দেশজুড়ে অব্যাহত ধর্ষণ ও খুন

মালা ছিঁড়ে গেলে একটির পর একটি পুঁতি যেভাবে খুলে খুলে পড়তে থাকে, অনেকটা সেই কায়দায় যেন ধর্ষণের ঘটনাগুলো একটির পর একটি ‘ঝরে ঝরে পড়ছে’। ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঘটনা হচ্ছে খুন। ধর্ষকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের শিকারকে খুন করে বাঁচার চেষ্টা করে। একটির চেয়ে অন্যটি নৃশংসতম চেহারা নিয়ে ‘আবির্ভূত’ হচ্ছে। এই ধারা ‘ফেনোমেনন’ বা প্রপঞ্চের মতো রূপ নিচ্ছে। একের পর এক সংবাদমাধ্যমে আসছে খুন ও ধর্ষণের খবর। বৃদ্ধা থেকে শিশু—কারও যেন রেহাই নেই ধর্ষকদের কবল থেকে। 

এক সপ্তাহ ধরে সংবাদপত্রে যেসব শিরোনাম ছাপা হচ্ছে এবং খুন–ধর্ষণের যেসব ঘটনা ঘটছে, তাকে একটি সমাজের বিচ্ছিন্ন অপরাধ–অপকর্ম হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ‘সিদ্ধিরগঞ্জে ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ: শিক্ষকের স্বীকারোক্তি’, ‘ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গণধোলাই’, ‘নবীনগরে শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ’, ‘ওয়ারীতে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা’, ‘পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, আরও চার জেলায় এক স্কুলছাত্রী, দুই শিশু ও বাক্‌প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার’, ‘বিয়ের জন্য ডেকে নিয়ে ধর্ষণ’—এই খবরগুলো ২ জুলাই থেকে গতকাল ৭ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ দিনে সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। শিরোনাম দেখে খবরের বিস্তারিত পড়লে শিউরে উঠতে হয়। বিশেষ করে ওয়ারীতে সাত বছরের মেয়ে সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার যে ঘটনাটি ঘটছে, তা আমাদের স্তম্ভিত করেছে। 

গত এক সপ্তাহের এসব ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যাঁদের আটক করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে শিক্ষক ও ধর্মীয় ব্যক্তিও আছেন। এটি জনমানসের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। একটি শিশু যদি স্কুল বা মাদ্রাসায় তাদের শিক্ষকের কাছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পায়, তাকে যদি শিক্ষকের কাছেই ধর্ষণ কিংবা বলাৎকারের শিকার হতে হয়, তাহলে একজন বাবা বা মায়ের কাছে এর চেয়ে ক্ষোভ ও আক্ষেপের আর কী থাকতে পারে? 

এসব রোমহর্ষক ঘটনার পর তৎপর হয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন অপরাধীদের ধরছে। শিশু সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ইতিমধ্যেই পুলিশ হারুন অর রশিদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন। অন্যান্য ঘটনায়ও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ধরা পড়ছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চরম পরিণতিও বরণ করতে হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরও একই ধরনের ঘটনা যে মাত্রায় ঘটে চলেছে, তা বিস্ময়কর। কী কারণে পরিস্থিতি এতটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে, তা নিয়ে গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। 

মানুষের মধ্যে যে পাশবিক প্রবণতা আছে, সেই প্রবণতা যেন কোন অজ্ঞাত কারণে বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সমাজের গভীর অসুখের ‘লক্ষণ’ পরিষ্কার হয়েছে। দ্রুত এর ‘চিকিৎসা’ দরকার। এ জন্য এই অজ্ঞাত কারণ বা কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে রোগের চিকিৎসা সহজ হবে। 

একই সঙ্গে আইনের কঠোর ও যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। এসব ঘটনার বিচার যাতে কোনোভাবে বিলম্বিত না হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এসব ধর্ষণ ও হত্যার বিচার করে অপরাধীর যথাযথ সাজা নিশ্চিত করতে হবে।