ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্প

বহুপ্রতীক্ষিত ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্ন আছে। বুধবার পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলন নামের একটি সংগঠন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে কিছু দাবির কথা জানিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রহ্মপুত্র খননের বিস্তারিত পরিকল্পনা জনসমক্ষে প্রকাশ করা, খননকাজের ফলে উত্তোলিত বালু নদের দুই পাশে রেখে রাস্তা তৈরি করা, খননের এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে যুক্ত শাখানদী ও খালগুলোকে মূল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা। এ ছাড়া খননের ফলে নদ থেকে উত্তোলিত বালু বর্ষা ও বন্যায় যেন আবারও নদে না যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে তারা।

তাদের এসব দাবি ও উদ্বেগ যৌক্তিক। একসময় পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষ জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের অযত্ন-অবহেলায় সেটি এখন প্রায় মরা নদে রূপ নিয়েছে। এটি শুধু পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর নয়, স্থানীয় জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সেদিক থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পুনঃখনন অত্যন্ত জরুরি ছিল। কিন্তু প্রথমেই যে প্রশ্ন তুলতে হয় তা হলো বাংলাদেশ নদ-নদী খননের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। প্রতিবছর শত শত কিলোমিটার নদী খনন করা হলেও আবার ভরাট হয়ে যায়। নদী খননের কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডব্লিউটিএ। এই প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদারেরা নদী খননের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাট করেছেন, এ রকম অনেক নজির আছে। নিরীক্ষায় দুর্নীতির বিষয়টি ধরা পড়লেও জোয়ারের বালুতে নদী ভরাট হয়ে গেছে বলে অসার যুক্তি দেখানো হয়।

ব্রহ্মপুত্র নদ খননকাজে সে ধরনের কিছু দেখানো হবে না—সেই নিশ্চয়তাই চেয়েছে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলন। এই দাবি শুধু পরিবেশ রক্ষা কমিটির নয়, স্থানীয় সব মানুষেরই। আমরাও মনে করি, খননকাজের বিস্তারিত পরিকল্পনা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। যেকোনো সরকারি কাজের অগ্রগতি জানার অধিকার জনগণের আছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তোলিত বালু ঈশ্বরদিয়া এলাকায় নদের চরে স্তূপ করা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে স্তূপ করা এই বালু নদে মিশে যেতে পারে। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেছেন, বালু নদে মিশে যাওয়ার আগেই তা বিক্রি করা হবে। কিন্তু বালু প্রকল্পের অধীনে বিক্রি করা হবে, নাকি জেলা প্রশাসনের অধীনে বিক্রি করা হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে ঠেলাঠেলি কাম্য নয়।

এটি কোনো ছোটখাটো প্রকল্প নয়। জামালপুর জেলায় ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখ থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার টোক পর্যন্ত এই ২২৭ কিলোমিটার নদ; ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। মোট ২৫টি খননযন্ত্রের মধ্যে বর্তমানে ২১টি খননযন্ত্র কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে।