রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

একদিকে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর রোহিঙ্গা নীতিতে মৌলিক মানবিক পরিবর্তনের কোনো বিশ্বাসযোগ্য ইঙ্গিত এখনো আমরা পাইনি। অন্যদিকে দেশটির জনগণকে বিপদে না ফেলে দেশটির শাসকগোষ্ঠীর বিবেকহীন অপরাধী অংশের ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপ বা চাপ সৃষ্টি করার কোনো লক্ষণও নেই। বরং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্রোত এখনো চলমান রয়েছে। এ কারণে এই প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক যে বাংলাদেশের সঙ্গে শরণার্থী প্রত্যাবাসন চুক্তি কি তাদের কৌশলগত উদ্যোগ? অথবা আদৌ কি তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক?

তবে এই প্রশ্নের উত্তর সমস্যা জর্জরিত স্বাগতিক বাংলাদেশের পক্ষে একাই অনুসন্ধান করা এবং সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া কার্যত অসম্ভব। উভয়সংকটে পড়া বাংলাদেশের পাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় এখনো ঢের অপ্রতুল। জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এটা বরদাশত করা উচিত নয় যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে প্রত্যাবাসন–প্রক্রিয়ায় শরিক হয়ে বাংলাদেশ শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে মরিয়া চেষ্টা করে যাবে, আর অন্যদিকে নিয়মিত বিরতিতে অগুনতি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য হবে।

জাতি নিধনযজ্ঞ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসা বর্মি সংখ্যালঘুরা কোনো সাধারণ উদ্বাস্তু নয়। তারা যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটা পদ্ধতিগত জেনোসাইডাল প্রক্রিয়ার চরমতম শেষ ধাপে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা ‘রিফিউজির’ সংজ্ঞায় পড়ে না, তারা ‘জেনোসাইড সারভাইভরস’। অথচ জাতিসংঘ, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রগুলো এখনো পর্যন্ত এই সত্যের ওপর আলো ফেলা থেকে রহস্যজনকভাবে বিরত থাকছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দুনিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেসব ‘কঠোর’ পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা তাদের কোনো ধারাবাহিক তদারকি দেখি না।

অবিলম্বে প্রত্যাবাসন শুরু করতে আমরা ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিবদের আজকের বৈঠকের অবশ্যই অর্থবহ সাফল্য কামনা করি। তবে রোহিঙ্গা আগমন বন্ধের দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকরভাবে নিতে হবে। এটা ছাড়া প্রত্যাবাসন শুরু সংক্রান্ত ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক কল্পনা করা কঠিন। এই দিকগুলোতে আমরা সরকার ও নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।