অভিশংসন থেকে কি বাঁচতে পারবেন ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গদি এখন সংকটের মুখে। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ তাঁকে অভিশংসন (অভিযুক্তের সমতুল্য) করতে পারে, সিনেট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পক্ষে ভোট দেবে না এবং তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেবে না—এমন কথা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে অভিশংসনের জোর দাবি উঠছে। বিশেষ করে, তাঁর নিজের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য বিদেশি সরকারের ওপর চাপ দেওয়া (যা কিনা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে)।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর একজন সদস্যের ফাঁস করা এক নথি অনুযায়ী, গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ সময় ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ দেন। জেলেনস্কি ইউক্রেনের সামরিক চাহিদার কথা উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে জানান, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল কিনতে আগ্রহী। সে কথার জবাবে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলার বদলে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাকে আমাদের জন্য একটা উপকার করতে বলব। আর সেটা হচ্ছে জো বাইডেনের দুর্নীতির বিষয়টি আপনারা তদন্ত করুন। ট্রাম্প জো বাইডেনের দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য জেলেনস্কিকে তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডলফ গিলিয়ানি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।

ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, জো বাইডেন একজন ইউক্রেনীয় আইনজীবীকে বরখাস্ত করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন নিজের ছেলে হান্টার বাইডেনকে বাঁচানোর জন্য, যিনি কিনা ইউক্রেনের একটি বড় গ্যাস কোম্পানির বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে এই অভিযোগ জো বাইডেনের সমর্থকদের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে খারিজ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প ২০১৬ সালের মতো নির্বাচনে জিততে প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করতে বিদেশি রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্টটি ক্যাপিটল হিলের উভয় দলের পাঠকদের হতবাক করেছিল। ট্রাম্প তাঁর সহায়তাকারীদের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে ট্রান্সক্রিপ্টটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন, এটা তাঁকে অভিযোগ থেকে রেহাই দেবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, উল্টো এই ট্রান্সক্রিপ্ট তাঁকে অভিশংসনের মুখে ফেলছে।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন কার্যক্রম শুরু করার জন্য ডেমোক্র্যাটদের আহ্বানকে প্রতিহত করে আসছিলেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, এই অভিশংসন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পাওয়া ৪১টি আসনকে হুমকির মুখে ফেলবে। এ ছাড়া তিনি মনে করতেন, এমন প্রচেষ্টায় উল্টো ফল হতে পারে। তাতে বেড়ে যেতে পারে ট্রাম্পের সমর্থন। তবে পেলোসি এখন মত বদলেছেন বলেই মনে হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, তিনি আইন লঙ্ঘন করেছেন। তিনি সাংবিধানিক যে দায়িত্বের মধ্যে রয়েছেন, তা লঙ্ঘন করেছেন।

যদিও ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘অত্যন্ত স্থিতিশীল প্রতিভা’ বলে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সত্যি হচ্ছে তাঁকে এখন আগের চেয়ে ভারসাম্যহীন বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্প এখন জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের তথ্য ফাঁসকারী সেই সিআইএ সদস্যের পরিচয় জানতে চাইছেন, যা কিনা সেই সদস্যের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তিনি এই তথ্য ফাঁস হওয়ার জন্য প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটির চেয়ারপারসন অ্যাডাম স্কিফকে দায়ী করছেন। তিনি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করা হবে, নয়তো ফাঁসি দেওয়া হবে। আমার মনে হয় না ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি–ধমকি তাঁকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এই তদন্তে যাচাই করে দেখা হবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে ট্রাম্প কী বলেছিলেন এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তিনি অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না। যদি অভিশংসনযোগ্য অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তা প্রতিনিধি পরিষদে ভোটে দেওয়া হবে। এই পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটরা। ফলে সেখানে অবলীলায় তা পাস হতে পারে। এরপর তা পাঠানো হবে সিনেটে। এখানে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। কিন্তু সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিপাবলিকানদের হাতে। যদিও এ ব্যাপারে অনেক মতামত রয়েছে, কিন্তু কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন—আমি কখনোই এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে চাই না। কারণ, তাঁরাও ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্পের এসব কর্মকাণ্ড দলের ক্ষতি করছে এবং এ জন্য ট্রাম্পকে ত্যাগ করাই শ্রেয়। অল্পসংখ্যক রিপাবলিকান তাঁকে সমর্থন করতে পারেন। এখন দেখা যাক, ট্রাম্পের ভাগ্যে কী ঘটে।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত
এলিজাবেথ ড্রু: ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক