ঘর পাচ্ছে হিজড়া ও বেদেরা

যে মানুষ প্রতিবন্ধী, তাকে কেউ না কেউ আশ্রয় দেয়, তার দেখাশোনা করে। তারও একধরনের সামাজিক অবলম্বন থাকে। কিন্তু এ দেশে যারা হিজড়া হয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের সে অবলম্বনও থাকে না। সমাজের কেউ তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেশে না, স্কুল-কলেজে তারা পড়াশোনার সুযোগ পায় না, কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরি–বাকরি দেয় না। ফলে ভিক্ষা, গণিকাবৃত্তি আর চাঁদাবাজির মতো অবমাননাকর জীবন বেছে নিতে হয় তাদের।

অন্যদিকে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষকেও ভয়ানক এক ‘অভিশপ্ত’ জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাবিজ-কবচের মতো বুজরুকি সম্বল করে ভাসমান জীবন কাটাতে হয় তাঁদের। তাঁদের সন্তানেরা স্কুল–কলেজে পড়ার সুযোগ পায় না।

এ দুই সম্প্রদায়কে বিভিন্ন কর্মসংস্থানে যুক্ত করে সমাজের মূলধারায় আনার জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন। হিজড়াদের জন্য ইতিমধ্যে তারা বিশদ আকারে বিউটি পারলার করে দিয়েছে। হিজড়ারা যাতে সামাজিক মর্যাদা পায়, সে বিষয়ে তারা ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া বেদে সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় যুক্ত করা এবং তাঁদের সন্তানদের স্কুল–কলেজে ভর্তি করার মতো মহান কাজও করছে সংগঠনটি। এবার এ হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থাও করছে তারা। ঢাকার সাভারে বংশী নদীর তীরে উত্তরণপল্লীতে তাদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে অর্ধশত আধা পাকা ঘর।

প্রথম আলোর সংবাদ অনুযায়ী, গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উত্তরণপল্লীর ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। টিআর প্রকল্প থেকে প্রতিটি ঘরের জন্য ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহনির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায় চার একর খাসজমিতে গড়ে ওঠা উত্তরণপল্লী নামের এই কমপ্লেক্স বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রথম দফায় ওই পল্লিতে ৫০টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য ৪০টি আর হিজড়াদের জন্য ১০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেছেন, এখানে শুধু বাসস্থানই নয়, পোশাক কারখানা, খেলার মাঠ ও স্কুলের ব্যবস্থাও করা হবে। এ উদ্যোগ সমাজের অন্য সংগঠনগুলোর জন্য অনুসরণীয়।

সরকারসহ সব পক্ষকে বুঝতে হবে, হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের মৌলিক মানবাধিকার রয়েছে। সুদীর্ঘ দিন ধরে সমাজ তাদের কোণঠাসা করে রেখেছে, যে কারণে তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং অনিবার্যভাবে চরম অবহেলা ও দারিদ্র্যের শিকার হয়ে আসছে। তাদের সেখান থেকে বের করে আনতেই হবে।