তা আসতে পারে। আমরা গুরুত্বপূণ৴ জায়গা খুঁজছি, যেখানে এ সহায়তা দিতে পারব।

কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কম৴সূচিতে অনেক অংশীদার আছে। তাই কাজটা আরও জটিল হয়েছে। এই কাজ আংশিক সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে করা যায়, যেখানে সব অংশীদারেরা তাদের মতের প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। সবাইকে নিয়ে কাজ না করতে পারলে এখানে সফল হওয়া যাবে না।

রিফুল জান্নাত
রিফুল জান্নাত

রিফুল জান্নাত
কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে সমন্বিত কার্যক্রমের পরিকল্পনা সহজ হবে না। এখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের সমন্বিত কর্মসূচির অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে হবে।

সরকার কারিগরি খাতে সমন্বয় কীভাবে করতে চায়? কাদের সঙ্গে রাখবে এ কর্মসূচিতে? কোন বিষয়গুলো সরকার অগ্রাধিকার দিতে চায়, তা জানাতে হবে। দাতা সংস্থাগুলো কোথায় সহযোগিতা করবে, তা বলা দরকার।

কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে কানাডা সরকার বাংলাদেশকে সহযোগতা করতে সব সময় আগ্রহী। কানাডা সরকারকে জানাতে হবে বাংলাদেশ তাদের কাছে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কোন ধরনের সহযোগিতা চায়। সপ্তম পঞ্চবাষি৴ক পরিকল্পনায় দক্ষতা উন্নয়নে যে প্রতিশ্রুতি আছে, তা অষ্টম পঞ্চবাষি৴ক পরিকল্পনায় আরও বাড়ানো দরকার।

আব্দুল কাইয়ুম

সবাই যে চাকরি করবেন, তা নয়। অনেকে উদ্যোক্তা হবেন। আত্মকর্মসংস্থানে আগ্রহী না হলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সে লক্ষে্য কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও অর্থায়নের সমন্বয় জরুরি। 

কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে খুব ভালো করবে।  আজকের আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আলোচনায় সুপারিশ

*    সরকারের একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন 

* পরবর্তী পঞ্চবাষি৴ক পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে

* চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে কারিগরি শিক্ষার কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে 

* উচ্চশিক্ষা হিসেবে কারিগরি শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন

* কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে

* শ্রমবাজারের সঠিক বিশ্লেষণ দরকার 

* কারিগরি শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে

* পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন

* কারিগরি শিক্ষার জন্য আরও বোর্ড দরকার 

* সাধারণ শিক্ষায় ঝরে পড়া শিক্ষাথী৴দের জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে

যাঁরা অংশ নিলেন 

মোআলমগীর: সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ

টুমো পোটিআইনেন: কান্ট্রি ডিরেক্টর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)

চৌধুরী মুফাদ আহমেদ: সিনিয়র এডুকেশন অ্যাডভাইজার, ইউনিসেফ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়

 এম জাকির হোসেন: সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট এক্সপাট৴, ইইউ সাপোট৴ টু হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন টু পুওর ইন আরবান বাংলাদেশ 

মোজাহাঙ্গীর আলম: পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর

ডোর্থে বোসে: অ্যাকটিং হেড অব কো–অপারেশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন

রিফুল জান্নাত: সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা

সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ: সিনিয়র ইকোনমিস্ট, এডুকেশন গ্লোবাল প্র্যাকটিস, বিশ্বব্যাংক

ঝিগাং লি: সোশ্যাল সেক্টর ইকোনমিস্ট, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক

কামরান টি রহমান: সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)

শাহ মোআবু জাফর: চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেশন কমিটি অন ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই)

মানস ভট্টাচার্য: বিশেষজ্ঞ, স্কিলস ২১ প্রকল্প, আইএলও

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো