হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম

ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি—যথা কালিমা বা ইমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, সফর, ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা শরিফের কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা–২৫১)। 

আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান হজ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ হতে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)। এক ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে, যেভাবে লোহার ওপর থেকে মরিচা দূর করা হয়।’ (তিরমিজি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত রহমত ও বরকত। নবী করিম (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে হজ পালন করে, সে পূর্বের পাপ থেকে এরূপ নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেরূপ সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নিষ্পাপ ছিল।’ (বুখারি)। 

হজের ফরজ তিনটি—যথা (১) ইহরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, (২) ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, (৩) তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা।

হজের ওয়াজিব সাতটি—যথা (১) আরাফাত থেকে মিনাতে ফেরার পথে মুজদালিফা নামক স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা, (২) সাফা ও মারওয়া সাঈ করা বা দৌড়ানো, (৩) ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামরায় শয়তানকে পাথর মারা, (৪) তামাত্তু ও কিরান হজে পশু কোরবানি করা, (৫) মাথার চুল কামিয়ে বা কেটে ইহরাম খোলা, (৬) বিদায়ী তাওয়াফ করা, (৭) মদিনা শরিফে রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)।

হজের সুন্নত ১০টি—যথা (১) প্রথম তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)। (২) তাওয়াফের সময় রমল করা (প্রথম ৩ চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা)। (৩) খলিফা অথবা তার প্রতিনিধি তিন দিন তিন জায়গায় খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া (৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফাতে মসজিদে নামিরাতে, ১১ জিলহজ মিনাতে)। (৪) ৮ জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনাতে গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব,
এশা ও ফজর—পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা। (৫) ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া। (৬) আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে (পূর্বাহ্ণে) গোসল করা। (৭) ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে
রওনা করা। (৯) ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনাতে রাত যাপন করা। (১০) মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামক জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।

হজ সম্পাদন প্রক্রিয়া হিসেবে তিন প্রকার—যথা ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। হজ ও ওমরাহর জন্য একত্রে ইহরামের নিয়ত করে একই ইহরামে তা সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্ন করে হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ সুবিধাজনক হজ বলা হয়। কিরান ও তামাত্তু হজে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। এতে অপারগ হলে দশটি রোজা পালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্তত তিনটি রোজা হজের সময় মক্কা শরিফে রাখতে হবে। হজ সম্পাদনরত হাজিরা ৯ জিলহজ (হজের বা আরাফাতের দিন) ও ১০ জিলহজ (কোরবানির ঈদের দিন) ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে রোজা পালন করতে পারবেন। 

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক