সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

বাংলাদেশে শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি এখন আর কোনো লুকোছাপার বিষয় নয়। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ঘাটতির খবর প্রকাশিত হলেও প্রতিকারের কোনো লক্ষণ নেই। বেসরকারি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর চাপিয়ে দিতে পারলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সেই সুযোগ নেই। কেননা, সেখানে শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের বিষয়টি তাদেরই দেখভাল করার কথা। 

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঘাটতির জন্য তারা শূন্য পদে নিয়োগ না হওয়ার দোহাই দেয়। কিন্তু কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শিক্ষক এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক বা কোনো বিষয়ে একজনও শিক্ষক না থাকা স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া কিছু নয়। স্বেচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, মাউশি সেই কাজটিই বছরের পর বছর করে যাচ্ছে। ৩ জুলাই প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও জেলা-উপজেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। এমনকি ঢাকা শহরেরও কোনো কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে শিক্ষক পদায়নে সমস্যা আছে। তাঁদের মতে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১০ হাজার ৫৬৩টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৯৯টি পদ শূন্য। বিষয় হিসেবে গণিতে ১২৭টি, ইংরেজিতে ৩২৪টি ও ভৌতবিজ্ঞানে ২৯১টি পদ শূন্য রয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রেখে কীভাবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো চলতে পারে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরাই। সরকারি বা বেসরকারি অফিসে একজনের দাপ্তরিক কাজ আরেকজন করে দিতে পারলেও বিদ্যালয়ের পাঠদান সেভাবে সম্ভব নয়। মাউশি সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হতে পারে। সেই সময় পর্যন্ত কি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ থাকবে? 

নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষক কোনো বিদ্যালয়ে তিন বছরের বেশি চাকরি করতে পারবেন না। কিন্তু ঢাকার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত চাকরি করছেন, এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজধানীর ২৪টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষক ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। ১০ বছরের বেশি সময় একই বিদ্যালয়ে থাকা শিক্ষকদের বিভাগের বাইরে বদলির সুপারিশও করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু ওই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকজনকে বদলি করলেও বাকিরা বহাল তবিয়তে আছেন। তাঁদের অনেকেই তদবির বা ‘অন্য উপায়ে’ ঘুরেফিরে সুবিধাজনক বিদ্যালয়ে পদায়ন নেন। শিক্ষা দপ্তরে মন্ত্রী পরিবর্তন হলেও কর্মসংস্কৃতির যে পরিবর্তন হয়নি, প্রথম আলোর প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। 

মাউশি থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ শূন্য পদের নিয়োগ শেষ হলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আর সমস্যা থাকবে না। বাংলা প্রবাদ আছে, ‘কবে ৯ মণ ঘি পুড়বে আর রাধা নাচবে’। এর অর্থ, ওই সময় পর্যন্ত শিক্ষক ঘাটতির সমস্যাটি মেনে নিতে হবে? শিক্ষার্থীদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত করা হবে? এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হোক। অবিলম্বে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হোক। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শিক্ষক আছেন, তাঁদের অন্যত্র পদায়ন করা হোক।