রাতের আঁধারে নিম্নমানের সামগ্রী

সিঁধেল চোরদের নিয়ে মনোজ বসুর লেখা নিশিকুটুম্ব উপন্যাসের মূল চরিত্রের নাম সাহেব। সে ঢুকেছে চুরি করতে। লেখক বর্ণনা দিচ্ছেন, ‘ঘর অন্ধকার। যত অন্ধকার, তত এরা ভালো দেখে...সেকালে ছিল—চোর মানেই চতুর, চুরি হলো চাতুরী। চুরিবিদ্যা বড়বিদ্যা—বড় নাম এমনি হয়নি। অতিশয় কঠিন বিদ্যা।...এ হলো জাত কারিগরের কাজ।’ 

এখন সবখানে পাকাবাড়ি। সেই মাটির ঘরও নেই, সেই সিঁধকাটাও নেই। তাই বলে সিঁধেল সাহেবদের পুরো কারবারটাই শিকেয় উঠেছে—এমন নয়। এখন দিন বদলেছে, কিন্তু রাত বদলায়নি। এখনো রাতের অন্ধকারে নাগরিক নিশিকুটুম্বরা ‘জাত কারিগরের কাজ’ দেখিয়ে দেন। কুষ্টিয়া শহরের প্রধান সড়কসহ দুটি সড়কের পাশে পানিনিষ্কাশনের বড় নালা নির্মাণ এবং একই সঙ্গে সড়ক প্রশস্তসহ সংস্কারের কাজের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ‘এমনিধারা মিহি কাজ’ দেখা যাচ্ছে। সেখানে রাতের আঁধারকে কাজে লাগিয়ে নির্মাণকাজে অতি নিম্নমানের ইট-বালু-খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শহরের মজমপুর থেকে বড় বাজার পর্যন্ত এন এস রোডের প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার ও মজমপুর থেকে
রেনউইক কার্যালয় পর্যন্ত চৌধুরী কওসের উদ্দীন সড়কে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার পৌরসভার পানিনিষ্কাশনের জন্য প্রধান নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নালা নির্মাণের ফলে প্রশস্ত হওয়া সড়কের অংশ নির্মাণসহ দুটি সড়কই সংস্কার করা হচ্ছে। পাশাপাশি এন এস রোডের অন্তত চার জায়গায় সড়ক বিভাজন করা হবে। 

২০১৮ সালের প্রথম দিকে শুরু হওয়া এই কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ঠিকাদারের গাফিলতি ও ধীরগতি এর প্রধান কারণ। কিন্তু সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কথা হলো, কাজে নিম্নমানের ইট-খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেটি করা হচ্ছে রাতের আঁধারে। অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়রও স্বীকার করেছেন। তিনি রাতের বেলায় কাজ বন্ধের নির্দেশও দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে শুধু রাতের বেলায় কাজ বন্ধের নির্দেশ যথেষ্ট নয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে দেশের অন্য ‘সাহেব’রা সতর্ক হওয়ার ‘সুযোগ’ পান।

নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী দেওয়া এবং জনক্ষোভের আশঙ্কায় তার জন্য রাতের অন্ধকারকে বেছে নেওয়ার ঘটনা দেশের অন্য কোথাও হচ্ছে না বা হবে না—তা বিশ্বাস করা কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে একেবারেই অবিশ্বাস্য। এই অবিশ্বাস জনমনে এমনি এমনি তৈরি হয়নি, এর পেছনে যথেষ্টসংখ্যক ‘নিশিকুটুম্বের’ যথেষ্টসংখ্যক ‘মিহি কাজ’ ভূমিকা রেখেছে। কুষ্টিয়ার আলোচ্য ঠিকাদারসহ দেশের একই ধরনের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ সেই অবিশ্বাস দূর করায় ভূমিকা রাখতে পারে।