যেমন হতে হবে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীকে

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ও গণমাধ্যমজুড়ে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে দেওয়ার মতো কঠিন প্রার্থী কে হচ্ছেন কিংবা কার কাছে আছে শিরোনাম-আকর্ষণ করার মতো ধারণা?

কিন্তু ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে চিন্তা করার আরও একটি ভালো উপায় রয়েছে। যদি ডেমোক্র্যাটরা একটি উদার ত্রাণকর্তা অনুসন্ধান করেন, তবে তাঁরা একটি মৌলিক ভুল করার ঝুঁকি নেবেন। যাঁকে মনোনীত করা হবে, তিনি শুধু ট্রাম্পের মতো একজন চরম ধ্বংসকারীর বিরুদ্ধেই লড়াই করবেন না, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মধ্যপন্থী নেতাদের ক্ষমতায়নেও কাজ করবেন।

ডেমোক্র্যাটদের অবশ্যই এমন প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে, যিনি শুধু হোয়াইট হাউসকেই জয় করবেন না, তিনি প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের প্রার্থীদের নীতিগুলোও ঠিক করে দেবেন, যাতে তাঁরা শক্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেসের এ দুটি কক্ষে জয়ী হতে পারেন এবং সিনেটের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে পারেন। ডেমোক্র্যাটদের অবশ্যই এমন প্রার্থী মনোনীত করতে হবে, যিনি বেশির ভাগ রাজ্যের ভোটারদের মন সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পারবেন। 

পশ্চিম উপকূলে এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর কথা ভুলে যান: ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত যে কেউই এসব রাজ্যে পিছিয়ে যাবেন। কিন্তু অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও ওহাইওর মতো রাজ্যগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের উদ্বেগ রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ অনেক ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীর জন্য অনেকটা লিটমাস পরীক্ষার মতো। এসব বিষয় ওই সব রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে। এসব রাজ্যে জিততে হলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের এসব বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক কর বিল সংস্কারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশাল অর্থনৈতিক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর চেয়ে বেশি ঋণ বহন করতে সক্ষম। কারণ, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা মুদ্রণের অনন্য সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু ট্রাম্পের একতরফা ও স্থূল বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীরা এমনকি তার মিত্ররাও এখন বিকল্প রিজার্ভ মুদ্রা বিকাশের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রাম্প প্রশাসনের কর সংস্কার বিল পাস হয়। বিলটি পাস হওয়ার পরপরই সমালোচনা ওঠে, এর থেকে লাভবান হবেন কেবল ধনীরা। কিন্তু রিপাবলিকানদের বক্তব্য হচ্ছে, এ করনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবী ও মধ্যবিত্তদের সহায়ক হবে।

অঙ্গরাজ্যগুলোর মাঝারি নেতারা চান দেশের অর্থনীতি তথা রাজস্ব আয় স্থিতিশীল থাকুক। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের মতো স্থানীয় সরকারগুলো আর্থিক ঘাটতি পূরণের জন্য রিজার্ভ মুদ্রা মুদ্রণ করতে পারে না। এই ধরনের নেতারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বেন, যদি তাঁরা ঘাটতি বৃদ্ধি করবে এমন সব কর্মসূচিকে সমর্থন করেন, যেমন গ্রিন নিউ ডিল বা সিঙ্গেল, পেয়ার হেলথ কেয়ার প্ল্যান কিংবা সব শিক্ষার্থীর ঋণ মওকুফ করার কর্মসূচি। এটি এখনো অস্পষ্ট যে এই ধরনের কর্মসূচির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোথা থেকে অর্থের জোগান দেবে।

এসব সমস্যা সমাধানে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের সাহসী ধারণাগুলো এখন আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাছে। তাঁরা অবশ্যই এমন ধারণা দেবেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধান করতে সক্ষম হবে। তবে শুধু ধারণা দিলেই হবে না, এসব ধারণা বাস্তবায়ন করতে গেলে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, তার পরিমাপও করতে হবে এবং এ জন্য কী কী ত্যাগ করতে হবে, সে ধারণাও দিতে হবে।

গত দুই প্রজন্মে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদটি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সংবিধানের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তো সংবিধান, সততা এবং দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো অবস্থানে থাকার বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এ ছাড়া মিচ ম্যাককনেলের নেতৃত্বাধীন সিনেট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য ও স্বপ্নকে রীতিমতো প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, সংবিধান অনুযায়ী কাজ করবে এমন একটি কার্যকরী সরকার গঠনের জন্য ডেমোক্র্যাটদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভোটারদের কাছে যেতে হবে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার অর্থ হচ্ছে যে হোয়াইট হাউসে এমন একজন প্রার্থীর ফিরে আসা, যিনি ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সিনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবেন। শুধু তখনই ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা যেসব ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, সেসব মেরামত করা সম্ভব হবে।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত

আলেক্সান্ডার ফ্রিডম্যান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা


জেরি গ্রিনস্টেইন মার্কিন সিনেটের বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির সাবেক প্রধান পরামর্শক