সিলেটে ছাত্রলীগের সংঘাত

শোকের মাস আগস্টকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে মোমবাতি প্রজ্বালন করেছে। এর মাধ্যমে সংগঠনটি যেমন জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে, তেমনি অন্ধকার দূর করে সমাজে আলোর উদ্ভাসন চেয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আগস্টের শোক কিংবা নিরীহ মোমবাতির আলোর আবেদন আদৌ পৌঁছেছে বলে মনে হয় না।

সিলেটে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুজেল তালুকদার ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজন গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল বহুদিন থেকে। তাঁরা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের আখালিয়া নোয়াপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ গোলাগুলি করতে থাকে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মুনিব তাদের গোলাগুলি করতে নিষেধ করলে এক গ্রুপ চলে যায়। কিন্তু অপর গ্রুপ বাসার ভেতরে ঢুকে গুলি করলে আবদুল মুনিম ও তাঁর মেয়ে মাইশা আহত হন। গোলাগুলি চলাকালে কালীবাড়ি এলাকায় বোনের বাড়িতে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন রাকিব আহমদ নামে ছাত্রলীগের এক নেতা। মোট পাঁচজন আহত হন।

এর আগে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে মানুষ রাস্তাঘাটে হতাহত হতো। এখন বাড়ির ভেতরে ঢুকে তারা গুলি করছে। এটি কিসের আলামত? কেবল সিলেট নয়, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের মারামারিতে সাধারণ মানুষ সন্ত্রস্ত। কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিষ্টি খাওয়া নিয়ে মাওলানা ভাসানী হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ গোলাগুলির ঘটনা ঘটায়। চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে দুই গ্রুপের মারামারিতে একাধিক কর্মী নিহত হয়েছেন।

সিলেটে ছাত্রলীগের কোন্দলের খবর বেশ পুরোনো। ২০১২ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্রলীগ কর্মীরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। তিনি ছিলেন সিলেটের বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। সে সময় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শান্তির ললিত বাণী ব্যর্থ পরিহাস হয়ে আছে। আজ ঘরে থেকেও স্কুলছাত্রী ছাত্রলীগের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে ডেঙ্গু নিরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সিলেট ছাত্রলীগের কর্মীরা সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করেছেন। ছাত্রলীগের সংঘাত–সংঘর্ষের কারণে আর কত নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হবেন? আর কতজন গুলিবিদ্ধ হবেন?

ছাত্ররাজনীতির মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, তাঁদের সমস্যাগুলো মেটাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সহায়তা করে থাকেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো ছাত্র সংসদ নেই। ২৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ আছে। ডাকসু নির্বাচন হলেও নেতৃত্বের বিরোধে প্রায় নিষ্ক্রিয়। এমনকি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরোধের কারণ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ডাকসু আয়োজিত অনুষ্ঠান ভন্ডুল হয়েছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ছাত্রলীগের নাম শুনলে মানুষ এখন ভয় পায়। যখন ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সক্রিয় ছিল, তখন প্রতিদ্বন্দ্বী
ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মারামারি হতো। এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের তৎপরতা নেই। ফলে একক কর্তৃত্বের অধিকারী এই ছাত্রসংগঠনটির নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের বাইরে ও ভেতরে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আছে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগও। ছাত্ররাজনীতির নামে এই অপতৎপরতা কবে বন্ধ হবে?