পরিত্যক্ত পুকুর পুনঃখনন

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পরিত্যক্ত পাঁচটি পুকুর সরকারিভাবে পুনঃখননের মাধ্যমে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলার বিষয়টি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।

সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নে ৬ দশমিক ৫ হেক্টর আয়তনের পাঁচটি পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জেলা মৎস্য দপ্তর। বছরের পর বছর ধরে পুকুরগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পুকুরগুলো পুনঃখনন করায় সহজেই পুকুরপাড়ে ও এর আশপাশে বসবাসকারী হতদরিদ্ররা মাছ চাষ করে নিজেদের জীবনমান পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন। এ থেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হবেন তিন শতাধিক সদস্য। পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে বৃদ্ধি পাবে তাঁদের সামাজিক মর্যাদা।

আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাড়াশ ছাড়াও দেশের ৫৩টি জেলার আরও ২৮টি উপজেলায় এই মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন নাগাদ এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ২৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ৬ হাজার ৩৩৭ দশমিক ৫ মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি দেশের ৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যেহেতু পরিত্যক্ত পুকুর পুনঃখনন করে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলা যাচ্ছে, তাই আমরা চাই সরকার বিষয়টিতে আরও একটু গুরুত্ব দিক। প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়ানো হোক। দেশের বহু স্থানে এ রকম বহু মজা ও পরিত্যক্ত পুকুর রয়েছে, যেগুলো পুনঃখনন করে মাছ চাষের উপযোগী করা যাবে। এতে যে শুধু দরিদ্র মানুষেরা লাভবান হবে তা নয়, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক হবে।

একসময় দেশে হাজার হাজার পুকুর ছিল। কিন্তু উন্নয়নের নামে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ভরাট করা হয়েছে পুকুর, জলাশয়সহ প্রাকৃতিক জলাভূমি। আবার প্রভাবশালীদের দখল ও দূষণে মৃত্যু ঘটেছে অনেক পুকুর ও জলাশয়ের। এমনকি সরকারি পুকুরও রেহাই পায়নি দখলবাজদের হাত থেকে। এসব অপতৎপরতার কারণে যেমন মাছের উৎপাদন কমে গেছে, তেমনি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

আমরা চাই, সরকার দেশের সব জেলা ও উপজেলায় এ ধরনের প্রকল্প আরও বেশি করে গ্রহণ করুক। দখল হয়ে যাওয়া পুকুর–জলাশয় উদ্ধার করে সেগুলো মাছ চাষের উপযোগী করা হোক। এতে যেমন দরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে, তেমনি মাছ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও মাছ রপ্তানি করতে পারছি।