ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গুও কি ছুটবে?

এবার ঈদের লম্বা ছুটি এমনি ৯ দিন। বুদ্ধি খাটাতে পারলে আরও বেশি। তবে ডেঙ্গু–লাঞ্ছিত এই রাজধানীর মানুষ সঙ্গে করে ডেঙ্গুও নিয়ে যাবে তাদের প্রিয় গ্রামগঞ্জে। গত বছরও এমনটি ঘটেছিল। ঈদের ছুটির পরপরই ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়া খবর আসতে থাকে ঢাকার বাইরের শহর–গঞ্জ থেকে। তবে এবার ঈদের আগেই দেশের নানা শহর থেকে ডেঙ্গু বিস্তারের খবর আসছে।

প্রথম আলোর মঙ্গলবারের সংবাদে বলা হচ্ছে, সোমবার পর্যন্ত ৫৯ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত চিকিৎসা পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৩৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ভর্তি ১ হাজার ৯৬ জন। এগুলো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। অনেকেই ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর ছবি কমবেশি একই রকম। মানুষ যত রাজধানী থেকে ঘরমুখী হচ্ছে, জেলা আর বিভাগীয় শহরগুলোতে ততই ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে। অফিস ছুটির ভিড় এড়াতে ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই, বিশেষ করে যাঁরা ভর্তি কোচিংয়ের জন্য ঢাকায় ছিলেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। প্রথম আলোর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, এ রকম ঘরে ফেরাদের অনেকেই ডেঙ্গু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় (জুলাই ২৬) সদর হাসপাতালে ১০ জন ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ নিয়ে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ মফস্বল শহরে রক্ত সংগ্রহ, রক্ত সংরক্ষণ ও রক্ত সঞ্চালনের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় এসব রোগীর সুচিকিৎসা ব্যাহত হতে পরে। তা ছাড়া ডেঙ্গু চিকিৎসার হালনাগাদ প্রোটকল সম্পর্কে সব চিকিৎসকের ধারণা না থাকায় ভুল চিকিৎসার নজির খোদ রাজধানীতেই আছে।
ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গু সংকট যেমন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার একটা আশঙ্কা তৈরি করেছে, তেমনি এ সময় ঢাকা শহরে ডেঙ্গু সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। কেয়ারটেকার বা তালাচাবির ওপর ভরসা করে রেখে যাওয়া বাসাবাড়ির টবে ভাঙাটুটা পাত্রে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার জমজমাট বসতির ব্যবস্থা করবে। বিশেষজ্ঞরা তাই ঈদের ছুটিতে বাসা–বাড়ির কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে ফুলের টবে জমে থাকা পানি নিয়মিত অপসারণের ব্যবস্থা, খোলা জায়গা বা বারান্দায় কোনো খালি পাত্র থাকলে তা উল্টে রাখা, এমনকি বাড়ির কমোডও ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের ঘাটতিজনিত আরেক সংকটের সৃষ্টি হতে পারে ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে। ডেঙ্গু রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হলে সেটার সিংহভাগ মেটাচ্ছে আত্মীয়স্বজন চেনা–পরিচিত বা বন্ধুমহল। হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর দেখভালকারী আত্মীয় জানালেন, এখন রক্ত পাওয়া যতটা সহজ, ঈদের ছুটিতে ততটা সহজ আর থাকবে না। আমরা ফেসবুকে অনুরোধ জানানোর পর দাতারা নিজেদের উদ্যোগেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রোগীর অবস্থা এখনো ভালো নয়। যদি ঈদের সময় আমাদের হাসপাতালে থাকতে হয়, তখন যদি রক্ত লাগে, বিপদ নিশ্চিত। তখন তো মানুষজন ছুটিতে চলে যাবে ঢাকার বাইরে।
থাকবে না চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তবে আশার কথা, সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি আমলে নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে কোনো সমস্যা হবে না। ছুটিতে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এবার ঈদে পূর্বের ঈদের মতো ছুটি দেওয়া হবে না। যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি, সেসব হাসপাতালে আমাদের কর্মীদের ছুটি দেওয়া হবে কম। মোট কথা, চিকিৎসায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ছুটি বাতিলের মিছিলে শরিক হয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র। তিনি জানিয়েছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা নিধন না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও মশকনিধন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আসছে ঈদুল আজহায়ও তাঁদের অফিস করতে হবে। আমরা চাই, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিব যেন তাঁদের ঈদের ছুটি বাতিল করেন।

পুনশ্চ: তিনি এখন উন্নত চিকিৎসার্থে বিদেশে অবস্থান করছেন।

গওহার নঈম ওয়ারা: লেখক ও গবেষক
[email protected]