বরিস জনসন কি ক্ষণিকের প্রধানমন্ত্রী

বরিস জনসন
বরিস জনসন

বরিস জনসনই যদি উত্তর হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্নটা কী? দলের যে ৯২ হাজার ১৫৩ জন সদস্য তাঁকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কাছে রক্ষণশীল দলের এই নতুন নেতা দুটি রোগের দাওয়াই। রোগ দুটির একটি হলো ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ মেয়াদে লেগে থাকা এবং অপরটি হলো টোরি পার্টির জনপ্রিয়তা ডুবে যাওয়া। ভোটাররা মনে করেছেন, পরিমাণমতো ‘বরিস ব্র্যান্ডের টনিক’ সঠিক মাত্রায় দিলে এখনই এই রোগ সেরে যাবে। রক্ষণশীল সদস্যদের তিন ভাগের এক ভাগ অবশ্য এই দাওয়াইয়ে কাজ হবে বলে মনে করেন না।

বরিস জনসন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই ইইউর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এ জন্য একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারলে ভালো, না হলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হবে। তবে বাস্তবতা বলছে, তিনি এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন না। ওই তারিখের মধ্যে যুক্তরাজ্য হয়তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তার দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো বাতিল করতে পারবে, কিন্তু ইইউ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না।

এর আগে টোরি পার্টির যে মন্ত্রীরা বরিস জনসনকে খুব কাছ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছেন, তাঁরা জানেন তিনি কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে কতটা গড়িমসি করেন। মূলত তাঁরাই ব্রেক্সিট ইস্যুতে জনসনের ওপর ভরসা পাচ্ছেন না। তাঁরা মনে করেন, জনসনের আমলে ডাউনিং স্ট্রিটে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে এবং জাতীয় অস্বস্তিতে পড়তে পারে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে তাঁরা এ–ও মনে করেন, বরিস জনসন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য থাকলেও সেই বিশৃঙ্খলা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হবে না। এর রেশ প্রলম্বিত হতে পারে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস প্রমাণ করেছে, অযোগ্য নেতারা তাঁদের মদদপুষ্ট ও অনুগতদের সহায়তা নিয়ে বহাল তবিয়তে টিকে থাকতে পারেন। এ কারণেই জেরেমি করবিনের মতো নেতারা এখনো বিরোধী দলে। এ কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার জয়যুক্ত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা আছে।

বরিস জনসন প্রকাশ্যেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভাষণ দেন এবং বর্ণবাদীদের যা ইচ্ছে তাই বলার লাইসেন্স দিয়েছেন। সেই ভোটাররাই জনসনের টার্গেট ভোটার যাঁরা ভোটের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বা স্বচ্ছ ভোট হলো কি হলো না তা নিয়ে মাথায় ঘামান না। এ কারণে জনসনের সরকার যে একটি মন্দ সরকার হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

এ কথা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদ ও ইউরোপের উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা যুক্তরাজ্য দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এই সংরক্ষণবাদী ভাবনা চিন্তা ব্রিটিশ নাগরিকেরাও দ্রুত লুফে নিচ্ছে। এই সুযোগটাই জনসন কাজে লাগিয়ে এত দূর এসেছেন। তাঁর একটা বিখ্যাত উক্তি হলো, ‘আমি জানি আমি টিম প্লেয়ার নই, কিন্তু আমিই একটি টিমের নেতৃত্ব দিতে পারি।’ তাঁর এই কথা কতটা সত্য তা যুক্তরাজ্যবাসীর সামনে প্রমাণ দেওয়ার সময় এসেছে।

বরিস জনসন ইতিমধ্যেই নানাভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি অভিবাসনবিরোধিতায় কট্টর অবস্থান নিয়েছেন। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই তিনি ব্রেক্সিটের পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রয়োজনে কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেনকে ইইউ জোট থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিটপন্থী শিবিরের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। তবে ব্রেক্সিট নিয়ে নিজের দল এবং গোটা দেশের রাজনীতিতে যে বিভেদ ও মতানৈক্য চলছে, তাতে এই সময়ের মধ্যে তিনি ব্রিটেনকে ইইউ থেকে বের করে আনতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এটি যদি তিনি করতে না পারেন, তাহলে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর এই মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বৈশ্বিক রাজনীতির যে ধারা বহমান রয়েছে, তা ক্রমেই রক্ষণশীলদের শক্তিশালী করছে। ভবিষ্যতে জনসন যদি ট্রাম্পের মতো সংরক্ষণবাদী চেতনাকে লাগসইভাবে উসকে দিতে পারেন, তাহলে হয়তো উদারপন্থীরা পরাজিত হবে। আর সেটি হলে যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিনের জন্য ট্রাম্পের মতোই একজন কট্টর নেতার নেতৃত্বে চলে যাবে।

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

রাফায়েল বের : গার্ডিয়ান পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক