হালদাদূষণ

দেশের একমাত্র মিঠাপানির মাছের প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। নানা কারণে এই নদী অনন্য। দখলের পাশাপাশি দূষণের মুখে হালদা তার বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। যখন প্রাকৃতিক উৎসের মাছ কমে যাচ্ছে, হালদা নদীকে দেশীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, ঠিক তখনই দূষণের বিষে ভারাক্রান্ত হচ্ছে নদীটি। অজস্র শিল্পকারখানার বর্জ্যই নদীটির জন্য বড় হুমকি। 

হালদার তীরবর্তী কারখানাগুলোর বেশির ভাগেরই ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) নেই। যেসব কারখানায় ইটিপি আছে, সেসব কারখানার কর্তৃপক্ষ শোধনের খরচ বাঁচাতে সুযোগ পেলেই বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ঢেলে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অনেক কারখানাকে জরিমানা করা হয়েছে। কিছু কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত মাসে বর্জ্য নিঃসরণ করে হালদাদূষণের অভিযোগে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। একই অভিযোগে গত রোববার হালদা নদীসংলগ্ন এশিয়ান পেপার মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সরকারি-বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান হালদা ও কর্ণফুলী নদী দূষণ করেই যাচ্ছে। কার্যক্রম পরিচালনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা তারা মানতে চাইছে না। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানগুলো ইটিপি বাস্তবায়ন করছে না। 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সার্বক্ষণিক চালু না রেখে তরল বর্জ্যে হালদাদূষণের কারণে ১০ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল এশিয়ান পেপার মিলকে। তারপরও শোধরায়নি প্রতিষ্ঠানটি। ঈদের ছুটির সময় কারখানার বর্জ্য পাশের খালে ফেলে দেয় তারা। এরপরই কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর। এ রকম আরও বহু প্রতিষ্ঠান আছে বলে সরকারি কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন। কর্মকর্তাদের কথা থেকে জানা যাচ্ছে, বৃহৎ শিল্পকারখানার বেশির ভাগই সরকারি মালিকানার। আইনি জটিলতার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর সেসব কারখানার উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিতে পারছে না। ‘মাছের ব্যাংক’খ্যাত হালদা দেশের জনগণের আমিষের সবচেয়ে বড় জোগানদার। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি সেই ‘মাছের ব্যাংক’-এর মরণদশার কারণ হয়ে ওঠে, তাহলে তা মেনে নেওয়া যায় না। 

শিল্পকারখানা দরকার। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, বিশেষ করে হালদার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ নদীকে দূষিত করে শিল্পকারখানার কার্যক্রম চালানো সমর্থনযোগ্য নয়। হালদা রক্ষায় আসলে নতুন করে বলার তেমন কিছুই নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন-সমিতি, বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদীরা সভা-সেমিনার, কর্মশালা, মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানা প্রচারণায় শিল্পবর্জ্য নিঃসরণ বন্ধে বহু কিছু বলেছেন। এখন কাজটাই শুধু বাকি।