বরগুনায় গৃহনির্মাণ প্রকল্প

‘পিলো পাসিং’ খুবই মজার খেলা। পরিবার–পরিজন নিয়ে বনভোজন করতে যাওয়া দলের নারী সদস্যদের সাধারণত এই খেলায় অংশ নিতে দেখা
যায়। এই খেলায় বৃত্তাকারে পাতানো চেয়ারে খেলোয়াড়েরা বসেন। মিউজিক ছাড়া হয়। এরপর একজনের হাতে একটি বালিশ দেওয়া হয়। তিনি পাশের জনের হাতে তা দ্রুত তুলে দেন। যার হাতে তুলে দেওয়া হলো তিনিও দ্রুত তাঁর পাশের জনের হাতে তা ‘পাস’ করে দেন। এভাবে এ ওর হাতে বালিশ ছুড়ে দিতে থাকেন। 

সরকারি কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর ফাঁস হওয়ার পর অবধারিতভাবে যে ছবিটি হাজির হয়, তার সঙ্গে এই ‘পিলো পাসিং’ খেলার মিল আছে। দুর্নীতি-অনিয়ম ফাঁস হলেই তার দায়কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘পিলো’ বানিয়ে এ ওর দিকে ‘পাস’ করতে থাকেন। ‘ইনি’ বলেন, ‘এটা তো উনি জানেন’, ‘উনি’ বলেন, ‘এর সঙ্গে তো আমার সম্পর্কই নেই, এটা তিনি জানেন’। পুরো বিষয়টি তখন ‘উনি-তিনি’তে ঘুরপাক খেতে থাকে। 

বরগুনায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় গৃহনির্মাণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর এই চিরায়ত দৃশ্য আবার দেখা গেল। সেখানে অসচ্ছল ব্যক্তিদের ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা। কিন্তু ইউপি সদস্য, সচ্ছল ব্যক্তি এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের স্বজনদের এই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অসচ্ছল যেসব ব্যক্তি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রকল্প কমিটি ঘুষ নিয়েছে বলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

নিয়মবহির্ভূতভাবে যাঁরা বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ লোকই বলছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা তাঁদের এই বরাদ্দ দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা বলছেন, তাঁরা বরাদ্দ দেওয়ার কেউ না, ট্যাগ অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা (পিআইও) এসব বরাদ্দ দিয়েছেন। পিআইও এবং ট্যাগ অফিসাররা বলছেন, তাঁদের কোনো দায় নেই, চেয়ারম্যানদের সুপারিশক্রমেই তাঁরা বরাদ্দ দিয়েছেন। 

কেউ দায় নিতে চান বা না চান, অনিয়ম হয়েছে, এটি একরকম প্রমাণিত সত্য। এই সত্যের দায় কার, তা বের করতে হলে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সেই তদন্ত করতে আবার বাড়তি খরচ হবে। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, জেলার ছয় উপজেলায় ১৬৮ জন অসচ্ছল ব্যক্তিকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। দুই শতক জমি আছে কিন্তু ঘর নির্মাণ করতে পারছেন না—এমন হতদরিদ্র ব্যক্তি এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের এই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। একেকটি ঘরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট হবে। 

গরিবের এই ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ হকের ওপর প্রভাবশালীর থাবা রুখতে যা করণীয়, প্রশাসনকেই তা করতে হবে। তারাও দায় এড়ানো ‘পিলো পাসিং’ খেলায় যোগ দিলে সাধারণ মানুষের সামনে হতাশা ছাড়া আর কিছু থাকবে না।