আইএস নারী ও শিশুদের দেশে ফিরতে দেওয়া উচিত

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন আটককেন্দ্রে পশ্চিম ইউরোপের কিছু নাগরিক আইএসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বন্দী আছেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী ও শিশুসন্তানেরাও আছে। সম্প্রতি ইরাকের আদালত আইএসে জড়িত ৯ জন ফরাসি নাগরিককে হত্যা ও নির্যাতন করার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এর সুবাদে সিরিয়া ও ইরাকে আইএস সদস্য সন্দেহে আটক ইউরোপীয় নাগরিকদের পশ্চিমা দেশগুলো ফেরত নেবে কি না, সে প্রশ্নটি আবার দেখা দিয়েছে।

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো যে আগের মতোই তাঁদের নাগরিকদের ফেরত না নেওয়ার বিষয়ে অটল আছে, সে বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হচ্ছে।

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডসসহ পশ্চিমা দেশগুলো বলে আসছে, আইএসে জড়িত সন্দেহে বিদেশের মাটিতে তাঁদের যেসব নাগরিক বন্দী হয়েছেন, নিরাপত্তাঝুঁকি ও আনুষঙ্গিক কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা অথবা আইনি সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কসোভো, তুরস্ক, রাশিয়া, বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো দেখিয়ে দিয়েছে, নিজেদের নাগরিকদের দেশে ফেরানোর আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে তা করার একটা না একটা পন্থা বের করা সম্ভব।

মধ্য এশিয়ার তিন দেশ কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এ পর্যন্ত তাদের ৭৫৬ জন নাগরিককে (তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু) দেশে ফিরিয়ে এনেছে। কিরগিজস্তানও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে এসব দেশের তুলনায় বিপুল সম্পদ ও সামর্থ্য থাকার পরও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এ বিষয়ে অনীহা দেখাচ্ছে। তারা শুধু শিশুদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছুটা নিমরাজি ভাব দেখাচ্ছে। নরওয়ে এ মাসের শুরুতে উত্তর–পূর্ব সিরিয়া থেকে পাঁচজন এতিম শিশুকে ফিরিয়ে এনেছে। তবে এখনো সেখানে ৩৫ জন শিশু রয়ে গেছে। ফ্রান্স গত মার্চ পর্যন্ত উত্তর–পূর্ব সিরিয়া থেকে ১৭ জন এবং ইরাক থেকে একজন শিশুকে ফিরিয়ে এনেছে। তাদেরও বেশির ভাগের বাবা–মা মারা গেছেন। সিরিয়া সরকার বলছে, চার শর বেশি ফরাসি নাগরিক তাদের কারাগারে বন্দী আছে, যাদের অর্ধেকই শিশু এবং এই নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ফ্রান্স সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। সিরিয়া থেকে এ পর্যন্ত সুইডেন সাতজন এবং নেদারল্যান্ডস দুজন শিশুকে নিজ দেশে নিয়েছে। জার্মানি ইরাক থেকে ১০ জনের কমসংখ্যক লোককে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে।

এটি ঠিক যে আইএসের মতো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। চাইলেই তাদের নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ইরাক সরকার আইএসে জড়িত সন্দেহে আটক শত শত বিদেশির বিচার করছে। এসব লোকের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ইরাক কর্তৃপক্ষ শিশুর বিরুদ্ধে কোনো রকম অভিযোগ না এনে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়।

উত্তর–পূর্ব সিরিয়া এখন কুর্দি নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিহীন সরকারের দখলে। সেখানে অ-ইরাকি ১৩ হাজার বিদেশি তাদের হাতে বন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে দুই হাজার পুরুষ এবং ১১ হাজার নারী ও শিশু। তাদের সবাইকে কোনো রকম বিচার না করেই কুর্দিরা নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায়।

অনেক বন্দীর, বিশেষ করে শিশুদের জন্মসনদ বা তার জাতীয়তা নিশ্চিত করার মতো কোনো কাগজপত্র নেই। অনেক শিশু আছে, যাদের বাবা–মা ভিন্ন দেশের। এ অবস্থায় তারা কোন দেশের নাগরিক, তা নির্ধারণ করা নিয়েও জটিলতা রয়ে গেছে।

এসব বন্দীকে নিজ নিজ দেশে পাঠানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, যে দেশে তাদের প্রত্যর্পণ করা হবে সেখানকার জনধারণা। ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারগুলো মনে করে, তাদের যদি দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তারা বা তাদের সন্তানেরা যদি কোনো জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশবাসী সরকার পরিচালনাকারী দলের ওপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেবে।

 এ বিষয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো অনেক বেশি উদারতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা যাদের ফিরিয়ে আনছে, তাদের ওপর নিবিড় নজরদারি বজায় রাখা হচ্ছে। তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে কি না, তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়া হচ্ছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোকেও মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষের নিজ দেশে ফেরার অধিকার আছে। তাদের ফিরিয়ে আনা এবং ভিনদেশে যাদের বিচার চলছে, তারা যাতে ন্যায্য বিচার পায় তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত
রেটা টেইলর: হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিষয়ক সিনিয়র গবেষক