কলাপাড়ায় নদীর তীর ভরাট

যে দেশে ‘সামান্য’ দুই বিঘা জমি অধিকারে আনতে মন্ত্রী–আমলা ধরতে হয়, পাইক-বরকন্দাজের প্রয়োজন পড়ে, সেই দেশে সরকারি ২৫ একর জমি কেউ দখল করার পর তিনি আবার তা স্বেচ্ছায় সরকারের ‘ঘরে’ ফিরিয়ে দেবেন, এমন কথা বিশ্বাস করা দুরূহ। কথাটি সর্বৈব বিশ্বাস-অযোগ্য জেনেও তা এক্স ইনডেক্স ইকোনমিক জোন লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের আন্ধারমানিক নদের তীরের প্রায় ১০০ একর ভূমি ভরাট করছে। প্রতিষ্ঠানটির নিজেদের ভাষ্য অনুযায়ীই, এই ১০০ একরের মধ্যে ৬৪ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন। ৬৪ একরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কিছু জমির দাম পরিশোধ করেছে আর কিছু জমি কেনার জন্য বায়নার টাকা দিয়েছে। বাকি ২৫ একর নদীর পাড়ের সরকারি জমি। সে জমি তারা বরাদ্দও পায়নি। বরাদ্দ না পেয়েও তার দখলে গিয়ে ভরাট করার কাজ শেষ করে ফেলছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাসুদুর রহমানের ভাষ্য থেকেই এ তথ্য জানা যাচ্ছে।

নদীর পাড়ে মাটি ভরাট করার বিষয়টি পরিবেশ আইনবিদ, নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তারা অবৈধ সাব্যস্ত করলেও মহাব্যবস্থাপক মহোদয় আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলেছেন, তার সঙ্গে মাতুলালয়ের আবদারের বিশেষ সাযুজ্য স্পষ্ট।

মহাব্যবস্থাপক মহোদয় শিশুর সারল্যে বলেছেন, পদ্মা সেতু হয়ে গেলে কলাপাড়াসহ আশপাশের অঞ্চলে ব্যবসার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই এ এলাকায় তাঁরা একটি বড় প্রকল্প করতে চান। আন্ধারমানিক নদের তীরের কিছু জমি তাঁরা কিনেছেন এবং কিছু জমি কেনার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের বায়নার টাকা দিয়েছেন। এতে ৬৪ একরের মতো জমি পাওয়া যাবে। বাকি ২৫ একর বেশি জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে তাঁরা আবেদন করেছেন। বন্দোবস্ত ছাড়াই নদের তীর ভরাট প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বন্দোবস্ত না পাওয়া গেলে সরকারের জমি ওইভাবেই থেকে যাবে। অর্থাৎ সরকারের জমি তাঁরা সরকারকে ফিরিয়ে দেবেন।

নদের পাড় দখল করা আইনগত ও নৈতিক—উভয় দিক থেকেই অবৈধ। এই বিষয়টি কারও না জানার কথা নয়। তারপরও কোন বিবেচনায় তাঁরা তা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন এবং কোনো রকম প্রশাসনিক বাধা ছাড়াই সেখানে ভরাটকাজ কী করে চালাচ্ছেন, তা এক বিস্ময়। এটি সরাসরি ভূমিদস্যুতা ছাড়া আর কিছু নয়।

বাংলাদেশ পানি আইন অনুযায়ী জলাধারের তীরবর্তী কোনো ভূমি মালিকদের জলাধারের তলদেশ এবং তীরভূমির ওপর কোনো প্রকার অধিকার থাকবে না। কাজেই আইন অমান্য করে কেউ এভাবে নদের তীর ভরাট করতে পারে না। আন্ধারমানিক নদের তীর ভরাট রোধ করতে এই আইন বাস্তবায়ন করতেই হবে।