ডেঙ্গু রোধে জরুরি করণীয়

>গত ২৯ জুলাই ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে এবং ল্যাবএইড গ্রুপের সহযোগিতায় ‘ডেঙ্গু রোধে জরুরি করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

যাঁরা অংশ নিলেন

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক, প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

নজরুল ইসলাম: সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. শরীফ আহমেদ: প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

এম এম আক্তারুজ্জামান: প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডেঙ্গু), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এস এম মোস্তাফিজুর রহমান: লাইন ডাইরেক্টর, জাতীয় পুষ্টিসেবা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এ বি এম আবদুল্লাহ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

এম এ খান: অধ্যাপক, হেমাটোলজি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (বিএমটি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

মো. আবদুল মান্নান: নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মনজুর চৌধুরী: কীটতত্ত্ববিদ, চেয়ারম্যান, মুভ ফাউন্ডেশন

এফ এম সিদ্দিকী: অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, মেডিসিন ও বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

নওজিয়া ইয়াসমিন: বিভাগীয় প্রধান, পাবলিক হেলথ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সংগীতা রহমান স্নিগ্ধা: ডেঙ্গু রোগে ভুক্তভোগী শিশুর মা

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ

  • জ্বর হওয়ার প্রথম দুই দিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও সম্পূর্ণ রক্ত গণনা করিয়ে ফেলা প্রয়োজন
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তদারক দল গঠন করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার
  • যাদের আগে থেকেই হৃদ্‌রোগ, যকৃৎ, কিডনি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা আছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে
  • নির্মাণাধীন ভবনে পানির ট্যাংক, ফুলের টব, ছাদ, ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে
  • জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন
  • ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত কোনো রোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে
  • স্কুলে সাপ্তাহিক পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। আশা করি আজকের আলোচনায় আমরা এই পরিস্থিতি রোধের কার্যকর উপায় সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণ করতে পারব। বর্তমানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারব।

ডেঙ্গু কেন ছড়িয়ে পড়ল, কীভাবে ছড়াল, কে দায়ী—এসব তো আলোচনায় আসবেই, তবে সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেব। তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে।

সবাই মিলে এ বিষয়ে কাজ করলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে আনতে পারব। শুরুেতই এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম
সব সময়ই আমাদের রক্তনালিতে ক্ষতি হচ্ছে। প্লাটিলেট সেই ক্ষতি পূরণ করে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

একজন সুস্থ মানুষকে এডিস মশা কামড় দিলে তার শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু ঢোকে। জীবাণু ঢুকেই তা সংখ্যাবৃদ্ধি করে। রক্তের একটা বিশেষ অংশে ডেঙ্গু জীবাণুর সংখ্যা বাড়ায়। সেটা হলো মনোসাইট।

মনোসাইটে ডেঙ্গু জীবাণু ঢুকে যখন সংখ্যা বাড়ায়, তখন সেখানে অনেকগুলো সাইটোক্লাইন্ড তৈরি হয়। এগুলোর মধ্যে দুটো হলো ভেসোঅ্যাকটিভ অ্যামাইন ও প্রোকোআগুলেন্ট। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে মনোসাইট আক্রান্ত হয়।

 ডেঙ্গু মনোসাইট এন্ডোথেলিয়াল লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তের প্লাটিলেট কমিয়ে দেয়। কোনো শিশুর মা একটা ডেঙ্গু টাইপে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলেন। তাহলে তাঁর শরীরে যে আইজিজি তৈরি হবে, তা শিশুর শরীরে চলে যাবে।

 তাই যে শিশুর বয়স এক বছরের মধ্যে, তার যদি হেটরোটাইপিক ইনফেকশন হয়, তাহলে তার সিভিআর ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই এক বছর বা তার কম বয়সের শিশুদের জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

এফ এম সিদ্দিকী
ডেঙ্গু জ্বর সাত দিনের বেশি থাকে না। এই জ্বরের তিনটি ধাপ রয়েছে। জ্বরের প্রথম দুই থেকে তিন দিন হলো প্রথম পর্যায় (ফেবরাইল ফেজ)। এর পরের অবস্থাকে বলা হয় সংকটকাল (ক্রিটিক্যাল ফেজ)। এটা সর্বোচ্চ দুই দিন থাকে।

প্রথম পর্যায় রোগীর ডায়াগনসিস ও ব্লাড কাউন্ট (রক্ত গণনা) করিয়ে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সে সময় দুটি বিষয় জানা যাবে।

জ্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে প্লাটিলেট কমে না। এ সময় শ্বেত রক্তকণিকা (ডব্লিউবিসি) কমে যায়। লোহিত রক্তকণিকা বেড়েছে কি না, তা তৃতীয় দিনে জানা যায়।

দ্রুত রোগীকে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হবে। এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন নেগেটিভ হয়েও অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু হতে পারে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর এনএস১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ হয়।

জ্বরের সাত দিন পর এনএস১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ আসার আশঙ্কা আরও কমে যায়। তৃতীয় দিন লোহিত রক্তকণিকা দেখতে হবে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটিলেট কাউন্ট করা নয়, লোহিত রক্তকণিকা দেখাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয় দিনে লোহিত রক্তকণিকা বেজলাইন যদি ৩৯ শতাংশ থাকে এবং চতুর্থ দিন সেটা ৫০ শতাংশ হয়, তবে প্লাটিলেট এক লাখের বেশি হলেও রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার দিতে হবে। সব সময় পালস ও ব্লাডপ্রেশার পর্যবেক্ষণ করে লোহিত রক্তকণিকা অনুযায়ী রোগীর ব্যবস্থাপনা করতে হবে। খুব ভালো ব্যবস্থাপনা করা গেলে রোগী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে বিপদমুক্ত হতে পারে।

আমার তিনজন রোগীর প্লাটিলেটের সংখ্যা ১০ হাজারে নেমে আসে। আমি তাঁদের পরিবারকে বোঝাই যে প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পরে তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এ থেকে বোঝা যায় যে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলেই বিপদ নির্দেশ করে না। লোহিত রক্তকণিকা, পালস ও ব্লাডপ্রেশার বিপদ নির্দেশ করে। রোগীদের বেশি পরিমাণ পানি খেতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি খাওয়া বর্জন করতে হবে।

এ বি এম আবদুল্লাহ
ডেঙ্গু বিষয়টি অনেক প্রচার হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে খুব সচেতন। অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের জন্য বলছি, এটা কোনো ভয়ংকর রোগ নয়।

অনেকে মনে করেন ডেঙ্গু মানে মৃত্যু। কিন্তু ঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে প্রায় শতভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে যায়। তাই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।

ডেঙ্গু আসলে নতুন কোনো রোগ নয়। বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে অনেকের জ্বর হয়েছিল। সে সময় এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল না। ফলে এর নাম দেওয়া হলো ঢাকা ফিভার। ২০০০ সালে অনেক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। সেটি ছিল প্রকৃত বিপদের সময়। কেননা, রোগীরা আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। চিকিৎসকদেরও তখন তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। গত ১৯ বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ অনেক সচেতন। চিকিৎসকেরাও অনেক দক্ষ। এ জন্য সবার মধ্যে ডেঙ্গুভীতি কেটে যাওয়ার কথা িছল।

এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব একটু বেশি। ফলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জায়গাসংকুলান হচ্ছে না। কিন্তু অধিকাংশ রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। বেশির ভাগ রোগীকে বাসায় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

কিছু নির্দেশক আছে, যা দেখলে ভর্তি হতে হবে। যেমন কেউ জ্বরের পাশাপাশি খেতে না পারলে ও বমি করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

সাধারণত প্লাটিলেটের সংখ্যা এক লাখের কম হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো।

যাদের আগে থেকেই হৃদ্‌রোগ, যকৃৎ সমস্যা, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা ইত্যাদি রয়েছে এদের জ্বর হলে এবং বয়স্ক ও গর্ভবতী নরীদের জ্বর হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। অনেকের ধারণা, অ্যান্টিবায়োটিক একেবারে দেওয়া যাবে না। এটা ঠিক নয়। ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত কোনো রোগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।

মো. শরীফ আহমেদ
সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু একটি আলোচিত রোগ। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগে করণীয় ঠিক করতে আমরা একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করি। তিনটি উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে এই পরিকল্পনা করা হয়।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস, এডিস মশাবাহিত রোগ। এডিস মশা তিন দিনের জমানো স্বচ্ছ পানিতে লার্ভা ছাড়ে। এই মশা মানুষের আবাসস্থলে অবস্থান করে। যেখানে এডিস মশার লার্ভার প্রজনন ঘটে, সে জায়গা আমরা সৃষ্টি হতে দেব না।

এটা করতে হলে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। এই বার্তা আমরা বিভিন্নভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আমরা একটা বৈজ্ঞানিক সেমিনার করি।

 এর পাশাপাশি নগরে মাইকিং করা হয়েছে, প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বর্ষা-পূর্ববর্তী এডিস লার্ভা–সম্পর্কিত একটি জরিপ করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী যেসব অঞ্চলে বেশি এডিস লার্ভা হওয়ার কথা, সেসব অঞ্চলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

আইসিডিডিআরবি ওষুধের একটি উপকরণ (পারমেথ্রিন) পরীক্ষা করে ওষুধকে অকার্যকর বলেছে। আইসিডিডিআরবি পুরো ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কোনো পরীক্ষা করেনি।

সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো ল্যাবরেটরি নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্ল্যান্ট প্রোটেকশন উইং ও আইইডিসিআর—এই দুটো ল্যাবরেটরিতে আমরা ওষুধ পরীক্ষার জন্য পাঠাই।

তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক সনদ পাওয়ার পর আমরা ওষুধ ব্যবহার করি। এখন পর্যন্ত উভয় সিটি করপোরেশন একই ওষুধ ব্যবহার করছে। আমরা উভয় সিটি করপোরেশন নতুন ওষুধের সন্ধানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসেছি।

আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি নতুন ওষুধ দ্রুততম সময়ে আমদানি করে ব্যবহার করার। সবার অবস্থান থেকে যা করণীয়, তা করলে আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

মনজুর চৌধুরী
এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের গতি কমিয়ে আনা। এবং শেষ পর্যন্ত এটাকে থামিয়ে দিতে হবে। পূর্ণবয়স্ক ডেঙ্গু তিন ধরনের হতে পারে।

ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত নয়, এমন এডিস মশা ডেঙ্গু রোগীকে কামড় দিলে তা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরপর ওই মশার ভেতরে এই ভাইরাস সংখ্যা বাড়ায়। আক্রান্ত এই মশাটি সংক্রমণ সক্ষম হতে কিছুদিন সময় লাগে। এটাকে এক্সটারনাল ইনকিউবিশন বলে, যা এই গরমের সময় খুব দ্রুত হচ্ছে।

যদি অলৌকিকভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত সব মশা মেরে ফেলা যেত, তবে নতুন করে আর কারও ডেঙ্গু হতো না। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়।

আমাদের প্রথমেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মশাগুলো কোথায় বেশি। হাসপাতালগুলোয় আক্রান্ত মশার সংখ্যা বেশি। একটি–দুটি ছাড়া বেশির ভাগ হাসপাতালে রোগীরা মশারি ব্যবহার করছেন না।

ফলে সেখানে থাকা এডিস মশা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তাই হাসপাতালে রোগীকে মশারির ভেতরে রাখতে হবে। হাসপাতালের আশপাশে পানি জমে থাকার যেসব সুযোগ আছে, সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

এতে রোগীর আত্মীয়, চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালে অন্যদের ঝুঁকি কমবে। সবাইকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্কুল ও স্টেশন—এসব জায়গায় অনেক মানুষ থাকে। এগুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে।

স্কুলগুলোতে সাপ্তাহিক পরিষ্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার। অনেক স্কুলে হাফপ্যান্ট পরতে হয়। হাফপ্যান্ট ও হাফশার্টের পরিবর্তে ফুলপ্যান্ট, ফুলশার্ট ও মোজা পরতে হবে।

সংগীতা রহমান স্নিগ্ধা
আমরা গত ১৩ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ল্যাবএইড হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি ছিলাম। আমার মেয়ের অনেক জ্বর ছিল। ডেঙ্গু সন্দেহে আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।

পরীক্ষা করে চিকিৎসক বললেন, ডেঙ্গু হয়েছে। বাসায় ফেরার পরও ওই আতঙ্কে আমরা ঘুমাতে পারিনি। এই আতঙ্ক এখনো রয়ে গেছে।

এটা বড় একটা মানসিক যন্ত্রণা। এ কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। সব সময় একধরনের আতঙ্কে থাকি। সারা দিন মেয়েকে মশারির ভেতর রাখি।

মেয়ের পাশাপাশি আমরাও মশারির ভেতর থাকি। কিছুক্ষণ পরপর রুমে অ্যারোসল স্প্রে করছি। সারাক্ষণ বাসায় কয়েল জ্বালিয়ে রাখছি। ফলে রাতে আমাদের বড়দেরই নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

কেবল ভুক্তভোগীরাই এ কষ্ট বুঝবে। এই সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সে জন্য আরও আগে থেকে মশা নিধনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। এখন সবার ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী।

অর্থনৈতিকভাবেও আমরা প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। খাবার খরচের চেয়ে মশার পেছনে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। এসবের জবাবদিহি কে করবে?

মো. আবদুল মান্নান
আমি রুজায়নার চিকিৎসক ছিলাম। ওর জ্বর ছিল ১০৫ ডিগ্রি। সে প্রায় ১০ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তার প্লাটিলেট ছিল ৫০ হাজারের কম। তবু তাকে কোনো রক্ত দিতে হয়নি।

কিন্তু তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়েছিল। কেননা, তার ইনফেকশন হয়েছিল। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া নিষেধ নয়। অ্যান্টিবায়োটিক দিলে ডেঙ্গুর কোনো ক্ষতি হয় না। তবে যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে দেওয়া যাবে না।
|
সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। তবে সব রোগীকেই চিকিৎসক দেখানো দরকার। কারণ, প্রথম দিনেই তার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণ বোঝা যায় না। এ রোগে সাধারণত শরীর, মাথা, হাড়ের সংযোগস্থল ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। এসব শিশুদের ক্ষেত্রে বোঝার উপায় নেই। সে জন্য প্রথম দিনেই ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা ও লোহিত রক্তকণিকা দেখা দরকার। প্লাটিলেটের সংখ্যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

যেসব শিশু খেতে পারছে না, প্রেশার কমে যাচ্ছে ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। রক্তের গ্রুপ জানা উচিত। কেননা, ১ শতাংশ হলেও রক্ত ও প্লাটিলেট প্রয়োজন হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিক শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা নিজের জীবনের জন্য যতটা না ভাবে, তার থেকে শিশুদের জন্য অনেক বেশি চিন্তা করে। রোগীকে উপযুক্ত তরল দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তরল বেশি কিংবা কম দেওয়া বিপজ্জনক। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনো কার্যকর কোনো টিকা পাওয়া যায় না।

সম্ভাব্য টিকাগুলো এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে। দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, তাঁরা যেন জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে চিকিৎসা করেন।

এস এম মোস্তাফিজুর রহমান
এখন যেকোনো জ্বর এলেই মনে হয় ডেঙ্গু হয়েছে। এবার ডেঙ্গুর ধরনটাও আলাদা। আগের মতো শরীরে ব্যথা হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে এবং ওষুধের দোকান থেকে কত মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে, তার সঠিক তথ্য থাকা জরুরি।

এনএস১, আইজিজি ও সিবিসি এ পরীক্ষাগুলো এখন সরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে নির্দিষ্ট দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। রোগীকে অতিরিক্ত পানি যেন না খাওয়ানো হয়।

একা হলে হারি, এক হলে পারি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটা গ্রাম, শহর বা সরকারের সমস্যা নয়। এটা সমগ্র বাংলাদেশের সমস্যা। অনেক জেলায় কমবেশি ডেঙ্গু আছে। সে জন্য আমাদের সেভাবে কাজ করতে হবে।

নওজিয়া ইয়াসমিন
আমরা খুব বেশি আতঙ্কিত হয়ে গেছি। এত বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখানে একজন রোগীর মা বললেন তাঁরা অনেক বেশি কয়েল ও অ্যারোসল ব্যবহার করছেন। এসবের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুসহ সবার জন্য ক্ষতিকর।

ডেঙ্গু সব মশার মাধ্যমে ছড়ায় না। এটা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে হয়। সবাই যেন নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কিছু ব্যক্তিগত ব্যবস্থা নেন। নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। কারও ওপর দোষ দিয়ে লাভ নেই। সবাই মিলেমিশে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে।

আমাদের গবেষণার অভাব রয়েছে। ২০০০ সালে যখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়, তখন আমাদের অনেক পরিচিত চিকিৎসক মারা যান। সে সময় ১১ জন চিকিৎসক মারা গিয়েছিলেন। এবারও পাঁচজন চিকিৎসক মারা গেছেন। সে জন্য চিকিৎসকদেরও সচেতন হতে হবে।

বর্ষাকালে ডেঙ্গু বেশি হচ্ছে। কিন্তু গত বছর তো এ রকম হয়নি। এবার আমরা এখান থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারব। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন অসুস্থ হলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। িকন্তু এই রোগের চিকিৎসাটা খুব কঠিন নয়।

আপনারা প্যারাসিটামল ছাড়া ব্যথানাশক কোনো ওষুধ খাবেন না। যদি অন্য রোগ থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করা খুব জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত তদারক দল গঠন করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে কি না, তা তদারক করা। জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

এম এ খান
ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে আমরা বিশেষভাবে পরিচিত হই ২০০০ সালে, যা সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছিলাম। বিশ্বে ১১০টির বেশি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। ৫০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবছর প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। একজন ভালো প্যাথলজিস্ট সিবিসি টেস্ট করলে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়।

এনএস১ পরীক্ষা জ্বরের প্রথম দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে করলে সঠিক তথ্য আসে। অন্য সময় করলে এটা নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যখন জ্বর হয়, তখন আমরা নিজের ও পরিবারের প্রতি বেশি নজর দিই।

কিন্তু জ্বর যখন থাকে না, তখনই হলো বিপদ। কেননা, তখনই অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীকে রক্ত দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। প্লাটিলেট কাদের লাগবে, চিকিৎসক সে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে বিশ্বে ঢালাওভাবে অনেক স্টাডি হয়েছে। দুটি ডেঙ্গু আক্রান্ত দল নেওয়া হয়, যাদের এক দলের রোগীদের প্লাটিলেটের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে এবং অন্য দলের রোগীদের ২০ হাজারের নিচে। দেখা গেছে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন রোগীদের প্লাটিলেট ২০ হাজারের কম হলে প্লাটিলেট দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে।

যদি কারও ডেঙ্গু হয়, শরীরে দু-একটা লাল লাল ফোঁটা পড়ে এবং প্লাটিলেট ২০ থেকে ৩০ হাজার থাকে, তাহলে তাদের প্লাটিলেট দেওয়ার দরকার
নেই। কেননা, রোগীটি তখন চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি আছে। তবে প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য লোক প্রস্তুত রাখতে হবে। কেননা, যেকোনো সময় দরকার হতে পারে।

এম এম আক্তারুজ্জামান
জলবায়ু পরিবর্তন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও আর্দ্রতার পরিবর্তনের ফলে মশার প্রজনন বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যোগাযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা একসঙ্গে জরুরিভাবে মশা নিধনের উদ্যোগ নিতে পারে।

তদারকির অংশ হিসেবে আমরা বছরে তিনবার জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেগুলো বর্ষা-পূর্ববর্তী, বর্ষাকালীন ও বর্ষা-পরবর্তী সময়ের জরিপ।

এর অংশ হিসেবে এ বছরের ৩ থেকে ১২ মার্চ আমরা বর্ষা-পূর্ববর্তী জরিপ করি। ঢাকা শহরের ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে এই জরিপ করা হয়। জরিপ করার ক্ষেত্রে ওসব স্থানে মশার লার্ভার উপস্থিতি ও পানি জমে থাকার অনেক উপকরণ দেখি।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আমরা পারমাণবিক শক্তি কমিশনের মাধ্যমে স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (মশার সংখ্যা কমানোর একটি পদ্ধতি) ব্যবহার করি। বিজি-সেন্টিনেল ট্র্যাপ (গবেষকদের প্রয়োজনে মশা ধরার একটি পেশাদার ফাঁদ) ব্যবহার করে আমরা পূর্ণবয়স্ক মশা দেখার চেষ্টা করি।

আমরা দেখতে চেয়েছিলাম এডিস পূর্ণবয়স্ক মশার ঘনত্ব কেমন। সে সময় শুষ্ক মৌসুম ছিল। আমরা ৩৪ থেকে ৩৭টা পূর্ণবয়স্ক এডিস মশা পেয়েছিলাম। বর্ষাকালীন জরিপ আমরা ২৭ জুলাই শেষ করি।

স্ত্রী এডিস মশারর সংখ্যা বেড়েছে ৭ থেকে ১০ গুণ। পুরুষ এডিস মশার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পুরুষ ও স্ত্রী এডিস মশার মিলনের ফলে এদের সংখ্যাবৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়।

পূর্ণবয়স্ক এডিস মশা সরাসরি ট্রান্সমিশনের সঙ্গে জড়িত। এই ট্রান্সমিশন চক্র ভাঙতে হলে ব্যক্তিপর্যায়ে বাড়ির ভেতর পরিষ্কার রাখতে হবে।

অব্যবহৃত টায়ারে জমা পানি এডিস মশার লার্ভার জন্য ২০ শতাংশের বেশি দায়ী। নির্মাণাধীন ভবনে পানির ট্যাংকে জমে থাকা পানিতে প্রচুর মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ধরনের একটি ট্যাংকে পাওয়া লার্ভার সংখ্যা ১০টি পাত্রে পাওয়া লার্ভার সমান।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
১৯৯৯ সালে এখানে ডেঙ্গু দেখা দেয়। সেবার ডেঙ্গু খুব জোরালো হয়নি। ২০০০ সালে সেটা জোরালো হয়। সবাই খুব বিভ্রান্ত অবস্থায় ছিল। কারণ, এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।

যেটা আছে, সেটা হলো উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা। এর কোনো ভ্যাকসিন নেই। ফলে এটা চিকিৎসকের মেধা, দক্ষতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। সে সময় চিকিৎসকেরাও কিছুটা বিমূঢ় হয়ে গেলেন।

বেশ কিছু মানুষ মারা গেছে। এর মধ্যে চিকিৎসকই ছিলেন ১১ জন। সে সময় আমি সব পত্রিকায় একটা আহ্বান দিই। ফলে আমি এক 

হাজার ছাত্র পেয়ে গেলাম। হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে আমরা দেখলাম কোন এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে।

সেসব এলাকায় আমরা যতটা সম্ভব পরিষ্কার করলাম। পরে পরপর দুই বছর আমরা পুরো শহর পরিষ্কার করি। পুরো শহরকে ৫০ ভাগে ভাগ
করে এটি করি। সিটি করপোরেশন চিরকালের মতোই নীরব।

সিটি করপোরেশনকে আগে থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। আমরা কর দিই। তাই আমরা এটা প্রত্যাশা করি। মশা মারা ছাড়া সিটি করপোরেশনের কাজ তো কিছুই নেই। কিন্তু এবারও সিটি করপোরেশন মশা নিধনে আগে থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সিটি করপোরেশন থেকে বর্ষার আগে একটা পরিষ্কার করার কার্যক্রম চালানো দরকার। আরেকটা হলো মশার লার্ভাগুলো ধ্বংস করা। ক্রমাগত রোগটি জটিল হচ্ছে।

ডেঙ্গু বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব দেশ ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের চেয়ে অনেক যোগ্য। তারাও কিছুটা বিপদে আছে। সব ময়লা সিটি করপোরেশনের পক্ষে হয়তো সরানো সম্ভব হবে না।

কিন্তু যেসব ময়লা এডিস মশা ধারণ করে, সেগুলো সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। বর্ষার মাঝখানে আরেকবার এক মাস পরিষ্কার কার্যক্রম নিতে হবে। সবাই মিলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ না করলে ঢাকা ডেঙ্গুর রাজ্যে পরিণত হয়ে যেতে পারে।

আব্দুল কাইয়ুম

আলোচনায় সব দিক এসেছে। আমাদের সবারই সচেতন হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে।

সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি কেন্দ্র করা যেতে পারে। এখানে সব সময় চিকিৎসক থাকবেন। কোনো এলাকার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হলে তারা যেন জানতে পারে যে তার হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে কি না।

 ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে কি না।

সব সময় এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। কেননা, ডেঙ্গু রোগের পরিবর্তন হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ও মাঝামাঝি এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধে কর্মসূচি নিতে হবে। তাহলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব।

অালোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনাদের সাবইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।